চট্টগ্রামের আনোয়ারার পিএবি সড়কে গণপরিবাহনে যাত্রীদের ভোগান্তি দিনদিন বেড়েই চলছে। কয়েক বছর আগে এ সড়কে ২ শতাধিক বাস চলাচল করলেও বর্তমানে লোকাল বাস সার্ভিস কমিয়ে বিরতিহীন, গেটলক ও লাল বোর্ড নাম দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়, বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক পরিবহনে গাড়ি চুক্তিবদ্ধ করে রাখা ও করোনা পরবর্তি লোকসানের ভয়ে বাস মালিকেরা পরিবহন ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি বলে জানা যায়। যাত্রীদের এ অসহায়ত্বের সুযোগে সিএনজি চালিত অটোরিকশায়ও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, গণপরিবহনের এ ভোগান্তি ও নৈরাজ্য সব সময়ই চলছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।
সরেজমিনে উপজেলার চাতরী চৌমহনী বাজার মোড়ে দেখা গেছে গাড়ির অপেক্ষায় শতাধিক মানুষ, সবার গন্তব্য চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে। তাদের কেউ ব্যাংকে, কেউ আদালতে, আবার কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোন কাজে। ৫০ মিনিট বা আরো বেশি সময় পরপর একটি বাস এলেই হুড়মুড় করে পড়ছেন মানুষ। অনেকেই এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে মালবাহী ট্রাক, পিকআপে উঠছেন। কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিতে চাইলেও ভাড়া দ্বিগুনে বিপত্তি। গণপরিহনের এ ভোগান্তির চিত্র উপজেলার সরকারহাট, আনোয়ারা সদর, জয়কালীহাট ও বন্দর সেন্টার এলাকার যাত্রীদের প্রতিদিনের। তবে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা ছাড়াও বৃহস্পতি ও শুক্রবার যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে পিএবি সড়ক দিয়ে বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়ার গাড়ি ছাড়াও আনোয়ারার ছাত্তারহাট, তৈলার দ্বীপ ফেরিঘাট, মুরালীঘাট, বরকল ব্রিজ, বটতলী রুস্তমহাট ও রায়পুর ওয়াহেদ আলী চৌধুরী বাজারসহ ৬টি বাস ও জিপ গাড়ির স্টেশন ছিল। সিএনজি অটোরিক্সা চালুর পর জিপ গাড়িতে যাত্রী কমে গেলে এসব গাড়ি যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে তৈলারদ্বীপ ব্রিজ ও বরকল নির্মাণের কারণে চন্দনাইশ ও বাঁশখালী-পেকুয়া থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু হলে আনোয়ারার বটতলী ও ছাত্তার হাট স্টেশন চালু থাকলেও বাকি ৪টি বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে চন্দনাইশ ও বাঁশখালী-পেকুয়া থেকে চলাচলকৃত অধিকাংশ বাস চালকেরা বিরতিহীন বা লাল বোর্ড লিখে এসব বাস আনোয়ারার যাত্রী পরিবহন না করার কারণে আনোয়ারার মানুষকে যাথায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এস আলম স্টিল ফ্যাক্টোরিতে কর্মরত তৌহিদুল আলম জানায়, প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় চাতরী চৌমহীতে বাসের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সিএনজি অটোরিক্সাও ২০ টাকার স্থলে অফিস সময়ে ৪০ টাকা ভাড়া নেয়।
স্কুল শিক্ষিকা নাসরিন সুলতানা নয়ন জানান, প্রতিদিন শাহ আমানত ব্রিজ থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য আনোয়ারায় শত শত নারী-পুরুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করলেও বিরতিহীন ছাড়া লোকাল গাড়ি পাওয়া যায় না। ১ ঘণ্টা পর ১টি গাড়ি আসলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লোকজন। মহিলাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
পিএবি সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন চৌধুরী (ভিপি জাফর) জানান, গত কয়েক বছর আগেও পিএবি সড়ক যানবাহন মালিক সমিতির অধীনে ২ শতাধিক বাস চালু ছিল। নানা কারণে বাস মালিকেরা লোকসানের শিকার হওয়ায় বাসের পরিমান কমতে শুরু করে। এই অবস্থায় বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রী সংকট ও সরকারের বিধি নিষেধের কারণে আরো কিছু বাস কমে যায়। তাছাড়া কিছু বাস মাসিক চুক্তিতে বিভিন্ন করখানায় চলাচল করছে। এ সব কারণে বাস সংখ্যা কমে ৭০-৮০ তে দাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।
আনোয়ারা থানার ওসি এসএম দিদারুল ইসলাম সিকদার জানান, কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কিনা কিংবা জন ভোগান্তি সৃষ্টি করছে কিনা কতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, লোক সংখ্যা যে হারে বাড়ছে পরিবহন ব্যবস্থা সে হারে না বাড়ার কারণে পরিবহন সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। যে সব গাড়ি বিভিন্ন কারখানায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে আছে সেই সব গাড়ি তাদের অফিস কাজের শেষে সড়কে নামানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখব। বিষয়টি বাস মালিক সমিতির সাথে আলাপ করে সংকট দূরকরণের চেষ্ঠা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন