শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মেঘ-কুয়াশা-জলীয়বাষ্পে সারা দেশে বায়ুদূষণ তীব্র

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঘন কুয়াশায় ঢাকা শহর-নগর, গ্রাম-জনপদ। সেই সাথে বাতাসে অস্বাভাবিক বেশিহারে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি। আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন। নিচু মেঘ, কুয়াশা ও জলীয়বাষ্পের উপর ভাসমান ধুলোবালি ধোঁয়া ভর করে সারাদেশে বায়ুদূষণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। অগ্রহায়ণ তথা হেমন্তের শেষ দিকে এসে শুষ্ক অথচ বিরূপ আবহাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে ধোঁয়াশা অবস্থা আরও প্রায় এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক নিচের অবস্থানে থাকলেও দিনের বেলায় পারদ খুবই কমে গেছে। দেশের বেশিরভাগ জেলায় দিনের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। ঢাকায় ২১.৬ ডিগ্রি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, সারাদেশে মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশার ঘোর দুপুরের পরেও পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। আসছে সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে থাকবে।

উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলসহ দেশের সর্বত্রই মাঝারি ঘন কুয়াশা, জলীয়বাষ্পের আধিক্যসহ বৈরী আবহাওয়ায় নৌ ও সড়কপথে যোগাযোগ, পরিবহনসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গতি থমকে গেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট-দুর্ভোগে পড়েছেন দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমিক-কর্মজীবী-দিন মজুরগণ। সূর্যালোক ও রোদের তেজ উবে গেছে। উত্তর-পশ্চিম দিকের কনকনে হিমেল হাওয়ায় কাবু উত্তর জনপদের মানুষ।

গতকাল বুধবার রাত ৮ টায় ঢাকার বায়ু মানের সূচক (একিউআই) ছিল ২৯৯। চট্টগ্রামে ২৭০। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শ্বাসকষ্ট-হাঁপানি, সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ¦র, গলাব্যথা, সাইনাস, ফুসফুসের সমস্যা বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ু দূষণে শীতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের হার ছিল ৮৭ শতাংশ। সকালে তা ৯৯ শতাংশ!

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটে ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ পারদ নীলফামারী জেলার ডিমলায় ২৭.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২১.৬ এবং সর্বনিম্ন ১৮.২ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৬ এবং সর্বনিম্ন ১৭.৫ ডিগ্রি সে.।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায়।

চলতি সপ্তাহের (৮ থেকে ১৪ ডিসেম্বর) কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে কৃষি আবহাওয়া মহাশাখার উপ-পরিচালক কাওসার পারভীন জানান, এ সপ্তাহে দৈনিক উজ্জ্বল সূর্যকিরণ কাল ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে থাকতে পারে। এ সময়ে সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

আমাদের ভ্রাম্যমান সংবাদাতা কামাল আতাতুর্ক মিসেল জানান, উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও কুয়াশায় পঞ্চগড়ে বাড়ছে শীত। দিনের তুলনায় রাতে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। রাতসহ দিনের বেশিরভাগ সময় কুয়াশার সাদা চাদরে ঢেকে থাকছে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন উপজেলাসহ অধিকাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চল। গতকাল বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সড়কে যানবাহনে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। দিনের বেলা আবহাওয়া কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত থাকছে শীত। আর এ সময়ে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় নিম্ন আয়ের লোকজনকে রাস্তার পাশে খড় কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রির্পোটার জানান, সকাল থেকেই সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শীতের মৌসুম শুরুর পর সবচেয়ে বেশি কুয়াশা দেখা গেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশার সঙ্গে রাতে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা অন্ধকারে পরিণত হচ্ছে। কয়েক হাত দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। সকালে খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রচ- কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু কাজ না পাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। কৃষকরা চেষ্টা করছে তাদের গরু-ছাগলকে চটের তৈরি জামা দিয়ে শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে। শীত বাড়ার সঙ্গে পিঠার কদর বেড়ে গেছে। সকাল-সন্ধ্যা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাপা-চিতইসহ হরেক রকম পিঠার পসরা নিয়ে বসছে নারী ও পুরুষ।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে মাঝে মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এতে করে সেতুর উপর আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক ও সিরাজগঞ্জের সেতু পশ্চিম সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়ে যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা কিছুটা কমলেও যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে সড়ক দুটিতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন