ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা। বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যার পরে ১৪৮ কিলোমিটার বেগে সাতক্ষীরায় আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে দুইজন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছে। ঝড়ে ২২ হাজার ৫১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬০ হাজার ৯১৬টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রবল এই ঝড়ে সাতক্ষীরা উপকূলের নদ-নদীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাধ ও এলজিইডির ৮১ কিলোমিটার রাস্তা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ঝড়ে সাতক্ষীরায় ৬৫ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ৪০ হাজার টাকার আমসহ ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার কৃষি সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ কোটি ১৬ লাখ টাকার সবজি, ১০ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকার পান ও সাড়ে ৪ লাখ টাকার তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৮৭০।
ঝড়ে ৯১টি খামার ও ৬৪০টি গবাদি পশুসহ ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৩০ টাকার গবাদি পশু এবং ৮৬টি হাস মুরগির খামারসহ ৭৭ লাখ টাকা ৬৭ হাজার ৮৬ টাকার হাসমুরগির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভেসে গেছে সাড়ে ১২ হাজার মৎস্য (চিংড়িসহ) ঘের। যার ক্ষতির পরিমান ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা টাকা।
জেলা প্রশাসক বলেন, পূর্ব প্রস্তুতির কারণে আম্পানের মতো প্রবল একটি ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরায় প্রাণহানির সংখ্যা সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখা গেছে। ঝড়ে হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এর সাথে সাথে ঘরবাড়িও সেই হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাধ এবং যেসব পয়েন্টে বাধ ভেঙেছিল সেসব জায়গায় মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরার আমের একটা সুখ্যাতি আছে এবং এখানে প্রচুর আম হয়। ঝড়ে ফলন্ত গাছের আম, যা পাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন চাষীরা, তার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ ঝরে পড়েছে। এছাড়া অন্যান্য শাক-সবজিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এবার ঘর্ণিঝড় পূর্বাভাস পাওয়ার পরপরই জেলার ১৯০৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার সাথে সাথে প্রায় ৩০ হাজার গবাদি পশুকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় প্রাণি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরা একটি চিংড়ি অধ্যুষিত জেলা। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে জেলার নদনদীর অন্তত ২০ পয়েন্ট ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ও মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। এতে সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ভেসে যাওয়ায় চিংড়ি চাষীদের ১৭৬ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝড়ের পূর্বেই জেলাং ২৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন করে আরও ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা হিসেবে নগদ টাকা ও ঢেউ টিন বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের মিট দ্য প্রেসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামান, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন