বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বন্যার পানি নামতেই উত্তরে চাষাবাদের ধুম!

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৩৬ পিএম

শরতের মাঝামাঝি সময়ে প্রত্যাশিতভাবেই থেমে গেছে বৃষ্টির ঘনঘটা । নেই উজান থেকে আসা ভারতীয় পানির ঢল। ফলে কমতে শুরু করেছে উত্তরের ছোটবড় সব নদনদীর পানি । বড় নদনদীর মধ্যে ব্রম্বপুত্র, তিস্তা, ধরলা,বাঙালী করতোয়া নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে।
জেগে উঠছে চর । জেগে উঠছে নদী তীরবর্তি পলি পড়া ফসলি জমি । সেই সাথে জেগে উঠছে উত্তরের চাষিরা। এক মুহুর্ত অপেক্ষায় না থেকে , সরকারি প্রনোদনার দিকে না তাকিয়ে , তারা লাঙল -জোয়াল , ট্রাক্টর নিয়ে নেমে পড়েছে ফসলি জমিতে । রীতিমত শুরু হয়েছে চাষাবাদের ধুম !
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , উত্তরের কুড়িগাম , নীলফামারি থেকে শুরু করে গাইবান্ধা , বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জের নলকা পর্যন্ত এলকায় ব্রম্ভপুত্র যমুনা অববাহিকায় পলি পড়া নিচু জমিতে লাগানো হচ্ছে রোপা আমন, গাইঞ্জা এবং বোনা আমন প্রজাতির ধান ।
তিস্তা – - ধরলার জেগে ওঠা চরে লাগানো হচ্ছে শীত মওশুমের আগাম জাতের সবজী ও বাদাম । পাবনা , সিরাজগঞ্জ , নাটোরের চলনবিল এলাকায় বন্যা সহায়ক বিশেষ প্রজাতির ধান চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে । এই ধানের বৈশিষ্ট হল কোন কারনে জমিতে পানি প্রবেশ করলে পানি যত বাড়ে পানির সাথে পাল্লা দিয়ে ধানের গাছও তত বাড়ে । ফলে চাষিদের বন্যা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে হয়না । চলন বিল অঞ্চলের চাষিরা প্রায় দেড় দশক ধরে আমন, আউশ ও বোরো মওশুমে ধান উৎপাদনে বিরাট ভুমিকা রেখে চলেছে ।
চলতি বছরে সিংড়া অঞ্চলে কিছু এনজিওর পৃষ্টপোষকতায় চাষিরা গ্রিন হাউজ তৈরি করে সারা বছর শীতকালীন সবজী টমোটো / গাজর ইত্যাদী উৎপাদন করছে । নাটোরের সিংড়া এবং বগুড়ার নন্দীগ্রামের অংবিশেষে বর্তমানে বন্যা পরবর্তি ফসল উৎপাদনে বিম্ময়কর অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে ।
শনিবার বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি /ভান্ডার বাড়ি গ্রামে যমুনা তীরের প্রান্তিক চাষি জিয়াউল আলম জানান, পানি নাইমা গেছেগা, তাই দেরি করিন্যাই , মাসকালাই ব্যুনা দিসি । বাকিডা আল্লাহ ভরসা ।’
সরকারি কৃষি প্রনোদনার ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে বলেন , ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেম্বার নাম তো লিস্টি করসে । কিসুতো পামু । কিন্তু কবে পামু সময় নস্ট কর‌্যা লাভ কি ?
আসলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং চাষি পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেউই আর ফসল চাষে সময় ক্ষেপন করতে রাজি নয় । বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট উপজেলা প্রশাসনে খবর নিয়ে জানা গেছে । বন্যা পরবর্তি কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছে । বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে চাষিরা যাতে নতুন করে আমন সহ মওশুমি ফসল সহ আগাম শীতকালীন সবজি চাষে মনোযোগি হতে পারে তার সব ব্যবস্থাই রয়েছে।
বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপÍরের একটি হিসেবে দেখা গেছে , এখন প্রতিবছর বগুড়ার যমুনার চরাঞ্চলেই প্রতিবছর ৮শ কোটি টাকার পাট, আখ,ধান, গম, ভুট্টা ,ডাইল, বাদাম এবং কাউন ও মরিচের উৎপাদন হয় । এর অর্ধেকই হয় মুলত বন্যা পরবর্তি শরতকালীন সময়ে । কৃষি বিভাগের মতে এক দশক আগেও এই অঞ্চলে কৃষির এই চিত্র ছিলনা । অতিতে দেখাগেছে চাষিরা বন্যা পরবর্তি সময়ে কৃষি প্রনোদনার অর্থ ও ফসলের বীজ জমিতে না লােিগয়ে অলস সময় পার করতো । এখন বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎপাদিত ফসল সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকায় চাষিরা এখন প্রনোদনার আশায় বসে থাকেনা উৎপাদক চাষিরা। তারা সবসময় এডভান্স চিন্তা করে যে কোন মওশুমি ফসলের আগাম উৎপাদনে আগ্রহী হয বেশি বলে জানায় বগুড়ার কৃষি বিভাগ।
এদিকে শনিবার বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় , তাদের মতে চলতি বছর আর কোন বন্যার সতর্কবার্তা নেই । গরমের কারনে হিমালয়ে বরফগলা পানির প্রবাহ বা শরতের শেষে দৃয়েকদফা ভারি বর্ষন হলেও ফষলহানির মতো বন্যার আশংকা তেমন নেই । এটা উত্তরের কৃষির জন্য সুখবর বলেই মনে করছেন তারা ।
এদিকে চলতি বছরে আলুর নিয়ে বিপুল মজুদ নিয়ে হিমাগার মালিক , প্রান্তিক আলু চাষি এবং মওশুমি মজুদদাররা বিপাকে পড়লেও অক্টোবর নাগাদ বীজ আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের হলে আলু নিয়ে সৃষ্ট সংকটের কিছুটা হলেও সুরাহা হবে। ইতোমধ্যেই বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চল , জয়পুরহাট, নীলফামারী এবং বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ইত্যাদীর চাষাবাদ চলছে । এই সমস্ত জমির উৎপাদন ৪০ থেকে ৬০ দিন শেষ হলেই ওই জমিতেই লাগানো হবে আগুড় আলু । ওই আলুও মোটামুটি ৬০/৭০ দিন পরই জমি থেকে তুলে নবান্নের বাজার ধরা হবে । গত কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে নবান্নের বাজারে নতুন আলুর সর্বনি¤œ দর থাকে ২০০ টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন