টোকিও অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন গতপরশু হলেও খেলা শুরু হয়েছে গত বুধবার থেকেই। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দর্শকশূন্য গ্যালারির সামনে বিশ্বসেরা অ্যাথলিটদের পদচারণায় মুখর টোকিওর অলিম্পিক ভিলেজ।
এরমধ্যে গতকাল বাড়তি নজর কাড়ল ১২ বছরের এক তারকা। টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে অস্ট্রিয়ার জিয়া লিউয়ের বিপক্ষে লড়ছিল সিরিয়ার হিন্দ জাজা। খেলা দিয়ে তখনই আকর্ষণ টেনে নেয় নিজের দিকে।
টোকিওর বিশ্বমঞ্চে জাজার পৌঁছানোর গল্পটা সহজ ছিল না। ১২ বছরের জাজার জন্ম সিরিয়ার হামা শহরে। খেলোয়াড়দের পরিবারে জন্ম নেওয়া জাজা মাত্র ৫ বছর বয়সে হাতেখড়ি নেয় টেবিল টেনিসে। কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই স্থানীয় ক্লাবে চালিয়ে যেতে থাকে চর্চা। বয়সভিত্তিক সবগুলো প্রতিযোগিতায় শিরোপা জেতে এই খুদে চ্যাম্পিয়ন।
২০০৯ সালে হামা শহরে জন্ম জাজার। ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ, যা চলছে এখনও। সরাসরি চার সেটে হারলেও কোর্টে জাজার প্রাণবন্ত উপস্থিতি মুগ্ধ করেছে সবাইকে। ১১-৪, ১১-৯, ১১-৩, ১১-৫ সেটে ম্যাচ জয়ের পর ৩৯ বছরের সাবেক ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন লিউ শুভেচ্ছা জানান তার খুদে প্রতিপক্ষকে।
অলিম্পিক ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাজা বলেন, ‘অলিম্পিকে খেলাটাই বড় ব্যাপার ছিল। আমার কাছ থেকে জয়ের প্রত্যাশা ছিল না কারও। সবাই চেয়েছে আমি যেন ভালো খেলি। হার থেকেও শিখেছি অনেক। আশা করি পরের অলিম্পিকে ভালো কিছু করব।’
হ্যারি পটারের দারুণ ভক্ত জাজা ভবিষ্যতে একজন ফার্মাসিস্ট বা আইনজীবী হতে চায়। তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন টেবিল টেনিস কিংবদন্তি নিং ড্যাংয়ের খেলা খুব ভালো লাগে তার। পাঁচ বছর বয়স থেকেই নিজের চেয়ে বয়সে অনেক বড়দের হারিয়ে আসা জাজা হামায় নিজের অনুশীলন ও অলিম্পিকস প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, ‘সিরিয়ায় যেভাবে অনুশীলন করেছি সেটা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমি অন্য একটা ফ্লোরে অনুশীলন করতে চেয়েছি। আমাদের ক্লাবে এ ধরনের টেবিল ছিলই না।’
চারদিকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা ও জীবনযুদ্ধের অবসাদের মাঝেও আশাবাদী জাজা। ১২ বছর বয়স হলেও নিজ দেশের বাস্তবতা ঠিকই বোঝে। অলিম্পিকের মতো আসর সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে আশা দেখাতে পারে মনে করেন এ খুদে তারকা, ‘এটা খুবই দারুণ ব্যাপার যে আমরা সব বাধা কাটিয়ে খেলতে পারছি। আমরা দেখাতে চাই যে যুদ্ধ চলতে থাকলেও দেশের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে।’
এবারের অলিম্পিকের মার্চ পাস্টে জাজার হাতে ছিল সিরিয়ার পতাকা। অলিম্পিক ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়লেও সর্বকনিষ্ঠ অলিম্পিয়ানের রেকর্ড গড়তে পারেননি তিনি। অলিম্পিকস রেকর্ড অনুযায়ী সর্বকনিষ্ঠ অলিম্পিক অ্যাথলিট গ্রিসের ডিমিট্রিওস লাউন্ড্রাস। ১৮৯৬ সালের এথেন্স অলিম্পিকসে জিমন্যাস্টিকসে ব্রোঞ্জ পাওয়া লাউন্ড্রাসের বয়স ছিল মাত্র ১০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন