বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে গতকাল সকাল পর্যন্ত নতুন করে ৩৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৩ জনে পৌঁছেছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৩৩৫ জন। ভারতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ জন। এশিয়ার অন্যান্য দেশ, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার তুলনায় ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কম। তবে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে যে ধরনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র দরকার, ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা সেটি সামাল দিতে সক্ষম নয়। আর তাতেই নড়বড়ে দেশটির ক্রীড়া ইভেন্টগুলো।
বর্তমানে দেশটিতে সফর করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল ধর্মশালায় হওয়া প্রথম ওয়ানডেটি হওয়ার কথা ছিল ‘রুদ্ধদ্বারে’। যদিও ভারী বৃষ্টির কারণে ম্যাচটিই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এই দর্শকহীনতা দেখা যেতে পারে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক মিলিয়ন ডলার টুর্নামেন্ট আইপিএলেও। শুধু দর্শকই কেন? ভারতের সবচাইতে জমজমাট এই চার-ছক্কার লড়াইয়ের এই টুর্নামেন্ট আলো হারাতে পারে বিদেশী ক্রিটোরদের অনুপস্থিতির কারণেও!
দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচ
এবার আইপিএল হবে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। করোনাভাইরাসের জেরে এমনই সম্ভাবনার কথা ভাবছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। কারণ ভারতীয় ক্রীড়ামন্ত্রনালয় নির্দেশ, এই মুহূর্তে খেলাধুলার কোনও ইভেন্টে বেশি দর্শকের উপস্থিতি কাম্য নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্তা সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে রুদ্ধদ্বার স্টেডিয়ামে আইপিএলের ম্যাচ আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়েই এর সংক্রমণ ঠেকাতে ইতালির সিরি ‘আ’, স্পেনের লা লিগা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগসহ যুক্তরাষ্ট্রের এনবিএ লিগের ম্যাচও হয়েছে দর্শকহীন মাঠে, পরে অনেক ম্যাচসহ মৌসুমই স্থগিত ঘোষনা করেছে কতৃপক্ষ। মাঠে খেলা দেখতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কিন্তু ঘটছে। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেলবোর্নে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে গ্যালারির দর্শক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর তাই দেশটির ক্রীড়া সচিব আরএস ঝুলানিয়া গতকাল বলেছেন, তারা চাইছেন ভারতের আসন্ন সব ম্যাচ দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা হোক।
২৯ মার্চ শুরু হওয়া প্রায় মাসব্যাপী এই আসর চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। ভারতের ক্রীড়াসূচির যা অবস্থা তাতে আইপিএল পিছিয়ে দেওয়াও সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে মাঠে গড়াতে এটাই একমাত্র পথ বলে মনে করছে দেশটির ক্রিকেটমহল।
গেইল-ভিলিয়ার্সরা অনিশ্চিত
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহামারি হয়ে ওঠায় যে পরিস্থিতি চলছে তাতে আইপিএল নাও মাঠে গড়াতে পারে। ২৯ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়াবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত যে এবার আইপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের অংশ নেওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ভিসা নিয়ে বিধিনিষেধ থাকায় অন্তত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আইপিএলে দেখা যাবে না এবি ডি ভিলিয়ার্স-ক্রিস গেইলদের।
বিসিসিআইয়ের সূত্র মারফত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সরকার ভিসা দেওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করায় বিদেশি ক্রিকেটারদের এ সময় পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। অবস্থা এমনও হতে পারে দর্শকহীন মাঠে গড়াতে পারে এবারের আইপিএল, জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। পিটিআইকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআইয়ের এক সূত্র বলেছেন, ‘ব্যবসায়ী ভিসা ক্যাটাগরির অধীনে আইপিএল খেলতে আসেন বিদেশি ক্রিকেটাররা। সরকারি নির্দেশে তারা (বিদেশি ক্রিকেটার) আগামী ১৫ এপ্রিলের আগে আসতে পারবেন না।’
১৪ মার্চের অপেক্ষা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। সঙ্গত কারণেই নির্ধারিত সময়ে আইপিএল শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের মিটিং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। সেখানেই সম্ভবত এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্রিজেশ প্যাটেল জানিয়েছেন, বিদেশি ক্রিকেটারদের ভিসা, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলার সম্ভাব্যতা যাচিয়ে দেখাসহ টুর্নামেন্টের ‘সমস্ত সম্ভাবনা’ নিয়ে আলোচনার জন্য শনিবার তারা বৈঠকে বসবেন। মুম্বাইয়ের এই বৈঠকেই আইপিএলের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। নির্ধারিত সময়ে আইপিএল মাঠে গড়াবে কি না তা জানা যাবে বৈঠকের পরই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন