বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

নির্ঘুম রাত কাটছে আশাশুনির মানুষের

জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরাজীর্ণ এসব বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে কোথাও কোথাও মাত্র এক থেকে দেড় ফুট অবশিষ্ট আছে। এতে প্লাবন আতংকে দিন কাটাচ্ছে মানুষ।

জানা যায়, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন অন্তত ১২ বার প্লাবিত হয়।

এ ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর কোলা-হিজলিয়া, সুভদ্রাকাটি গ্রামের সোহরাব সানার বাড়ি থেকে সাইদ সানার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০ চেইন বেড়িবাঁধ, কুড়িকাহনিয়া গ্রামের ঋষিপল্লী থেকে রুইয়ারবিল পর্যন্ত প্রায় ৫০ চেইন বেড়িবাঁধ, হরিশখালী গ্রামের সøুইসগেট থেকে আয়ুব আলীর মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় ৩০ চেইন বেড়িবাঁধ, কোলা গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ থেকে হিজলিয়া প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত প্রায় ৬০ চেইন বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব বেড়িবাঁধের অবস্থা এতোটাই সঙ্কটাপন্ন যে একজন মানুষও তার উপর দিয়ে হেটে যেতে ভয় পায়।

একই অবস্থা শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটার এলাহি বক্সের মৎস্য ঘের থেকে রফিকের মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও থানাঘাটার জামাল মাস্টারের ঘের থেকে হাজরাখালী হয়ে বসিরের মৎস্যঘের পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের।

এদিকে, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে সাহেব আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৮শ মিটার বেড়িবাঁধ, মনিপুর খেয়াঘাট থেকে বাগালী সøুইসগেট পর্যন্ত প্রায় ৬শ মিটার বেড়িবাঁধ, কাকবাসিয়া খেয়াঘাট থেকে চেউটিয়া আব্দুল মালেকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫শ মিটার বেড়িবাঁধ ও নয়াখালী জামে মসজিদের সামনে থেকে হাজরাখালী খেয়াঘাট পর্যন্ত ২শ মিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে, খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে খাজরা বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ও গদাইপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন প্রায় ১শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যে কোন সময় গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয় আশাশুনি সদর ইউনিয়নও। উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে দয়ারঘাট গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে ভাঙতে ভাঙতে জেলেখালী ও দয়ারঘাট গ্রাম দুটির বেশিরভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়াও উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের বেতনা নদীর গাবতলা ও বুধহাটা ইউনিয়নের বুধহাটা বাজার পয়েন্ট এবং কেয়ারগাতি গ্রামে মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙনে দেখা দিয়েছে।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা গ্রামের আজিজুর রহমান জানান, প্রতিবছর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে গোটা এলাকায় প্লাবিত হয়। এতে খাল বিল ও পুকুরের মিষ্টি পানির মাছসহ এলাকার সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস হচ্ছে। এলাকার ফলদ, বনজ ও ঔষধিবৃক্ষ এখন বিলুপ্ত প্রায়। এছাড়াও ম্লান হয়ে যাচ্ছে সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। লবণাক্ততায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, আমার ইউনিয়ন তিন দিক থেকে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ বেষ্টিত হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বশেষ চাকলা গ্রামের বাঁধ ভেঙে কয়েকশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রায় ৫শ’ বিঘা জমি বাদ দিয়ে রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি কোন মতে আটকায়। কিন্তু ওই ৫শ’ বিঘা জমিতে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবারের বসত ভিটায় আজো জোয়ার-ভাটা খেলছে।

শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল জানান, জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার অবহিত করার পরও তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। এজন্য বর্ষা মৌসুম এলে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হয়।

আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন জানান, প্রতিবছরই নদীর বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। নদী থেকে পিছিয়ে রিংবাঁধ দিতে দিতে গ্রামের বাসযোগ্য জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর স্থায়ী সুরহা হওয়া দরকার।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও আবুল হোসেন জানান, এলাকার বেড়িবাঁধগুলো বহু আগে নির্মিত। বর্তমানে এগুলোর অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ মেলেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন