শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

১১৩ বছরে প্রথমবার স্বর্ণ ভাগাভাগি তাদের

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

নির্ধারিত নিয়মে খেলায় সাম্যাবস্থা শেষ না হলে খেলা গড়াবে টাইব্রেকারে, বিশ্বের প্রায় সব খেলাতেই তো নিয়মটা এমন। হাইজাম্পেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কাতারের মুতাজ ঈসা বারসিম আর ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি ব্যতিক্রম এক নজিরই স্থাপন করলেন। টাইব্রেকারের প্রস্তাব নাকচ করে সোনা নিলেন ভাগাভাগি করে। তাতেই দু’জনের বন্ধুত্বটা ঠাঁই করে নিল ইতিহাসের পাতায়। অলিম্পিকের ১১৩ বছরের ইতিহাসে যে এমন কিছু দেখেনি কেউ।
মুতাজ, জিয়ানমার্কো তো বটেই, বেলারুশের ম্যাক্সিম নেদাসেকাউও ২.৩৭ মিটার পর্যন্ত লাফিয়েছিলেন সমান সমানই। তিনজনই আবার বিশ্বরেকর্ড ২.৩৯ মিটারে লাফাতে গিয়ে গেলেন আটকে। তবে শেষতক শীর্ষে থাকলেন দু’জন, ম্যাক্সিম ছিটকে গেলেন আগের লড়াইয়ের মাপকাঠিতে। ফলে জিয়ানমার্কো আর মুতাজের কাছে নিয়ে আসা হলো টাইব্রেকার ‘জাম্প অফ’-এর প্রস্তাব। সেখানেই ঘটল ঘটনাটা। মুতাজ জিজ্ঞেস করলেন, ‘দুটো সোনার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?’ অফিসিয়ালের উত্তর, সেটা সম্ভব। মুতাজ মাথা ওপর নিচ করলেন। জিয়ানমার্কো শুধু সায়ই দিলেন না, মুতাজের হাতে হাত মেলালেন, তাকে গিয়ে জড়িয়েই ধরলেন, দু’বার গড়াগড়ি খেলেন, চিৎকারও করলেন, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কী হয়েছে এটা। বিশেষ করে সোনাটা যখন একজন বন্ধুর সঙ্গে ভাগাভাগি করছি, তখন বিষয়টার মাহাত্ম্য বেড়ে যায় আরও।’ প্রতিদ্ব›দ্বীর মতো অতোটা আবেগ ঘিরে ধরেনি মুতাজকে। কিন্তু অলিম্পিক পদকের মাহাত্ম্যটা বোঝেন কাতারি এই অ্যাথলেট, ‘আমার কাছে এখানে আসাটা, এখানের পারফর্ম্যান্সটার পর মনে হয়েছে আমি এই সোনা জেতার যোগ্য। সেও এমন কিছুই করেছে, আর তাই আমিও জানি, সে কম যোগ্য নয়।’
এমন ঘটনা ঢুকে গেছে অলিম্পিক ইতিহাসেরই সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ঘটনার ছোট্ট তালিকাটায়। সামাজিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগমাধ্যমেও বাহবা পাচ্ছে বেশ।
মুতাজ আর জিয়ানমার্কোর দু’জনের বন্ধুত্বটা অবশ্য টোকিওতে হয়নি। হয়েছে আরও আগে। আগের অলিম্পিকের যোগাড়যন্ত্র যখন শেষ করে ফেলেছেন, এরপরই গোড়ালি ভেঙে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন জিয়ানমার্কো। পরের ডায়মন্ড লিগে যখন ফিরলেন, তখনো ধুঁকছিলেন, ভাবছিলেন সরে যাওয়ার কথাও। তখন এই মুতাজের অনুপ্রেরণাই তো সাহস যুগিয়েছিল তার মনে। দেখিয়েছিল অলিম্পিকের আশা। ভাঙা পায়ে লাগানো সেই প্লাস্টারের গায়ে লিখে রেখেছিলেন টোকিও অলিম্পিকের কথা।
মুতাজ নিজেও তো কম ভোগেননি, নিজে চোটে পড়েছেন রিও অলিম্পিকের পর থেকে। এরপর কোনোক্রমে এসেছেন টোকিওতে। সেই মুতাজ আর সেই জিয়ানমার্কো, দু’জনের আক্ষেপই শেষ হলো এবার। দু’জনের গল্পটা কি এর চেয়ে মধুর হতে পারত আদৌ?

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন