শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দুর্ভোগে ৩২ গ্রামের মানুষ

সেতু আছে সড়ক নেই জমি জটিলতায় আটকে আছে সংযোগ সড়ক নির্মাণ

নড়াইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা-মানিকগঞ্জ সড়কের গন্ডব খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ১ বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আটকে যায়। অবশেষে দীর্ঘ ৪ বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয় সেতু নির্মাণ। কিন্তু সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুটি ব্যবহার করতে পারছে না গ্রামবাসী। যার কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যায়।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার এড়েন্দা-মানিকগঞ্জ সড়কের গন্ডব খেয়াঘাটে ১০ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২ মে। নির্মাণকাজ পায় গোপালগঞ্জের পিপিএল ও এনএকে নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। নানা জটিলতার কারণে আড়াই বছর পর গত ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে মূল সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর সংযোগ সড়ক নির্মাণকালে জমি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সংযোগ সড়ক প্রশস্ত হওয়ায় উভয়পাশে ব্যক্তিমালিকানা জমির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় জমির মালিকরা জমি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে ক্ষতিপূরণের জন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আদালতের শরণাপন্ন হন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির মূল কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তা থেকে সেতুটিতে উঠতে গেলে অন্তত ২০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উঠতে হচ্ছে। একটি বাইসাইকেল চালিয়েও সেতুতে ওঠার উপায় নেই। ইঞ্জিনচালিত কোনো যানবাহনই সেতু দিয়ে যেতে পারে না। আলাপকালে স্থানীয় গ্রামবাসী জানিয়েছেন, দু’পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
কাশিপুর ইউপির ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছলেমান শেখ জানান, সেতুটির সংযোগ সড়কের অভাবে ৩২ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য মারাত্বক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকাবাসীর সহজ যোগাযোগের পরিবর্তে ৩০-৩৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। স্থানীয় মুজিবর রহমান বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় সেতুটি মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দাবি সংযোগ সড়কের জন্য জমির জটিলতা নিরসন করে দ্রুত গন্ডব সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সর্বসাধারণের চলাচলের উপযোগি করা হোক। তবে ওই এলাকার রাজ্জাক মোল্যা, তসির মোল্যা ও ইব্রাহীম মোল্যা বলেন, তাদের জমির ওপর দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে তাদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি জানায়, সেতুটির মূল কাজ শেষ হয়েছে। দুপাশের ২৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ বাকি। কিন্তু সেতুটির দক্ষিণ পাশে যেখানে ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে, সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের নিজেদের জমি দাবি করে কাজে বাধা দেন। এ জন্য সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
এলজিইডি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি অযৌক্তিক। যেখানে ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্তত ৩০ বছর আগে থেকেই ১৮ মিটার রাস্তা রয়েছে। ওই এলাকায় রেললাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ হওয়ায় স্থানীয় ওই ব্যক্তিদের ধারণা, কাজে বাধা দিলে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে সংযোগ সড়ক করবে। এতে তারা টাকা পাবেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সমাদ্দার বলেন, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল গন্ডব খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেতুটির ডিজাইন যখন করা হয় তখন কেউ জমির মালিকানা দাবি করেনি। বর্তমানে যারা কাজে বাধা দিয়ে জমির মালিকানা দাবি করছেন, তাদের দাবি অযৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে উপর মহলে চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন