টোকিও অলিম্পিক ২০২০ ছেলেদের ফুটবলের সোনা কার ঘরে যাচ্ছে? ব্রাজিলের না স্পেনের? এ নিয়ে ভাবনায় সময় কাটাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা। অলিম্পিকের ইতিহাসে ব্রাজিল-স্পেনের ঘরে একবার করেই উঠেছে শিরোপা। আজ যে কোনো এক দলের হাতেই উঠে যাবে অলিম্পিক ফুটবলে নিজেদের দ্বিতীয় সোনা। জাপানের ইয়োকোহামা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মুখোমুখি হবে দু’দল।
অলিম্পিক ফুটবলে সোনা ছিল ব্রাজিলের এক অন্তহীন আক্ষেপ! যদিও গত রিও অলিম্পিকে নেইমারের হাত ধরে প্রথম সোনার মুকুট পড়েছিল তারা। পাঁচবার বিশ্বকাপ, আটবার কোপা আমেরিকা, চারবার কনফেডারেশন কাপ ও পাঁচবার অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছে সেলেসাওরা। তাই অলিম্পিক ফুটবলে এক সোনায় খুশি থাকার কথা নয় দেশটির।
১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকে ব্রাজিল ফাইনাল খেললেও কাক্সিক্ষত সোনা ধরা দেয়নি। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ফেবারিট হয়েও ব্রাজিল হেরে গিয়েছিল মেক্সিকোর কাছে। কিন্তু গতবার আর কেউ আটকে রাখতে পারেনি দলটিকে। জার্মানিকে হারিয়ে স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলে নেইমাররা। অন্যদিকে স্পেন সেই ১৯৯২ সালে সোনা জয়ের পর ২০০০ সালেও চলে গিয়েছিল খুব কাছে। কিন্তু ক্যামেরুনের কাছে হেরে রুপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দলটিকে।
এই ফাইনালে দু’দলের লড়াইয়ের পাশাপাশি ভিন্ন ট্যাকটিক্সেরও লড়াই হবে। স্পেনের খেলার যে ধরন তার নাম ‘টিকিটাকা’। স্প্যানিস সাপোর্টারদের কাছে টিকিটাকাই যেন টোটাল ফুটবল। পাসিং গেম যারা পছন্দ করেন তাদের কাছেও এ খেলার ধরন বেশ জনপ্রিয়। এভাবে খেলেই স্পেন সেরা দল হয়েছিল। তবে এখন মনে হচ্ছে এ খেলার যুগও এখন শেষ হয়ে আসছে এবং সে জায়গা খুব সম্ভব এখন ‘প্রেসিং’ ফুটবলের হাতে। যে খেলাটা খেলে থাকে ব্রাজিল।
২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপের ফাইনালে ব্রাজিল ও স্পেনের খেলা যারা দেখেছেন তাদের কাছে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট! ৩ গোল করে ব্রাজিল কিভাবে স্পেনকে উড়িয়ে দিয়েছিল! প্রেসিং ফুটবল খুব পুরানো ট্যাকটিকস হলেও একসময় এ ধরনের ফুটবল খুব একটা দেখা যেত না। তবে বর্তমানে পাসিং ফুটবলকে আটকানোর জন্য এর চেয়ে যে ভালো কোন ট্যাকটিকস নেই!
এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এ ট্যাকটিকসে একজন স্ট্রাইকারও ডিফেন্ডারের মতো আচরন করে। যেভাবেই হোক বল পা থেকে ছিনিয়ে আনতেই হবে! এবং বল পায়ে আসা মাত্রই পাল্টা আক্রমন! তখন যেন একজন ডিফেন্ডারও স্ট্রাইকার হয়ে যায়। তবে এমন ভাবার সুযোগ নেই, প্রেসিং ফুটবল কতই না সহজ! তবে এ ধারনা ভুল! এ ট্যাকটিকস অনুসরন করতে গেলে প্রচুর শারীরিক এবং মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয় এবং খুব সতর্ক থাকতে হয় যেন ভুল যায়গায় ফাউল না হয়ে যায়!
২০১৩ সালে কনফেডারেশন কাপে ব্যাজিলের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হারের লজ্জায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল শিরোপার। অলিম্পিকের ফাইনালে আজ স্প্যানিসদের মনে তাই নিশ্চিতভাবেই জ্বলে উঠবে প্রতিশোধের আগুন।
সব মিলিয়ে টোকিও অলিম্পিকের সোনার লড়াইটা হতে যাচ্ছে দুই সেয়ানার যুদ্ধ। যেখানে একদিকে লাতিন ফুটবলের কাব্যিক ছন্দের প্রতিদ্ব›দ্বী স্পেনের ‘টিকিটাকা’ ফুটবল। জয় শেষ পর্যন্ত যাদেরই হোক, ম্যাচটি যে উপভোগ্য হয়ে উঠবে, সেটা আশা করাই যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন