১। মোহাম্মদ ফাতহুলবারী ফাইয়্যাজ, রাজামেহার, মুন্সী মঞ্জিল কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : ইসলামে হজের গুরুত্ব কি? বুঝিয়ে বলুন।
জবাব : মহান হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। কেউ যদি হজ ফরজ হওয়ার বিষয় মানতে অস্বীকার করে সে কাফের হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘সামর্থবান লোকদের প্রতি আল্লাহর উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর হজ আদায় করা ফরজ। আর কেউ যদি তা মানতে অস্বীকার করে তাহলে (জেনে নিক) আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী নন’। (আল ইমরান : ৯৭) হজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, একবার নবী করীম (সা.) জিজ্ঞাসিত হলেন, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান’। তারপর প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোন আমলটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’। তারপর প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘মাবরুর হজ’-(বুখারী ও মুসলিম)।
আর মাবরুর হজ হচ্ছে ঐ হজ, যা আদায় করার সময় হাজী সকল প্রকার গুনাহ বা নিলর্জ্জতার কাজ থেকে বিরত থাকে। এ ধরনের মাবরুর হজ আদায় করতে পারলে আল্লাহ তা’আলা জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ আদায় করলো এমন অবস্থায় যে, কোন প্রকার কাম, প্রবৃত্তি চর্চা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত থাকেনি, সে এমনভাবে হজ শেষে ফেরত আসবে যেমন নবজাতক শিশু মায়ের পেট থেকে (গুনাহমুক্ত অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়। (বুখারী ও মুসলিম) আরেকটি হাদীসে তিনি এরশাদ করেছেন ... মাবরুর হজের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম) এত বড় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি আল্লাহ তা’আলা জীবনে মাত্র একবার ফরজ করেছেন। এরপর পুনরায় করলে তা নফল হবে। যদি আল্লাহ প্রতি বৎসরই ফরজ করতেন, তাহলে সেটা আদায় করা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন হয়ে যেতো। হিজরী ৬ষ্ঠ সনে মতান্তরে নবম অথবা দশম সনে হজ ফরজ হওয়ার আয়াত নাযিল হলে নবী করীম (সা.) এক খুৎবায় তার ঘোষণা দিতে গিয়ে বললেন, ‘হে জনতা, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি হজ ফরজ করে দিয়েছেন, তাই হজ আদায় করে নাও। একজন বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তা-কি প্রতি বৎসরই? তিনি উত্তর দিলেন না। লোকটি তিন তিন বার প্রশ্নটি করতে থাকলো। শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি যদি বলতাম হ্যাঁ, তাহলে প্রতি বৎসরই ফরজ হয়ে যেতো। আর তোমরা তা পালন করতে পারতে না। অতঃপর তিনি বললেন, যেটা আমি বলি না, সেটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করো না। তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধ্বংস হয়েছে বেশি বেশি প্রশ্ন করা, আর নবীদের সাথে মতবিরোধের কারণে। আমি তোমাদের যা করার নির্দেশ দেই, সাধ্যমত তা করার চেষ্টা করো, আর যে বিষয় থেকে নিষেধ করি তা বর্জন করো।’’-(বুখারী ও মুসলিম) হজ ফরজ হয়ে গেলে বিলম্ব না করে সাথে সাথেই আদায় করা উচিৎ। বিলম্ব করে কয়েক বৎসর পরে আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু বিলম্ব করার কারণে গুনাহগার হতে হবে। আর যদি বিলম্ব করার কারণে শেষ পর্যন্ত হজ আদায়ের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করতে হয়, তার পরিণতি হবে অত্যন্ত করুণ। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তির মক্কা শরীফ যাতায়াতের মতো সম্বল রয়েছে (অর্থাৎ হজ ফরজ হয়ে গেছে) কিন্তু গড়িমসি করে আদায় করেনি, সে যেন ইহুদী বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করে- (তিরমিযী)। অর্থাৎ সে যেন মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার আশা না করে। ওমর (রা.) বলতেন, যাদের উপর হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও হজ আদায় করছে না, আমার মনে চায়, তাদের উপর (অমুসলিমদের ন্যায়) জিযিয়া কর আরোপ করতে। কারণ এরা মুসলিম হতে পারে না, এরা মুসলিম হতে পারে না (বাক্যটির দুইবার উচ্চারিত হয়েছে)। আল্লাহ তা’আলা সবার উপর হজ ফরজ করেননি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে, শুধু তাদের উপরই ফরজ করেছেন। সামর্থ্য দু’ধরনের, শারীরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে। হজের আহকামগুলো আদায় করার মতো শারীরিক ক্ষমতা থাকতে হবে। আর অর্থনৈতিকভাবে নিজের হজের সফর ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচপত্র বহন এবং হজ শেষে ফিরে আসা পর্যন্ত তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করার মতো অর্থনৈতিক সঙ্গতি থাকলেই হজ করা ফরজ হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে হজের সফরে স্বামী অথবা মাহরাম সঙ্গী থাকা জরুরি। বিনা মাহরামে মহিলাদের হজের সফরে বের হওয়া ঠিক নয়। ইবনে আব্বাছ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মাহরামের অনুপস্থিতিতে বেগানা নারী-পুরুষ যেন একান্তভাবে একত্রিত না হয়। কোন মহিলা যেন বিনা মাহরামে সফর না করে। তা শুনে একজন বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে, আর আমি অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়ে রেখেছি। তিনি বললেন, ‘তুমি গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজ আদায় করো।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন