সম্প্রতি লবণের দর পতনে লবণ উৎপাদন এলাকা কক্সবাজারে চাষিদের মাঝে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি মাঠ থেকে ১ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত লবণ কিনবে সরকার। এ জন্য বিসিক থেকে অর্থ চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থ ছাড় পেলেই প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে লবণ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে বিসিক। আর মাঠ থেকে লবণ কেনা শুরু হলে স্থিতিশীলতা আসবে, বাড়বে লবণের দাম। বন্ধ হবে সিন্ডিকেট বাণিজ্য ও সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি।
সোমবার (২০ জানুয়ারী) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে লবণ উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারদর বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সৈয়দ আহামদ এ তথ্য জানান। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই সভায় লবণ চাষী ও মিল মালিকরা লবণের ধারাবাহিক দরপতন রোধ ও চাষিদের মাঠে নামানোর বিষয়ে কথা বলেন।
তারা বলেন, একটি অসাধু ও অতি মুনাফালোভী লবণ সিন্ডিকেটের কারণে দেশের বাজার অস্থিতিশীল। সঠিক দাম পায় না প্রান্তিক লবণচাষীরা। লবণ শিল্প বিরোধী চিহ্নিত চক্রকে দমন করতে না পারলে আগামী দিনে লবণ স্বনির্ভর খাত আরো কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হবে।
লবণ চাষিদের অভিযোগ, প্রতিদিনই ফিনিশ লবণ দেশে ঢুকছে। যা কম দামে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। উদ্বৃত্ত থাকার পরও প্রতি বছর লবণ আমদানি করা হয়। তারা টেক্স ফ্রি সোডিয়াম সালফেট ছড়িয়ে দিচ্ছে বাজারে।
সুডিয়াম সালফেটের আড়ালে যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্ট, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সভায় লবণচাষিদের নিবন্ধিত করার দাবী উত্তোলন করে বলা হয় যেভাবেই হোক আমদানি নিষিদ্ধ করে চাষীদের আস্থা ফেরাতে হবে।
লবণের ন্যায্য মূল্য কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সভার প্রধান অতিথি কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বলেন, সরকারিভাবে লবণ আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবু যারা ‘ব্যাক টু ব্যাক এলসি’র নামে আমদানি করছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বিশেষ করে, লবণ মৌসুমে যাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড উৎপাদন করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। দাম না পাওয়ায় মানুষ আন্দোলন করছে। যদি ন্যায় মূল্য নিশ্চিত করতে না পারি তা হলে সেটা আমাদেরই ব্যর্থতা। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জরুরি বৈঠক করে লবণের দাম নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাং শাজাহান আলি, কুতুবদিয়ার ইউএনও জিয়াউল হক মীর, বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হাফিজুর রহমান, অডিটর মোঃ ইদ্রিস আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
লবণ মিল মালিক ও চাষিদের ওই সভায় কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লবণগুলো স্থানীয় মিল থেকে সরবরাহ করা যায় কি না বিবেচনায় আনার দাবী জানান।
সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল কবির, সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম খান, ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুল কাদের, লবণ চাষী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কায়ছার ইদ্রিস, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মাহমুদুল্লাহ, লবণ ব্যবসায়ী নুরুল আবছার ও হাবিবুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ বিবেচনায় যা যা কারণীয় সরকার তাই করবে। লবণের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা আকারে সুপারিশ পাঠানো হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে লবণ চাষিদের সাথে বৈঠকের ব্যবস্থার কথাও জানান জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের ১০ জানুয়ারীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি মণ লবণের দাম গড়ে ১৯২ টাকা। যা কেজিতে পড়ছে প্রায় ৪ টাকা। ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মে.টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মে.টন।
গত মৌসুমে (২০১৮-১৯) লক্ষ্যমাত্রা ১৮ লাখ ৫০ হাজার মে. টনের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার মে.টন। যা বিগত ৫৮ বছরের লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষির সংখ্যা ২৯ হাজার ২৮৭ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন