ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। নিহতের সংখ্যাও এই এলাকায় তুলনামূলক বেশি। যশোর ও ঝিনাইদহসহ নিহতের সংখ্যা ১৫। বেড়িবাঁধ ভেঙে বিরাট এলাকার জনপদে পানি ঢুকে গেছে। ধ্বংসের চিহ্ন এখনো রয়েছে সবখানে। ধীরে ধীরে বাড়িঘর মেরামতের কাজ চলছে।
যশোরসহ বিভিন্নস্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেনাবাহিনী। তারা বেশকিছু ঘরবাড়ি ইতোমধ্যেই মেরামত করে দিয়েছেন। সেনাপ্রধানের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা। যশোরে তারা আটটি টিমে বিভক্ত হয়ে আট উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি চিহ্নিত ও মেরামত করে দিচ্ছেন। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা তুলে দিচ্ছেন। সেনাসদস্যদের একটি টিম যশোর সদর উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকায় কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এই অঞ্চলের মধ্যে যশোরে জানমালের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এখানে ঝড়ের দিন গাছচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী, মা ও মেয়েসহ ১২জন। একটি জেলাতেই ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা অন্য কোথাও নেই।
জানা যায়, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর প্রশাসনের পক্ষে বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেয়া সম্ভব এখনো হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। তবে ক্ষতি যে ব্যাপক তার সাথে কেউই দ্বিমত করেননি। এই অঞ্চলের মধ্যে যশোর জেলা বন্যা ও দুর্যোগমুক্ত হিসেবে পরিচিত। সিডর, আইলা, ফণী, বুলবুল, রোহানু, নার্গিসসহ স্মরণকালের কোন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বললেই চলে। কিন্তু এবারের সুপার সাইক্লোন আম্ফান বিরাট ক্ষতি করে দিয়ে গেলো-এই মন্তব্য প্রশাসনের কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের। অনেকে বলেছেন, ‘জীবনে এতো ভয়াবহ তান্ডব চোখে দেখেননি’।
টানা প্রায় ৮ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে গোটা এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সবজি, আম, লিচু, জাম, কাঠাল, শসক্ষেত, পানের বরজ, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, চিংড়ি ঘের, ফুল ও ফল লন্ডভন্ড করে দেয় আম্ফান। কাঁচা ঘরবাড়ি ও টিনের ছাউনি বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় পাক দিয়ে মড়মড় শব্দে শুধু টিন উড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের জানমালের ক্ষতি হয়েছে অনেক। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলারবুড়ি গোয়ালিনি ইউনিয়নের চুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয় সেটি মেরামতের চেষ্টা চলছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সবখানে পুরোপুরি যোগাযোগ পুনঃস্থাপন না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বললেন, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ গোটা এলাকার কৃষির ক্ষয়ক্ষতিরও হিসাব করা হচ্ছে। তার কাছে যে প্রাথমিক তথ্য আছে তাতে, সবজি, আম লিচু, পান, কলাসহ মৌসুমী ফলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন