শীত বাড়ছে। বাড়ছে কুয়াশার ঘনঘটা। নদী, সড়ক-মহাসড়ক ও রেললাইন ঢেকে গেছে কুয়াশার আবরণে। এমনকি আকাশপথও কুয়াশার চাদরে ঢাকা। মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল। নৌপথেও একই অবস্থা। রাতে লঞ্চ চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। দিনের আলোতেও আরিচায় চরে আটকে যাচ্ছে ফেরি। আকাশপথে বিমান চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। গতকাল শনিবার ঘন কুয়াশায় চট্টগ্রামে নামতে না পেরে একটি বিমান সিলেটে অবতরণ করেছে। অন্যদিকে, রেললাইনও ঘন কুয়াশার আবরণে ঢেকে আছে। চালকরা ট্রেনের সামনে ঠিকভাবে দেখতে পারছেন না।
এমনকি সিগন্যালও দেখা যাচ্ছে না। চালকরা জানান, রেললাইনের দুপাশেও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এতে করে নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাতে প্রতিটি ট্রেনই সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। এসব কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়েই গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে সাধারণ যাত্রী ও চালকরা। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩৭ টি জেলার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়ক দিয়ে। আর এই সড়কগুলো বিকেল থেকেই ঢাকা শুরু হয় কুয়াশায়। সকালে কুয়াশার ঘনত্ব আরও বেড়ে যায়। এতে দুর্ঘটনার আতঙ্ক নিয়েই চালক চালাতে থাকে গাড়ি। যাত্রীরাও আতঙ্কে ঘাপটি মেরে বসে থাকে সিটেই।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, গতকাল সকালে সাভারের ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশার চাদরে মোড়া ছিল মহাসড়কসহ পুরো এলাকা। সড়কে সামনে হালকা দেখা গেলেও আনুমানিক ১০ মিটার পরেই কুয়াশায় হারিয়ে যায় সড়ক। এতে চরম আতঙ্ক উৎকণ্ঠা নিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকরা। যাত্রীরাও রয়েছেন ভয়ে। উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের চালক আশরাফুল বলেন, গাড়ি চালাতে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। কুয়াশার কারণে খুব বেশি দূর দেখা যাচ্ছে না। কাজ হচ্ছে না ফগলাইটের আলোয়। তাই আস্তে আস্তে ১ ঘণ্টার পথ দুই ঘণ্টায় যেতে হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী যাওয়া সৌদিয়া পরিবহনের চালক হান্নানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এবার একটু আগেভাগেই জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশাও রেকর্ড ভাঙতে পারে এবার। এই কুয়াশায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে যাত্রীও কমে গেছে। শীতে আমাদের মতো গাড়ি চালকের ক্ষতিই হবে বেশি। করোনার থাবার ক্ষত না শুকাতেই আবার বাগড়া দিচ্ছে শীত। এরকম কয়েক দিন থাকলে সন্তানদের একটা শীতের পোশাকও কিনে দিতে পারবো না।
আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবহনের যাত্রী আয়েশা বলেন, কর্মজীবী মানুষ হিসেবে বাসায় বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। জীবিকার তাগিদে জীবন শঙ্কা থাকলেও বেরিয়ে পড়তে হয় ঘর থেকে। সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে আগে বের হতে হয়। কুয়াশায় সড়কে গাড়ির গতি কমিয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। তাই সঠিক সময়ে পৌঁছতে বাসা থেকে ১ ঘণ্টা আগেই বের হতে হলো। জীবন ও জীবিকার তাগিদে অতিরিক্ত কুয়াশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলছি শীতের পথ।
বগুড়া থেকে আসা শাহ-ফতেহ আলী গাড়ির যাত্রী তানিয়া বলেন, আমি কাল রাতে গাড়িতে উঠেছি। বগুড়া থেকে বাইপাইল আসতে স্বাভাবিক সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। আজ তো প্রায় ৭ ঘণ্টা লেগেছে। চালক অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় বেঁচে গেছি দুর্ঘটনা থেকে। শীত যতো দিন থাকবে আর রাতে কখনও গাড়িতে উঠবো না। খুব ভয় নিয়ে বাইপাইল পৌঁছলাম।
পঞ্চগড় থেকে ঢাকামুখি একতা এক্সপ্রেসের চালক ইনকিলাবকে জানান, রাতে ঘন কুয়াশায় রেললাইনও ঠিকমতো দেখা যায় না। আন্দাজের উপর ট্রেন চালাতে হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনের আগে আউটার সিগন্যাল লাইটও ৫০ গজ দূরে থেকে দেখা যায় না। সে কারণে ট্রেনের গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে চলতে হচ্ছে। এতে করে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদত আলী ইনকিলাবকে বলেন, কুয়াশার কারণে প্রতিটি ট্রেনেরই গতি কমিয়ে চলতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের ট্রেনগুলো সাবধানতা অবলম্বন করে গতি কমিয়ে চলছে। তিনি বলেন, রাতে কুয়াশা বেশি হচ্ছে। একেক এলাকায় একেক রকম কুয়াশা। সে কারণেই আমরা সাবধানে ট্রেন চালাতে বলেছি। এতে সিডিউলে বিপর্যয় ঘটছে। তবে সেটা খুব বেশি না। তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
অন্যদিকে, কুয়াশার কারণে আকাশ পথে বিমান চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে একটি বিমান কুয়াশার কারণে চট্টগ্রাম নামতে পারেনি। শেষে সেটি সিলেটে গিয়ে নেমেছে। লঞ্চ চালকরা জানান, কুয়াশায় রাতে মাঝ নদীতে কিছুই দেখা যায় না। নদীর কিনারে সার্চ লাইট দিয়ে কিছুই দেখা যায় না। এমতবস্থায় খুবই সতর্কতার সাথে লঞ্চ চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, আরিচায় কুয়াশার কারণে ফেরি চরে আটকে যাওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন