আল কোরআন খোদ মোজেজা বা অলৌকিক ব্যাপার। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও কোরআন মোজেজাপূর্ণ। কেননা এ যাবত কোরআনের বিষয়বস্তুগুলো নির্ধারণ করা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। যুগে যুগে অনেকে গবেষণা ও চিন্তা-সাধনা করেছেন কোরআনের বিষয়বস্তুগুলো নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট করার, কিন্তু কেউই তাতে সফলতার দাবি করতে পারেন না। কারণ এ যাবত দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে অসংখ্য ভাষায় কোরআনের ব্যাখ্যাভিত্তিক বহু গ্রন্থ-পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু প্রত্যেকটি গ্রন্থ-পুস্তকেই কোরআনের নতুন নতুন বিষয়বস্তু স্থান লাভ করেছে। কোরআনের ওপর এবং কোরআন সম্পর্কে যতই চিন্তা- ভাবনা ও গবেষণা করা হচ্ছে, ততই নতুন নতুন অভিনব বিষয়বস্তু উঠে আসছে এবং উদ্ভব হচ্ছে নানা বিষয়ের। এ জন্য বলা হয় কোরআনের বিষয়বস্তুগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই রসূলুল্লাহ (সা:)-এর সতর্কবাণী মনে রাখতে হবে যাতে তিনি বলেছেন;
‘মানক্বালা ফিল কোরআনে বিগায়রি ইলমিন, ফাল ইতাবাওয়ায়ু মাকআদাহু মিনান্নার’ অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি না জেনে কোরআন সম্পর্কে বলে, সে নিজের আসন জাহান্নামে স্থির করে।’ ভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, ‘মানক্বালা ফিল কোরআনে বিরায়িহি’ অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি কোরআন সম্পর্কে নিজের রায়ে বলে।’
তবে কোরআনের তরজমা তফসির করা এবং কোরআনের বিষয় নির্বাচন করা এক কথা নয়। বিষয় নির্বাচন যারা নির্বাচন করবে তারা কোরআন পড়তে জানে এবং কোরআনের অর্থ বোঝে এমন যোগ্যতাসম্পন্ন লোক হবে। অন্যের লেখা বিষয়বস্তুর নকলকারীও হতে পারে, তবে এমন লোকের সংখ্যাই অধিক। কোরআনের তফসির করা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। কেবল তারাই করতে পারেন যারা আলেমে দ্বীন এবং যাদের দ্বীনী শাস্ত্রসমূহের দক্ষতা ও পারদর্শিতা আছে।
এ বিষয়ে উলামায়ে ইসলাম লিখেছেন যে, ১৫টি ইসলামী শাস্ত্রের ওপর গভীর জ্ঞানও দখল আছে, এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই কোরআনের তফসির লিখতে পারেন। লোগত, নাহু, ছরফ, কেরাত, ফেকাহ, উসূলে ফকাহ, হাসিসে ফেকাহ ইত্যাদি ছাড়াও কারো মতে তাসাওফও জানতে হবে।
উল্লেখ্য, রসূলুল্লাহ (সা:)-কে পরীক্ষা করার জন্য মদিনার ইহুদিরা ‘রূহ’ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল বলে বোখারী ও মুসলিমের রেওয়াতে বলা হয়েছে এবং সীরাতের বর্ণনা অনুযায়ী মক্কার কোরেশগণ ইহুদিদের পরামর্শে উক্ত প্রশ্ন করেছিল। ফলে আয়াতটির শানে নজুল নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়, আয়াতটি মাদানী নাকি মাক্কি। যা হোক, আয়াতটির পরবর্তী অংশ হচ্ছে, ‘অমা ওতিতুম মিনাল ইলমে ইল্লা কালীলান’ অর্থাৎ তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে সামান্যই।’ (সূরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮৫)
আল্লাহর ইলমে ছিল যে, ইহুদি বা কাফেররা ‘রূহ’ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে, কিন্তু সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। কেননা ‘রূহ’- এর সূ² বিষয় ও রহস্যাবলির সঠিক ব্যাখ্যা পূর্বের বড় বড় পÐিত, দার্শনিকগণ পর্যন্তও উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে। ইহুদি কাফেররা যে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী, ‘রূহ’ শব্দটি তাদের জ্ঞানের অনেক ঊর্ধ্বে, তারা এর মর্ম অনুধাবন করতে সক্ষম নয়। তাদের সীমিত জ্ঞানে বোঝার মতো করে রসূলুল্লাহ বলে দিয়েছেন, ‘এটি আল্লাহর নির্দেশ হতে’। এতটুকু বুঝলেই চলবে, তার বেশি জ্ঞান তাদের দেয়া হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন