শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

ইসলামে নারীর মর্যাদা

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ইসলাম নারী জাতিকে এক করুন অমানবিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। পবিএ কোরআনে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত নং-২২৮)। একমাএ ইসলামই মাতা, কন্যা স্ত্রী প্রভৃতি হিসাবে নারীদেরকে বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার প্রধান করেছে। নারীর প্রথম পরিচয় সে পিতা-মাতার কন্যা। কিন্তু কন্যা হিসাবে ইসলাম-পূর্ব যুগে তার কোন মর্যাদাই ছিল না। আরবে তো লজ্জা-শরমে, মনের কষ্টে কন্যা শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তাছাড়া পৃথিবীর সর্বএই কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ কালো হয়ে যেত। এ সম্পর্কে পবিএ কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে-“যখন তাদের কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় , তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত নং-৫৮-৫৯)। এ আয়াতে কারীমা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে , কন্যাসন্তান জন্মগ্রহন করলে খুশি হওয়া উচিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “যখন কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন আল্লাহপাক ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। তারা এসে বলে-পরিবারের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর তারা তাদের বাহু দিয়ে কন্যা সন্তানটিকে আবেষ্টন করে এবং তার মাথায় হাত রেখে বলে-এক অবলা হতে আর এক অবলা বের হয়েছে। যে ব্যক্তি এর রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হবে সে কেয়ামত পর্যন্ত সাহায্য পাবে। ”রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কারো কন্যাসন্তান ভূমিষ্ট হলে সে যদি তাকে পুঁতে না ফেলে, তাকে যদি সে অপমানিত না করে এবং তাকে উপেক্ষা করে যদি সে পুএসন্তানের পক্ষপাতিত্ব না করে, তাহলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)। স্ত্রী হিসাবেও ইসলাম নারীর অধিকার সংরক্ষণ করেছে। পবিএ কোরআনে বলা হয়েছে তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরাও তাদের পরিচ্ছদ। (সূরা আল-বাকারা,আয়াত নং ১৮৭)। ইসলাম বিবাহের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান প্রধান করেছে। বহুবিবাহ প্রথাকে নস্যাৎ করার জন্য চারজন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহনের অনুমতি দেয়া হলেও সে ক্ষেএে কতিপয় শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যার কারণে ইচ্ছা করলেই একাধিক স্ত্রী গ্রহনের প্রবণতা রোধ হয়ে যায়। প্রত্যেক স্ত্রীর ওপর সুবিচার করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য না থাকলে একটি বিয়ে করার নির্দেশ জারি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে পবিএ কোরআনে হাকীমে বলা হয়েছে-“বিয়ে করবে তোমাদের পছন্দ মতো দুই, তিন কিংবা চার নারীকে। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকে” নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৩)। স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি শরিয়তে জায়েজ হলেও আল্লাহ তায়লা পছন্দ করেন না। আর তা হচ্ছে তালাক।” তাছাড়া তালাক এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন-“যদি তাদের (স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে সম্পর্কেচ্ছেদ হওয়ার মতো পরিস্থিতিরই আশঙ্কা করো, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ই মীমাংসা চাইলে আল্লাহ পাক তাদের মধ্যে অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।” (সূরা আন-নিসা ,আয়াত নং-৩৫)। নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।” একজন সাহাবী নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমার নিকট খেদমত পাবার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমার মা। সাহাবী বললেন-তারপর কে? রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমার মা। সাহাবী বললেন- তারপর কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমার পিতা এবং তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়-স্বজন। (বুখারী , মুসলিম, তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফ)। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পূর্বে ধন-সম্পওিতে নারীদের কোন উওরাধিকার স্বীকৃত ছিল না। ইসলামই মৃতের পরিত্যক্ত সম্পওির হকদার পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও প্রধান করে। পবিএ আল-কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে- “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পওিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পওিতে নারীদেরও অংশ আছে। অল্প হোক কিংবা বেশি হোক , এ অংশ নির্ধারিত।” (সূরা আন-নিসা , আয়াত নং-৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Murshid Islahi ৪ আগস্ট, ২০২০, ৮:২৪ পিএম says : 0
আল্লাহ তাআলা আপনার হায়্যাতে তায়্যেবা দান করুন আমীন।
Total Reply(0)
মাওঃ খাদিমুল ইসলাম ২১ আগস্ট, ২০২০, ১১:৪৮ এএম says : 0
Alhamdulillah
Total Reply(0)
Nasir Ahmed Ansari ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৩২ পিএম says : 0
think
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন