গোপালগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবহমান প্রাচীনতম নদী মধুমতি। প্রকৃতির পরিবর্তনে নদীর নাব্যতা হারিয়ে গেলেও বর্ষা মৌসুম এখনও পুরানো অভ্যাসে ফুসে ওঠে নদী টি। বর্ষার পানি নামতেই নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের ফসলী জমি, বসত বাড়ি, গাছ পালা ও রাস্তা-ঘাট। গবাদি পশু পাখি নিয়ে খোলা আকাশের নীচে হতাশায় বসবাস করছে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। নদী ভাঙ্গনে আশ্রয়হীন পরিবারের বাস স্থান ও ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
গোপালগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে মধুমতি নদী। এটি আবার কখনও ভয়াবহ রুপ ধারন করে ভাঙ্গনে গ্রাস করে নেয় নদীর তীর বর্তি মানুষের সর্বস্ব। একসময় এটি ছিল খর¯্রােত নদী। যুগ যুগ ধরে এই নদীতে সর্বশান্ত হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার অসংখ্য জমি যায়গা,বসত বাড়ি, স্কুল কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গাছ পালা, রাস্তা-ঘাটসহ আরো অনেক কিছু। এলকাবাসী জানায়, এবছর বণ্যার পানি তুলনামূলক অন্যান্য বছর থেকে বেশী দেখা দেয়। প্লাবিত স্থান থেকে বণ্যার পানি নামতে শুরু করায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি এলাকায় মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এ ক’দিনে ভাঙ্গনের কবলে কমপক্ষে ১৭টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে এলাকাবাসী দাবী করছেন। এছাড়া ভাঙ্গনে অসংখ্য গাছ পালাসহ ফসলি জমিও বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে। প্রতিদিনই কম বেশী ওই এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন এলাকার মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তারা। বসত ভিটা হারিয়ে গবাদি পশু পাখি নিয়ে রাস্তার পাশের্^ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে অনেকে। হঠাৎ করে মধুমতি নদীর ভাঙন যেন এলাকার মানুষের জীবন চিত্র পাল্টে দিয়েছে। অনেকেরই সর্বশেষ আশ্রয় স্থল ভিটা মাটি টুকু হারাতে হয়েছে। আবার অনেকেই এই শেষ সম্বল টুকু রক্ষা করার জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া পরিবার গুলোর চোখে শুধু হতাশার অশ্রু। নদীর দিকে শুধুই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে তারা। নদীর ভয়াল থাবায় বাড়ি ঘর জমিজমা হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ কবলিত চিহ্নিহিত এলাকা এটি। প্রতিবছরই এখানে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পূর্ব থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাঙণ এত তীব্রতর হতে পারতনা। এতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারেরও কম অর্থ ব্যয় হতো। হারিয়ে যেতনা এলাকার মানুষের বসত বাড়ি ও যায়গা জমিসহ অন্যান্য সম্পদ। অবশিষ্ট্য সহায় সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জনিয়েছেন তারা। এছাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকার চর গোবরা, হরিদাশপুর, ফুকরা, ঘোড়াদাইড়, চর সিংগাতি, মধুপুর এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনের কারনে হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এসকল এলাকার শত শত একর ফসলি জমি। প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে কাচাঁ-পাকা রাস্তা, ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা।
এবিষয়ে জালালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুপারুল আলম টিকে বলেন, নদী ভাঙ্গনে এপর্যন্ত এলাকার নজরুল মোল্যা (৬৫), বাবু মোল্যা (৩৭), সাগর শেখ (৪৫), মহিতোন নেছা (৫৭), এবাদত হোসেন মোল্যা (৫০), রানা মোল্যা (২৭), খাজা মিয়া মোল্যা (৩৬), নার্গিস বেগম (২৬), সবুজ মোল্যা (২৭), হিবজু মোল্যা (২৫), শাহাজান মোল্যা (৬০), রুবেল মোল্যা (৩০), বাচ্চু মোল্যা (৪৫), তৈয়বুর মোল্যা (৩৫), আমিনুর শেখ (৪০) ও তবিবুর রহমান (৪৭) বসত বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমি প্রশাসনের সাথে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সার্বিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পাশা পাশি তাদের সাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
এব্যাপারে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রোকৌশলী ফয়জুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে গোপালগঞ্জে সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে মধুমতি নদীর ডুবসি মোল্লা পাড়া, ঘোলইতলা, বড়ফা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে ওই এলাকার কয়েকটি বসত বাড়ি সহ বেশ কিছু গাছ পালা ফসলি জমি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের অন্যত্র সরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া জমির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫শ’ মিটার ভাঙ্গন কবলিত স্থানের কাজ শুরু করেছি। এখানে জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পানি একটু নেমে গেলে স্পেশাল ভাবে ৬মিটার করে লম্বা জিও টিউব ফেলানো হবে। তিনি বলেন, আপাতত ঠিকাদার কাজ করে যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে অর্থ বরাদ্দ’র জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এরপর দ্রুত স্থায়ী ভাবে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জেলার অন্যান্য স্থানে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কদাচিত টুকি টাকি ভাঙ্গন থাকাটা স্বাভাবিক।
ভাঙ্গন সম্পর্কে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে নদী ভাঙ্গন কবলিত স্থান পরিদর্শণ করেছি। নদী ভাঙ্গন প্রাকৃতিক কারণে হয়। তার পরেও আমরা বসে নেই। এলাকার মানুষের দুখঃ দূর্দষায় আমরা তাদের পাশে রয়েছি। সরকারের উর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এই মুহুর্তে আমরা মধুমতী নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জিও টিউব ব্যবহার করে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের আর্থিক ভাবে সহযোগীতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন এলাকা মনিটরিং করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন