দাদা টাকা দেন। না হলে সব নিয়ে যাব। টাকা না দিলে আমরা খাব কি? এই বলে রিকশায় বসা ৫০ উর্ধ্ব এক ব্যক্তির শার্টের পকেটে হাত দিয়ে বেশ কিছু টাকা নিয়ে যায় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। গত শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই ব্যক্তি কিছু বুঝে উঠার আগেই অনেকদূর চলে যায় তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন। রাজধানীতে বিভিন্ন সড়কে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা আদায় এবং হয়রানির শত শত ঘটনার এটি একটি। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা সময়ে পদক্ষেপ নেয়া হলেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা বা হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। দিন দিন বাড়ছে হিজড়াদের চাঁদাবাজিসহ অত্যাচার।
অভিযোগ রয়েছে, এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক নিকঠস্থ থানায় বলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। অনেক সময় তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যের সাথে সমঝোতা করার পরামর্শও দেন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মিরপুরের ১০নং গোল চত্বর, আগারগাঁও মোড়, বিজয় স্মরণী, কারওয়ান বাজার, উত্তরার জসীম উদ্দীন মোড় এবং আজমপুর সিগন্যাল, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সিগনাল পয়েন্টে চলছে এমন চাঁদাবাজি। রিকশা, সিএনজি কিংবা প্রাইভেট কার থামিয়ে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। আর চলন্ত বাসে উঠে যাত্রী প্রতি টাকা উঠানো হয়। তাদের চাঁদার পরিমাণ ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়। টাকা দিতে না চাইলে নগরবাসীকে অপমাণ ও লাঞ্ছিত করা হয়। কখনও কখনও শারীরিকভাবেও আঘাত করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালিকবাগ চৌধুরীপাড়ার একজন বাসিন্দা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সম্প্রতি সময়ে তার এক আত্মীয় ঢাকায় আসেন গর্ভবর্তী স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। এ সময় ওই আত্মীয়ের সমস্যা থাকায় সিজারে সন্তান নেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বাসায় নবজাতককে আনার পর তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের ৭-৮ জনের একটি দল আসে এবং ৫হাজার টাকা দাবি করে। এ সময় তিনি টাকা না দিয়ে তাদের চলে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু ওই সদস্যরা নানাভাবে হুমকি ও গালাগাল করে। এক পর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়ে রামপুরা থানা পুলিশকে অবহিত করেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলেন। এসব দেখা পুলিশের কাজ নয়। পরে তিনি ২হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করেন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যের। অন্যদিকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় হিজারাদের চাঁদাবাজি করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রিকশা থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা আদায় করছে। এ সময় কোন রিকশারোহী ১০ টাকা বা ২০ টাকা দেয়ার চেষ্টা করলে ওই টাকা নিয়েও গালাগাল করতে দেখা গেছে। ট্টাফিক পুলিশের চোখের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কোন প্রতিবাদ বা প্রতিকারের উদ্যোগ দেখা যায়নি।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকজন হিজড়া দলবদ্ধভাবে দোকানগুলোতে প্রবেশ করছে। প্রতিটি দোকন থেকে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছে। তবে ১ হাজার টাকার কম দিলে ব্যবসায়ীদের সাথে খারাপ আচরণ করতেও দেখা গেছে।
আবুল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, হিজড়ারা দল বেধে প্রতি সপ্তাহে দোকনগুলোতে হানা দেয়। তাদের টাকা না দিলে অনেক সময় ভাঙচুর করে। এছাড়াও তাদের সাথে কথা বললেও উল্টো হুমকি দেয়। তাই তাদের কাছে ব্যবসায়ীরা অনেকটা অসহায়। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হাফিজ আক্তার গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হিজড়ারা চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়গুলো নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। এদের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ অনেক দিন ধরেই। হিজড়াদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখতে পুনঃবাসনসহ সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন,
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের উৎপাত ও হয়রানি বন্ধে স¤প্রতি মিরপুরের পল্লবী এলাকা থেকে পুলিশ সদরদফতরের ফেসবুক পেইজে একটি বার্তা পাঠানো হয়। এতে প্রেরক উল্লেখ করেন, তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন সদস্য নবজাতক শিশু ও ঈদসহ পারিবারিক, ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে দুই/তিন হাজার টাকা চাঁদা দাবি ও আদায় করে। কেউ দিতে না চাইলে বা দেয়ার সামর্থ্য না থাকলে তার সঙ্গে অত্যন্ত অশোভন আচরণ করে। বার্তা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পল্লবী থানাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয় পুলিশ সদরদফতর। হিজড়াদের পরে থানায় ডেকে বলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে জনস্বার্থবিরোধী যেকোনো কার্যক্রমের অভিযোগ এলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন