জাহেদ খোকন : বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৬ ফেব্রুয়ারি। তাই নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার একদিন পরই স্থগিত হয়ে যায় এই ফেডারেশনের নির্বাচন। ১ মার্চ এনএসসি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে বর্তমানে অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের পরিবেশ অনেকটাই অস্থির। বলা যায়, ফেডারেশন সভাপতি এ এস এম আলী কবীর ও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম চেঙ্গিসের দ্বন্দ্বের কারণেই এ অস্থিরতা। আর তাই এখন প্রায় অন্ধকারেই রয়েছে দেশের অ্যাথলেটিক্স! সভাপতি ও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদকের পরস্পর বিরোধী অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফেডারেশনের অন্য সদস্যরা হয়ে পড়েছেন দ্বিধাগ্রস্ত। আলী কবীর মাত্র তিন দিন আগেও দোষারোপ করেছেন ইব্রাহিম চেঙ্গিসকে। তিনি গত শুক্রবার দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিককে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের (আইএএএফ) কাছে আমরা একরকম কালো তালিকাভুক্ত হয়ে গেছি’। সভাপতির ভাষ্যÑ তাকে নাকি আইএএএফের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ৬ মার্চ ফোনে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১৪ মাস আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগই করেনি বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, দুই বছরের বার্ষিক কার্যক্রমের প্রতিবেদনও তাদের কাছে পাঠায়নি বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। আলী কবীরের অভিযোগের তীর ইব্রাহিম চেঙ্গিসের দিকেই। মূলত সাধারণ সম্পাদকই আন্তর্জাতিকসহ সব অঙ্গনে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। তাহলে কী চেঙ্গিস এ ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন গেল এক বছরেরও বেশি সময়? যে কারণে আইএএএফের তালিকায় ‘নট ইন গুড স্ট্যান্ডিং’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশকে। এ প্রসঙ্গে চেঙ্গিস বলেন,‘আইএএএফ বলেছে, তোমাদের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে না। আমাদের কার্যক্রমের রিপোর্ট তাদের কাছে আগেই পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা কেন তা পায়নি আমার জানা নেই। দু’এক দিনের মধ্যে আবার পাঠাব। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই আইএএএফ আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করবে না।’
গেল চার বছর বলা যায় আলী কবীরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কই ছিল ইব্রাহিম চেঙ্গিসের। যদিও দায়িত্বের মেয়াদে তেমন কোনো সহযোগিতাই তিনি পাননি সভাপতির কাছ থেকে। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি থাকাকালীন আলী কবীর গেল চার বছরে চল্লিশবারও আসেননি ফেডারেশন অফিসে। শুধু তাই নয়, এই মেয়াদে জাতীয় সিনিয়র, জুনিয়র ও সামার অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য পৃষ্ঠপোষক আনার ক্ষেত্রে কোনো ভ‚মিকাই রাখেননি তিনি। অথচ বন্ধ ছিল না এসব প্রতিযোগিতা। সাধারণ সম্পাদকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঠিকই ট্র্যাকে গড়িয়েছে সব আসর। চেঙ্গিসের কথা,‘শুধু সভাপতি কেন, সর্বশেষ কমিটির এমন কোনো সদস্য ছিলেন না, যিনি পৃষ্ঠপোষক এনে দেয়ার ক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। গেল চার বছর আমাকেই পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করে মিট চালাতে হয়েছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব বুঝে নেই, তখন ফেডারেশনের তহবিলে ছিল মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। আর মেয়াদ শেষে রেখে যাচ্ছি প্রায় ১৬ লাখ। এতেই স্পষ্ট, নিজ মেয়াদে কতটা কাজ করেছি ফেডারেশনের জন্য।’
জানা গেছে, গেল প্রায় চার বছর সবকিছু ঠিকঠাক চললেও গত ২১ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই ইব্রাহিম চেঙ্গিসের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন আলী কবীর। তার অভিযোগ, চেঙ্গিস নাকি তাকে না জানিয়ে ফেডারেশনের ব্যাংক অ্যাকউন্ট থেকে ১০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। এ নিয়ে চেঙ্গিসকে হুঁশিয়ারি করে কয়েকটি চিঠি লেখেন আলী কবীর। কিন্তু আলী কবীরের অভিযোগ খন্ডন করে চেঙ্গিস বলেন, ‘ফেডারেশনের সব ব্যাপারেই সভাপতির অনুমতি নিয়ে গেল চার বছর কাজ করেছি। টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রেও তার মৌখিক অনুমতি ছিল। আমি সভাপতিকে জানিয়েই ওই টাকা উত্তোলন করেছি। যা ফেডারেশনের কাজে খরচ করা হয়েছে।’
(আগামীকাল দ্বিতীয় কিস্তিতে সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন