ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন সমগ্র দেশ। ঢেকে গেছে হেমন্তের স্বচ্ছ পরিষ্কার নীল আকাশ। স্বাভাবিক আবহাওয়া উধাও। রাস্তাঘাট সড়ক মহাসড়ক নদীপথে চোখ মেললে দৃষ্টিসীমা কুয়াশায় আটকে যায়। আংশিক মেঘলা আকাশ। আটকে গেছে সূর্যের আলো ও তেজ। এতে করে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকের হিমেল কনকনে হাওয়া কাঁপন তুলছে। যদিও পারদের দাগে তাপমাত্রা তেমন নামেনি। গতকাল মঙ্গলবার প্রায় দিনভর কুয়াশায় ঢাকা থাকে দেশের বেশিরভাগ এলাকা। অনেক জায়গায় সূর্যের দেখা মেলেনি। কিংবা উঁকি দিয়েছে অল্পক্ষণ।
মাঝারি থেকে গাঢ় কুয়াশার সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্প অস্বাভাবিক বেশি হারে রয়েছে। গতকাল সকালে ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার হার ছিল ৯৯ শতাংশ। এমনকি সন্ধ্যায়ও ৮৯ শতাংশ! ঘন কুয়াশা, অত্যধিক হারে জলীয়বাষ্প ও বিক্ষিপ্ত নিচু মেঘের সাথে বাতাসে ভর করেছে ধুলোবালি, ধোঁয়ার মারাত্মক দূষণ।
আবছা আলো-আঁধারে দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে সড়ক মহাসড়ক ও শহর-নগরে। ঘন কুয়াশায় মারাত্মক ধূলোবালির দূষণে নানামুখী জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষজনকে কুয়াশা ও ধুলোবালির সাগর পাড়ি দিতে হয়। লঞ্চ-ফেরিসহ নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়কে যানবাহন চলাচলে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কমেছে গতি। ঘন কুয়াশায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি মালামাল লাইটারিং খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) ঢাকায় ছিল ২১৯। দুপুরে ছিল ৩১৫। সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের বায়ুমান সূচক ২২০। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। শ্বাসকষ্ট-হাঁপানি, সর্দি-কাশি-জ¦র, গলাব্যথা, টনসিল-সাইনাস, ফুসফুসের সমস্যাসহ এতে বিভিন্ন রোগব্যাধির ঝুঁকি রয়েছে। হেমন্ত ঋতুতে স্বচ্ছ নীলাভ আকাশতলে সজীবতার পরিবর্তে অসময়ে গুমোট ও বৈরী আবহাওয়ায় বাড়ছে বিভিন্ন রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধদের অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ২৯ ডিগ্রি সে.। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ২৬.৫ এবং সর্বনিম্ন ১৮.৩ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে যথাক্রমে ২৮.১ এবং ১৭ ডিগ্রি সে.।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা এবং নদ-নদী অববাহিকায় ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
বর্তমানে উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে, যার একটি বর্ধিতাংশ রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায়।
ভোগান্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষ
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়েকদিন থেকে সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। সে সাথে ঘন কুয়াশায় শীতের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাসে জনজীবন অনেকটা থমকে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সব থেকে বেশী ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ। সন্ধ্যায় পর থেকেই কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় রাতে শীতের মাত্রা বেড়ে যায় এবং রাত বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা অন্ধকারে পরিণত হচ্ছে। কয়েক হাত দূরেও দেখা যাচ্ছে না পথের। ভোর বেলা লাল আভা নিয়ে ভেসে উঠা সূর্য যেন মুখ মেলে তাকাতে পারছে না।
গত শুক্রবার সকাল থেকে হঠাৎ করে ঘন কুয়াশায় ডেকে যায় এবং তাপমাত্রা নেমে আসে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আবার দুপুরের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা বাড়তে থাকে এবং তাপমাত্রা কমে আসতে শুরু করে। কুয়াশা এতো বেশী যে যানবাহন গুলো সড়কে দিনের বেলাই হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।
খুব সকালে খেটে খাওয়া মানুষেরা জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। হঠাৎ এই শীতে সাধারণ মানুষ যেন জুবুথুবু হয়ে পড়েছে। একদিকে করোনার থাবায় অর্থনৈতিক সঙ্কট তার উপর প্রচন্ড শীত। শীত নিবারণের জন্য লেপ তোষকের দোকানে ভিড় করছে মানুষ। কৃষকেরা চেষ্টা করছে তাদের গরু-ছাগলকে চটের তৈরী জামা দিয়ে শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে। শীত বাড়ার সাথে পিঠার কদর বেড়ে গেছে। সকাল সন্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাপা-চিতইসহ হরেক রকম পিঠার পসরা নিয়ে বসছে নারী ও পুরুষেরা। উনুনের তাপ নেয়ার পাশাপাশি পিঠাও খাচ্ছেন তারা।
ভোরের দিকে ঘন কুয়াশার সাথে সাথে হিমেল হওয়া যেন শীতের মাত্রা আরও বৃদ্ধি করে,কুয়াশা ও শিশির কণা শীতকে আরো স্থায়ী করে রাখছে। শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এতে করে তারা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে গৃহপালিত পশু লালন পালনে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শীত।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যাক্তিরা বলেন, দুদিন ধরে সারাদিন সূর্য দেখা যায়নি। তাই শীতের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। শীতের কারণে হাত পা কনকন করছে। আমাদের মতো বয়ষ্কদের সমস্যা একটু বেশি। ফজরের সময় চারদিক কুয়াশায় ঢাকা ছিল।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিন জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যেই দুস্থ ও অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রশাসনও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছেন কেননা শীতে করোনার প্রকোপ বেড়েই চলছে। তাই করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সে কারনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে বার বার মাক্স পরিধানের বিষয়ে বলা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন