আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীরা জোরেশোরে প্রচারণায় নামলেও তেমনভাবে দেখা মিলছে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের। হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে রয়েছেন তারা। এমনকি অন্যদলের প্রার্থীরাও নানান সঙ্কটে পড়েছেন বলে তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে প্রচারের গাড়ি। ছিনতাই হচ্ছে মাইক।
জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন ঘেষা জেলা সাতক্ষীরা। এ জেলায় রয়েছে সাতটি উপজেলা। রয়েছে আটটি থানা। ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ, ৬০ হাজার, ৪২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৭ লাখ ৮১ হাজার ৫৯৭ জন। মহিলা ভোটার ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৬ জন। ২০০১ সাল পর্যন্ত জেলায় পাঁচটি সংসদীয় আসন থাকলেও ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে জেলাকে চারটি সংসদীয় আসনে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে সাতক্ষীরা ১ (তালা-কলারোয়া), সাতক্ষীরা ২ (সদর), সাতক্ষীরা ৩ (আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের একাংশ) এবং সাতক্ষীরা ৪ (কালিগঞ্জের একাংশ ও শ্যামনগর)।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি আসনে ২২ জন প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে লড়াইয়ে নেমেছেন। তবে নির্বাচনী লড়াইটা হবে মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীদের মধ্যে। যদিও সাতক্ষীরা ১ আসনে লড়াইটা হতে পারে জাতীয় পার্টির সাথে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর।
নির্বাচন যতোই এগিয়ে আসছে ততোই যেনো ভোটারদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। একটি অজানা আতঙ্ক তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোটার। এমনকি বিরোধী পক্ষের একাধিক প্রার্থীর চোখে মুখেও রয়েছে এই আতঙ্কের ছাপ। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা ৪ আসনের বিকল্পধারার প্রার্থী এইচ, এম গোলাম রেজা, ৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শহিদুল আলম সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের ওপর হামলা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হুমকি দেওয়া, প্রচার কাজে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।
সাতক্ষীরা ১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, প্রচার কাজে বাধা দেওয়া এবং উল্টো তাদের নামে মামলা দেওয়া, জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখতের প্রচার মাইক ছিনতাই ও গাড়ি ভাঙচুর, প্রচার কাজে বাধা দেওয়া, বাম গণতান্ত্রিক জোটের মনোনীত প্রার্থী কাস্তে প্রতীকের মো. আজিজুর রহমানের পথসভায় ওয়াকার্স পার্টির নেতা-কর্মীদের হামলা ও বাধা প্রদান, সাতক্ষীরা ২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাউকে প্রচারে নামতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে একের পর এক। এছাড়া, একাধিক নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাতক্ষীরা ২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ও ৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন।
তবে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোটের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রপাকাÐ বলে জানানো হয়েছে সাংবাদিক সম্মেলনে।
এদিকে, বিগত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে সাতক্ষীরা ১ আসনে (তালা-কলারোয়া) জামায়াতের প্রার্থী আনছার আলী ৭২ হাজার ৬৯২ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ৫৩ ভোট। সাতক্ষীরা ২ (সদর) আসনে জামায়াতের কাজী শামসুর রহমান ৪৫ হাজার ৫৪৬ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের এ, এফ, এম এন্তাজ আলী পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ৭৬৭ ভোট। সাতক্ষীরা ৩ (আশাশুনি) আসনে জামায়াতের এ, এম রিয়াছাত আলী ৩১ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো. হাফিজুর রহমান পেয়েছিলেন ২৯ হাজার ৬৮০ ভোট। সাতক্ষীরা ৪ (দেবহাটা-কালিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মুনসুর আহমেদ ৪৪ হাজার ২২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতের জি, এম আব্দুল গফফার গাজী পেয়েছিলেন ৪১ হাজার ৫৫২ ভোট। সাতক্ষীরা ৫ (শ্যামনগর) আসনে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম ৪৫ হাজার ৭৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের এ, কে ফজলুল হক পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৩০৩ ভোট।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা ১ আসনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী ৭৬ হাজার ৭১৮ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতের শেখ আনছার আলী পেয়েছিলেন ৫১ হাজার ৫৪ ভোট। সাতক্ষীরা ২ আসনে কাজী শামসুর রহমান ৫৪ হাজার ৯৬ ভোটে আবারো নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৭৮৭ ভোট। সাতক্ষীরা ৩ আসনে আওয়ামী লীগের ডা. এস, এম মোখলেছুর রহমান ৩৯ হাজার ৭২২ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালাউদ্দীন পেয়েছিলেন ৩২ হাজার ৮৭ ভোট। সাতক্ষীরা ৪ আসনে জাতীয় পার্টির মো. শাহাদাৎ হোসেন ৪৬ হাজার ৭৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের মুনসুর আহমেদ পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ২৭২ ভোট। সাতক্ষীরা ৫ আসনে আওয়ামী লীগের এ, কে ফজলুল হক ৪০ হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৩১ হাজার ১৭২ ভোট।
২০০১ সালে সাতক্ষীরা ১ আসনে বিএনপি’র হাবিবুল ইসলাম হাবিব ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩০ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৫২৭ ভোট। সাতক্ষীরা ২ আসনে জামায়াতের মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল ১ লাখ ২৪ হাজার ২০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো. নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৬৯ হাজার ৮৬১ ভোট। সাতক্ষীরা ৩ আসনে জামায়াতের এ, এম রিয়াছাত আলী ৭৩ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী ডা. মোখলেছুর রহমান পেয়েছিলেন ৫৬ হাজার ৯৮২ ভোট। সাতক্ষীরা ৪ আসনে বিএনপি’র কাজী আলাউদ্দীন ১ লাখ ৮ হাজার ১৭২ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের ডাঃ আ, ফ, ম রুহুল হক পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৫৬১ ভোট। সাতক্ষীরা ৫ আসনে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম ৮৪ হাজার ৬১৩ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রিন্সিপাল আব্দুল হক পেয়েছিলেন ৫৬ হাজার ৫৫৪ ভোট।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা ১ আসনে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৮ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপি’র হাবিবুল ইসলাম হাবিব পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৫ ভোট। সাতক্ষীরা ২ আসনে জাতীয় পার্টির এম, এ জব্বার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪২২ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতের মোহাম্মদ আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৮ ভোট। সাতক্ষীরা ৩ ( আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের ডাঃ আ, ফ, ম রুহুল হক ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৯ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতের এ, এম রিয়াছাত আলী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫২ ভোট। সাতক্ষীরা ৪ ( কালিগঞ্জের একাংশ ও শ্যামনগর) জাতীয় পার্টির এইচ, এম গোলাম রেজা ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪৬ ভোটে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াতের জি, এম নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৮০৫ ভোট।
২০১৪ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরা ১ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ৯২ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের এস, এম মুজিবর রহমান পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৬১৩ ভোট। সাতক্ষীরা ২ আসনে আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ৩২ হাজার ৮৫৯ ভোটে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী শ্রমিকলীগের ছাইফুল করিম সাবু পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৭৮৯ ভোট। সাতক্ষীরা ৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ডাঃ আ, ফ, ম রুহুল হক ও সাতক্ষীরা ৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় এস, এম জগলুল হায়দার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন