বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ১৪টি আসনে নির্বাচন জমে উঠলেও হামলা এবং অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে দুশচিন্তায় পড়েছে সাধারণ ভোটাররা। প্রশাসনের ভ‚মিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারপরেও বিরোধী শিবিরের প্রার্থীরা ভোটের মাঠ দখলের প্রানন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামীণ জনপদের প্রার্থীদের সবচেয়ে বেশী হচ্ছে কষ্ট ও পরিশ্রম। হেমন্তের এ শীতকে উপেক্ষা করে কাক ডাকা ভোর থেকে আঁকা বাঁকা মেঠোপথ দিয়ে দিনরাত ছুটছেন প্রার্থীরা। শহরের তুলনায় গ্রামে গণসংযোগ করা দুরহ। অনেক পথ হেটে ভোটারদের কাছে ছুটছেন প্রার্থীরা। ভোটাররা প্রার্থীদের কাছে পেয়ে অনেকে উৎফুল্ল। আবার অনেকে মনে মনে অখুশি। কারণ হিসেবে জানা যায় এলাকায় অনেকে বর্গী। সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের চেনেন না। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে ধানকাটা মৌসুমে কিষান কিষানীদের কাছে বইছে নির্বাচনী ঝড়।
নির্বাচনের দিন যতই কাছে এগিয়ে আসছে ততই দ্ব›দ্ব-সংঘাত বেড়েই চলছে। প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছে। এর মধ্যে বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা বেশী নিগৃহিত হচ্ছেন। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারে সে জন্য প্রশাসনের ভূমিকা থাকতে হবে এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সাধারণ ভোটাররা।
বটিয়াঘাটা লাকী বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, যদি সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করে তা হলে ভোট দিতে যাবেন। ভোট কেন্দ্রে যদি মারামারি হয় তা হলে ভোট দিতে যাবেন না। বাস্তহারা এলাকার মালেকা বেগম বলেন, আমরা চাই নির্বাচন ভালো হোক। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ তৈরী করতে হবে।
এদিকে খুলনা-৪ আসনে ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরা হামলা, নির্যাতন ও মামলার শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর ৯ তারিখ সন্ধ্যায় রূপসার আনন্দনগর গ্রামে ছাত্রদলের কর্মী সমাবেশে যোগ দেয়ার সময় সন্ত্রাসী হামলায় আমিনুল ইসলাম, নুর ইসলাম, মাসুদ ও শফিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। আহত আরো ৭/৮ জনকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
গত ১১ ডিসেম্বর রাতে দিঘলিয়ার সেনহাটি ইউনিয়ন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে তেরখাদার মধুপুর ইউনিয়নের মোকমপুর বাজারে আসলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা মহসিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন আওয়ামী লীগ দলীয় সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, যুবদল নেতা আজিজুল ইসলামসহ ৫/৭ জন গুরুতর আহত হয়।
এছাড়া নাসিরপুর গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার মো. নাসিরকে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। স্বেচ্ছাসেবক দলের আইচগাতি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ নির্বাচনী প্রচার মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় মিন্টু মেম্বারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাকে গুপ্তি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পাওয়ার হাউজ মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক এর নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন সময়ে খালিশপুর প্লাটিনাম কলোনীতে স্থানীয় ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত নগ্ন হামলার করে তার প্রতিবাদে দলটি সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ন্যক্কার জনক ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানিয়ে খুলনা রিটার্নিং অফিসার ও প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন ফলাফল আমরা দেখতে পাইনি।
এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা সারাদেশে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হামলার শিকার হচ্ছে। প্রশাসন ও ইসিকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হলেও তারা কোন ধরনের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে প্রশাসন ও ইসি অসহায় নিরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করছে।
অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ ও ২০ দলীয় ঐক্যজোট একে অপরের বিরুদ্ধে সহকারি রিটার্নিং অফিসার বরাবর পাল্টা-পাল্টি আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ এনেছেন। এ ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি)’কে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০ দলীয় জোট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ জেলা হাজতে থাকায় তার পক্ষে নির্বাচনী কার্মক্রম পরিচালনা করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি কর্মী সমাবেশের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু করে। ২০ দলীয় জোটের অভিযোগ, উপজেলার হরিঢালী, সোলাদানা ও চাঁদখালী ইউনিয়ন, পাইকগাছা কোর্টের সামনের রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি দলের লোকজনদের পুলিশের মামলাসহ বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে।
অপর দিকে নৌকার প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান বাবু’র পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ২০ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে। উপজেলার মালথ গ্রামের আ.লীগ নেতা ইসহাক আলী গাজী সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত মঙ্গলবার রাতে জামায়াত নেতা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা কামাল হোসেনের নেতৃত্বে হাবিবনগর মাদ্রাসা মোড় এলাকায় নৌকা প্রতীকের সমস্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক গাজী মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা তাদেরকে নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে এবং নির্বাচনী কাজে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন