বহিরাগত দালাল এবং টেন্ডল নির্ভর হয়ে পড়ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেনের (ডিএনসিসি) রাজস্ব বিভাগের ট্রেড লাইসেন্স শাখার কার্যক্রম। বহিরাগত এই দালালদের কাছে জিম্মি সাধারণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ডিএনসিসির সাধারণ কর্মচারীরাও। ডিএনসিসি’র বিভিন্ন অঞ্চলিক অসিফের এই দালালদের কাছে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন করতে আসা ব্যবসায়ীরা। সুযোগ বুঝে ট্রেড লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি’র দ্বিগুণেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এ দালাল ও টেন্ডলদের বিরুদ্ধে।
ট্রেড লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজারদের সামনে ও পাশে একই টেবিলে বসে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন ফরমের রিপোর্ট লেখা এবং ট্রেড লাইসেন্সের মূল বইয়ের মানি রিসিটের কপি পর্যন্ত পূরণ করেন দালালরা। ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা প্রার্থী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই দালালরা। অথচ এই দালালদের কোনো জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার বালাই নেই। প্রতিদিন গড়ে একেক দালাল অবৈধভাবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে ডিএনসিসির ট্রেড লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সুপারভাইজার দালালদের কাজ করার সুযোগ দিয়ে অবৈধ টাকার ভাগ নিয়ে থাকেন এমন অভিযোগও রয়েছে।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মেয়রের নির্দেশে গত আড়াই মাস যাবৎ এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস এবং পরিচ্ছন্নতা কাজের সহযোগিতার জন্য ডিএনসিসিতে চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। আর এই কন্ট্রোল রুমে রোস্টার (তালিকা) অনুযায়ী প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে ডিইউটি করতে হচ্ছে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের। এরমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজার, উপ কর কর্মকর্তা (ডিটিও), রেভিনিইউ সুপারভাইজার (আরএস), হিসাব সহকারী ও বিল ক্লার্ক রয়েছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে এবার রাজস্ব আদায় মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে এবং বাজেটে উল্লেখ করা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্খা রয়েছে।
বর্তমানে ডিএনসিসির পুরনো ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাশাপাশি নতুন ৫টি অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য ভীড় জমাচ্ছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত কাউকে না পেয়ে দালালদের খপ্পরে পড়েন। এ অবস্থায় দালালরা ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছন।
আরো জানান যায়, আঞ্চলিক কার্যালয়ে অফিস চলাকালে ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনুপস্থিতির সুযোগে বহিরাগত দালালরা ডিএনসিসির কর্মচারীর পরিচয়ে অফিসিয়াল চেয়ার টেবিলে কাজ করছে। আবার কখনো সংশ্লিষ্ট ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারদের উপস্থিতিতেই তারদের পাশে বসে কাজ করছেন এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এই কর্মকাÐ ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ কাওরান বাজারসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক অফিসেই চলছে। কাওরান বাজার অঞ্চলে-৫ এ দুই জন ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজারের পক্ষে ১০ জনের বেশি বহিরাগত দালাল (টেন্ডল) সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেন। এদের মধ্যে রিপন, মিজান, জুয়েল, তারেক ও সলটোকেই বেশি তৎপর ও প্রভাব নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। বহিরাগত দালালরা কেনো অফিসের স্টাফ পরিচয়ে কাজ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির কাওরান বাজার অফিসের করকর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, জনবল সঙ্কটের সুযোগে তারা অনুমতি সাপেক্ষে সহযোগিতা করে থাকেন। এই বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম আর জনগণকে হয়রানী সহ্য করা হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন