এ যেন বাতির নিচেই অন্ধকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার গ্রাম। জেলা শহর থেকে যার দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার মাত্র। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার সামান্য সমস্যায় দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন এ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
অসুস্থ মানুষকে চট করেই হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছেনা। সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গ্রামের সাথে যোগাযোগ। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগের অন্ত নেই। গ্রামে উৎপাদিত ধান-সবজী কোনটারই নায্যমূল্য মিলছেনা। আর এসব কিছুর জন্যে ওই রাস্তার সমস্যাকেই দুষছেন সবাই।
জেলা শহর থেকে লালপুর সড়ক ধরে এগুলেই বিলকেন্দুয়াই গ্রাম। দূরত্ব মাত্র ৫/৬ কিলোমিটারের। আর শহরের মধ্যপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বোর্ড বাজার প্রায় ৩ কিলোমিটারের পথ। গ্রামের উত্তর আর দক্ষিণ দিকের এই দুই পথে গ্রামের ধারে কাছে পৌঁছানো গেলেও বিলকেন্দুয়াই আর বোর্ড বাজার থেকে নরসিংসার গ্রামে ঢুকাটাই যেন পাহাড় সমান এক সমস্যা।
নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের সবকিছুর কেন্দর বোর্ড বাজার। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, স্কুল-কলেজ, বাজার সবকিছুই। আবার বিলকেন্দুয়াইয়ে রয়েছে একাধিক মাদরাসা। সে কারণে বিলকেন্দুয়াই, খাকচাইল গ্রামের মানুষজনের বোর্ড বাজারে যাওয়া আসা আবার নরসিংসারের মানুষের দু-দিকে আসা যাওয়ায় রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। এরআগে ৬ কিলোমিটার ঘুরে বড়হরন দিয়ে ২শ’ টাকা খরচ করে বিলকেন্দুয়াই, খাকচাইলের মানুষকে বোর্ড বাজারে যেতে হতো বলে জানান সেখানকার মানুষ।
বছর চারেক আগে নতুন এই রাস্তাটি নির্মিত হলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেননা এসব গ্রামের মানুষ। প্রতিদিন এসব গ্রামের হাজার পাঁচেক মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে।
নরসিংসার গ্রামের দক্ষিণ মাথায় কাছন আলীর বাড়ির কাছে ছোট্ট একটি খাল। এই খাল পেরুতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। গ্রামের মানুষ ১১বছর ধরে এখানে কালভার্ট করার দাবি জানিয়ে আসছেন। আর দক্ষিণ দিক থেকে এলে বিলকেন্দুয়াই গ্রামে কামালের বাড়ির কাছে থেমে যেতে হয় নরসিংসার গ্রামের মানুষকে। নিচু জমির কাদার ওপর দিয়েই চলতে হয়। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। পানিতে টুইটুম্ভর হয়ে যায়। প্রায় ১২০ ফুট লম্বা এজায়গা পাড়ি দিয়ে চলতে পারেন না গ্রামের মানুষ।
বিলকেন্দুয়াই গ্রামের সাত্তার মিয়া জানান, একদিকে বাঁশের সাকো আর আরেকদিকে নিচু জমি গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে পুরোপুরি। কোন যানবাহন ঢুকতে পারছেনা গ্রামে।
হামদু মিয়া জানান, গুরুতর অসুস্থদের দরজার কপাটে শুইয়ে, ধানের টুকরিতে করে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। প্রবাসী মো. হারুন মিয়া জানান, রাস্তা আমাদেরকে ছিটমহলের বাসিন্দার মতো বানিয়ে রেখেছে। গ্রামের এনামুল হক, ফজলু মিয়া, হাবিব মিয়া জানান, তাদের জমির ধান বিক্রি করতে হয় সাড়ে ৪শ’ টাকা মন। অথচ পাশের গ্রামের মানুষ ধান বিক্রি করে সাড়ে ৬শ’ টাকা।
গ্রামের এই মানুষরা জানান-তারা ৩/৪শ’ টাকা করে ট্যাক্স দিচ্ছেন। কিন্তু উপকার পাননা। নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হক বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। জমিতে ধান থাকায় কাজ করা যায়নি। এখানে কোন রাস্তা ছিলেনা। ৫০ বছরের মধ্যে আমিই দেড় কিলোমিটার রাস্তাটি করেছি। কালভার্ট নির্মাণ করারও চেষ্টা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন