ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মধ্য কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। এ অবস্থায় সবসময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এমনকি সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অভিবাবকরাও। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিদ্যালয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মধ্য কামদেবপুর। এক সময় এখানে কোন বিদ্যালয় ছিল না। তখন শিক্ষার ছোঁয়া লাগেনি কোন ঘরে। স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে একটি ভবন নির্মঠু করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বিদ্যালয়টি রেজিষ্টার্ডভুক্ত করা হয়। নির্মাণের পর ভবনটিকে কখনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে এ ভবনে নানা ধরনের ত্রæটি দেখা দেয়। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। বৃষ্টির সময়ে ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে মেঝেতে, খসে পড়েছে পিলারের ইট বালি। অনেক কক্ষের দরজা জানালা নেই। ফলে সব সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় থকেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অথচ এখানে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকিনিয়ে শিক্ষকরা ক্লাস করান শতাধিক শিক্ষার্থীর। কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ চারটি কক্ষে দুই সিফটে চলছে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস। শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই রয়েছে অফিস ও লাইব্রেরি কক্ষ। ভবন না থাকায় স্যাঁতস্যাঁতে এই বিদ্যালয়টিতে দিনদিন শিক্ষার্থী সংখ্য কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাকিব জানান, বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে বইখাতা ভিজে যায়। ক্লাসের মেঝেতে পানি জমে থাকে। তাছাড়া প্রায়ই পলেস্তারা খসে বেঞ্চে পড়ে থাকে। তাই স্কুলে আসতে ভয় করে। একই কথা জানালেন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নয়নসহ আরো কয়েক শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিমা আক্তার জানান, শ্রেণিকক্ষের সল্পতার কারনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে পাঠদান চলে। যে কারণে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির জন্য পৃথক ক্লাসরুম থাকার বিধান থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এছাড়া গত আগস্ট মাসের শুরুতে মৌসুমী জোয়ারের পানিতে শ্রেণিকক্ষগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো। এতে ভয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে চায় না।
এ ব্যাপারে মধ্য কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসন বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। জরুরী সংস্কার করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিশুরা আরো স্কুল বিমুখ হবে। বাড়তেই থাকবে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গত অর্থ বছরে ¯িøপ প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা থেকে কিছু কাজ করানো হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সংস্কার বরাদ্দ জরুরী বলেও জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুজাম্মেল হোসেন বলেন, সংস্কার না করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পলেস্তারা খসে পড়ে যেকোন সময় বড় কোন দুঘর্টনা ঘটতে পারে। এ বিষয় একাধিকবার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। এ বিদ্যালয়ের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের ভবনের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে গুরুত্ব অনুযায়ী স্কুলগুলোর সংস্কার করা হবে। মধ্য কামদেবপুর বিদ্যালয়টির অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন