মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

জসীমউদ্দীনের কবিতায় নারী ও নদী

আ লী আ ক ব র | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আধুনিক বাংলা কবিতার পটভূমিতে গ্রামীণ জীবনধারা ও পল­ী প্রকৃতির একনিষ্ঠ রূপকার জসীমউদ্ দীনকে চিনতে হলে তার কাব্য প্রতিভার স্বাতন্ত্রমাত্রাকে অনুধাবন করতে হবে। কবিতার ভাষা,উপমা ও শিল্পকর্মে নতুন ধারা সংযোজনের মধ্যদিয়ে কবিসত্তায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয় । আর এর মধ্য দিয়ে যুগে যুগে জন্ম হয় কবি প্রতিভার। নিজস্ব কাব্য প্রতিভায় জসীমউদ্ দীন তেমনি এক ‹পল­ীধারা› বিপ্লবের সফল স্রষ্টা।
জীবন ও জনপদের নারীকে কাব্যিক উপমায় অতিসাবলিল ভাবে তুলে ধরার এক অসামান্য দক্ষতা ছিল তার। তিনি দেখেছেন শৈশব-কৈশরের নারী ‘আসমানী’, ‘খোসমানী’ ও পূর্ণিমাসহ আরো অনেককে। দেখেছেন গ্রাম্য ষোড়শী সাজুকে, যে নেচে গেয়ে গ্রাম মাতিয়ে রাখে। আত্মজৈবিক সংমিশ্রণে গড়া উঠা এই সকল নারী চরিত্রে নারী কখনও রুগ্ন খোকার শিয়রে আদরে হাত বুলানো ‹পল­ীজননী›। যে সন্তানকে ভোরের স্বপ্ন দেখায়। শীতের কনকনে বায়ুতে ছেলেকে বুকে আগলে রাখে,ঘুমপাড়ানি গান শুনায়।পরম আদরে খোকার নানা উৎসুক জিঙ্গাসার জবাব দেয়। যেমন-
ছেলে কয় মারে, কত রাত আছে? কখন সকাল হবে ।
ভালো যে লাগে না,এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে।
পান্ডের গালে চুমো গায় মাতা,সারা গায়ে দেয় হাত।
পারে যদি বুকে যত স্নেহ ঢেলে দেয় তারি সাথ ;
রোগে-শোকে একান্ত পাশে থাকা মমতাময়ী মা›য়ের কথা শব্দকল্পের এক গ্রামান্যচিত্রের মত জসীমউদ্ দীনের ‹পল­ীজননী› কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। পল্লীকবির নক্সীকাথাঁর মাঠ কাহিনী কাব্যটি সাজু নামক এক চঞ্চলা,চপলা গ্রাম্য নারীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। চৈত্র-বৈশাখে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে ঘর-ঘুপড়িতে সখিঁদের সাথে সে ‘দেয়ার গান’ গায়। একদিন বাড়ির আঙিনায় সাজুকে দেখে মুগ্ধ হয় যুবক রূপাই ।
রূপাই ছিল ঘর বাধিঁতে,পিছন ফিরে চায়।
পাঁচটি মেয়ের রূপ বুঝি এই, একটি মেয়ের গায়।
গেরোস্থ যুবক রূপাইয়ের দেখা একটি মেয়েই হলো সাজু। সাজুর প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ হওয়ার কিছুদিন পর রূপাই দেশান্তর হয়। ষোড়শী সাজু এই বিয়োগ ব্যাথায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে ।
সাজুর হাত ঘুরে চিত্রায়িত হয় এক নঁকশা কাব্য কাঁথা। যেখানে নারী মনে বেদনার যে শব্দ তা চিত্রাঙ্কনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রিয় সঙ্গীর অপেক্ষার জানান নিতে নিতে এই নক্সীকাঁথা গায়ে জড়িয়েই সাজু চিরনিদ্রা যায়।
কবি মনে সামাজিক ক্রিয়া থেকে মনোজগতের যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তার শৈল্পিক বুননইতো একজন কবি স্রষ্টার সম্পদ। জসীমউদ্ দীনের বেলাতেও আমরা সেটাইদেখি। তার কালজয়ী ‘কবর’ কবিতাকে তার শ্রেষ্ঠ রচনা বলা যায়। (অসমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন