ঘন কুয়াশার সাথে নিচু মেঘ আর মাত্রাতিরিক্ত হারে জলীয়বাষ্প রয়েছে বাতাসে। এর সঙ্গে ভাসমান ধুলোবালি ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ দিন দিন অসহনীয় অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। কুয়াশা আর ধুলোদ‚ষণের যন্ত্রণায় বিশেষ করে শহর-নগর-শিল্পাঞ্চলে থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। পূর্বাভাস মতে, আজও সারাদেশে থাকবে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা। সোমবার-মঙ্গলবার থেকে কুয়াশার মাত্রা কিছুটা কমতে পারে। এদিকে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও রাতে কমতে শুরু করেছে। গতকাল দেশে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ১২.৬ এবং দিনের সর্বোচ্চ টেকনাফে ২৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২২.৭ এবং সর্বনিম্ন ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমালয়ের হিমেল হাওয়া বইছে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাস তথা হেমন্ত ঋতু শেষ না হতেই দাপট নিয়ে আসছে শীত।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে অর্থাৎ উত্তরাঞ্চলের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। মাঝরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার তেমন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে এরপরের ৫ দিনে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও তেমন বৃষ্টি ঝরেনি। আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টির আবহে গুমোট ভাব রয়েছে উত্তর জনপদের অনেক জেলায়।
গতকাল রাত ৮টায় ঢাকায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) আকুওয়েদার’র পর্যবেক্ষণে ২৩৭। চট্টগ্রামে ১৯৪। ঢাকায় বায়ুমান মাত্রা আইকিউএয়ার’র তথ্য মতে ২২৪ (খুবই অস্বাস্থ্যকর)। বিশ্বের গুরুত্বপ‚র্ণ নগরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণে কিরগিস্তানের পরই ঢাকা দ্বিতীয় অবস্থানে। ঢাকার বায়ু দ‚ষণমাত্রা ক্রমেই বেড়ে গিয়ে আজ রোববার ৩৭৮, সোমবার ২৯৮, মঙ্গলবার ২৫৮ বা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ অবস্থায় দাঁড়াতে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আকুওয়েদার। বায়ুমানের এ বিরূপ অবস্থাটা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতিকর। অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের হার ছিল ৭৯ শতাংশ। সকালে ছিল তা ৯২ শতাংশ। যা মৌসুমের এ সময়ে অস্বাভাবিক বেশিই।
ঘন কুয়াশা, জলীয় বাষ্পের আধিক্য, মেঘের ওপর ভর করে বায়ুদ‚ষণের কারণে অব্যাহত বৈরী আবহাওয়ায় দিনমজুর, কুলি, শ্রমজীবী, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তাছাড়া শ্বাসকষ্ট-হাঁপানি, সর্দি-কাশি, সাইনাস, টনসিল, ফুসফুসের রোগীদের কষ্ট ও ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর, বিমান ও রেলপথে সতর্কতা
সন্ধ্যার পর থেকে রাত, সকাল পেরিয়ে বিকেল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ও জলীয়বাষ্পের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙরে এবং রেলপথে সম্ভাব্য যেকোনে দুর্ঘটনা এড়াতে সার্বিক সতর্কতা ও প্রস্তুতিম‚লক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গোপসাগর উপক‚লে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি মালামাল ওঠানামা, লাইটারিং কার্গো জাহাজে খালাস, ডেলিভারি ও পরিবহন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তাছাড়া বহির্নোঙর থেকে কর্ণফুলী নদীর চ্যানেল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি-বার্থে সিডিউল অনুসারে জাহাজবহরের আসা-যাওয়া বিঘিœত হচ্ছে। জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম ঝুঁকিপ‚র্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপিং কোম্পানি ও এজেন্টগণ চ্যানেলে পাইলটিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। জেটি-বার্থে জাহাজ চলাচলে চট্টগ্রাম বন্দরের পাইলটিং কার্যক্রম এবং টাগবোটগুলো সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। বর্তমানে কুয়াশা ও জোয়ারের অবস্থা দেখে জাহাজের আসা-যাওয়া বজায় রাখা হচ্ছে।
তাছাড়া ঘন কুয়াশায় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে ইমার্জেন্সি সেল গঠিত হয়েছে। এর পাশাপাশি চালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টারসহ পরিবহন বিভাগের কর্মীদের নির্দেশনার আলোকে ট্রেন পরিচালনার আদেশ দিয়েছে রেলওয়ে পরিবহন বিভাগ।
রাতে প্রতিটি আপ ও ডাউন ট্রেনের ইঞ্জিনে দায়িত্ব পালন করছেন একজন করে সিনিয়র চালক। প্রতিটি স্টেশনে দেওয়া হয়েছে ৩ জন করে স্টেশন মাস্টার। রাতে ট্রেন চলাচল নিরাপদ করতে পাহাড়তলী কন্ট্রোলে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোলারদের সঙ্গে থাকবেন একজন করে সহকারি পরিবহন কর্মকর্তা। রাতে দু’দিক থেকে আসা ট্রেনের মুখোমুখি ক্রসিং পরিহার করার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এছাড়া প্রতিটি শিফটে অতিরিক্ত জনবল নিয়োজিত করাসহ সার্বক্ষণিক সমন্বয় ও সতর্কতাম‚লক ব্যবস্থাদি নেয়া হয়েছে রেলওয়ে প‚র্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে।
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল সকালে দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। বেশ কিছুক্ষণ আকাশে চক্কর দিয়ে চট্টগ্রামের কুয়াশাঘেরা আকাশপথ এড়িয়ে পরে ফ্লাইটটি সিলেটে অবতরণ করে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে বিমানের দুবাই থেকে আসা ফ্লাইটে দুই শতাধিক যাত্রী ছিলেন। কুয়াশার কারণে চট্টগ্রামে অপেক্ষমাণ তাদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। তবে সিলেটে নিরাপদে অবতরণের খবরে ফিরে স্বস্তি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন