সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কাজিপুর চরবাসীর পারাপারে যমুনা জয়ের সম্বল নৌকা

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজগর আলী। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চরাঞ্চলের প্রবীণ এই ব্যক্তির জন্ম ১৯৩৩ সালে। তখন থেকে যমুনার পূর্বপাড়ের বাসিন্দা তিনি। বাব-দাদার মতো তিনিও ছোটবেলা থেকে অদ্যাবধি নৌকায় চেপে যমুনা পারাপার হচ্ছেন। আগে অবশ্য যমুনা শীর্ণকায় থাকলেও গত তিন যুগে তা প্রসারিত হয়ে কাজিপুর অংশে এখন প্রায় ১২ কিঃমিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ফলে কাজিপুর সদরের সাথে যোগাযোগ রাখতে নৌকাই একমাত্র ভরসা। অনেক প্রতিশ্রুতি অনেক আশার স্বপ্ন বিভিন্ন সময়ে দেখানো হলেও বাস্তবতা হচ্ছে যমুনা এখনও বন্ধনহীন। অশীতিপর আজগর আলীর মতো চরের অসংখ্য মানুষের যমুনা জয়ের একমাত্র সম্বল হলো নৌকা। চরের মানুষের যাতায়াতের প্রধান খেয়া ঘাট হচ্ছে মেঘাই ও নাটুয়ারপাড়া খেয়া ঘাট। এছাড়া তেকানি, মনসুরনগর, খাসরাজবাড়ী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, ঢেকুরিয়া, মাইজবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় এরকম আরো একাধিক খেয়া ঘাট রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব খেয়া ঘাট থাকে কর্ম চঞ্চল। হিং¯্র যমুনার বিস্তীর্ণ জলরাশি মাড়িয়ে নৌকাযোগে এসব চরাঞ্চলের মানুষকে যাতায়াত করতে হয় নিয়মিত। ব্যবসা বাণিজ্যের কাজেও পাড়ি দিতে হয় নৌকায়। পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে নৌকার নেই কোন বিকল্প। তবে এক্ষেত্রে যে যার মত সুবিধা অনুযায়ি ছোট-বড় নৌকা ব্যবহার করে থাকেন। সবমিলিয়ে নৌকায় ভেসে জনম পার করছেন চরাঞ্চলবাসী। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি চরাঞ্চল ঘুরে এরকম তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন যমুনার বুকে জেগে ওঠা বড় বড় চরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এরমধ্যে রয়েছে নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, মনসুর নগর, চরগিরিশ ইউনিয়নের নাম। এসব ইউনিয়নে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন। যাদের চলাচলের একমাত্র পথ পানিতে টুইটম্বর যমুনা। আর বাহন হলো শুধুই নৌকা। বাইরের কেউ এসব এলাকায় যেতে চাইলে তাদেরকেও একইপথ ও বাহন ব্যবহার করতে হয়। তখন ভর দুপুর। নাটুয়ারপাড়া খেয়া ঘাট। ঘাটের পাশেই রয়েছে বেশ কিছু গাছপালা ও উচুঁ স্থান। সেই স্থানে টানানো ছাউনির নিচে বেশ কিছু চেয়ার রাখা হয়েছে। খেয়া ঘাটের এই স্থানে দেখা গেলো মানুষের জটলা। সবাই নৌকা আসার অপেক্ষায় বসে বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার যাত্রী বা পণ্য বোঝাই করে অনেক নৌকাকে যমুনার বুক চিরে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেলো। কলেজ ছাত্রী জুলেখা। কাজিপুর সরকারি মনসুর আলী কলেজে লেখাপড়া করেন। বাড়ি নাটুয়ারপাড়া চরে। কলেজ চলাকালীন সময়ে তাকে প্রত্যেক দিন এই খেয়া ঘাট হয়ে নৌকা যোগে চলাচল করতে হয়। মিলি আকতার নামে আরেক কলেজছাত্রী এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের পূর্ব পুরুষরা এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন। তারও জন্ম এখানে। জমিজমা বলতে যা তা এখানেই আছে। বসতবাড়িও এখানে। সংসারও অভাবী। তাই ইচ্ছে থাকলেও শহরে যাওয়া যায় না। কেননা শহরের থাকতে হলে জায়গা জমি কিনতে হবে। বাসাবাড়ি বানাতে হবে। সেই সামর্থ্য পরিবারের নেই। এ কারণে যমুনা ছাড়ার কোন উপায় নেই। আর ছোট থেকে নৌকায় চড়তে চড়তে ভয়ও ভেঙে গেছে। টুকু ম-ল, রফাতুল্লাহ সরকার, সেকেন্দার বৈরাগীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আগে তো অনেক ছোট নৌকায় যাতায়াত করতে হতো। যে সময় নৌকায় পাল ব্যবহার করা হতো। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতো অনেক সময় লাগাতো। কিন্তু আগের সেই জামানা আর নেই। এখন সব নৌকায় চলছে শ্যালোমেশিন দিয়ে। নৌকাও আকারে বেশ বড়। সংখ্যাও অনেক। মানুষের পাশাপাশি পণ্য বহনের কাজে এখন বড় বড় নৌকা ব্যবহার হচ্ছে বলে জানান চরাঞ্চলে বসবাসকারী এসব ব্যক্তিরা। এখন চরে স্থাপিত হয়েছে দুটি কলেজ, সরকারি একটি ব্যাংক, বেশকটি উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোবাইল ফোন টাওয়ার, পুলিশ ফাঁড়িসহ নানা স্থাপনা। শুধু হয়নি যাতায়াতের সুব্যবস্থা। তাই চরবাসী সবার দাবি যমুনাকে সেতু অথবা বাধ দিয়ে মূল চরের সাথে সংযোগ করে দেবার। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণের পথে আর কতদিন তাকিয়ে থাকতে হবে তা তাদের জানা নেই।   

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ছে ড্রেন
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা
রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভা ড্রেন নির্মাণের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ভেঙে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভাঙা স্থানে গর্তে পড়ে আহত হওয়াসহ নিয়মিত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পথচারীরা। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রভাব খাটিয়ে পরিমান মতো উপকরণ দেওয়া হয় নাই। সম্প্রতি (২২.৮.২০১৬) পানি নিষ্কাশন ও ফুটপথ চলাচলের উপযোগি করার জন্য স্থানীয় সাংসদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাজারের ব্যবসায়ি ও সাধারণ বাসিন্দার। পৌরসভা সুত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে স্থাপিত পাংশা পৌরসভা ২০১১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৯০ সালের ৫ মে থেকে শুরু করে ১৯৯৩ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোট পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তিনবার ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দুইবার করে নির্বাচিত হয়েছে। পৌরসভায় সরকারী কলেজ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রেলস্টেশনসহ রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। পৌরসভা মেয়রের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, পৌরসভায় মোট ৩৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে। শহরের মধ্যে দুই হাজার নয়শ ৯৫ মিটার ড্রেন নির্মার্ণের জন্য ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। পাঁচটি গ্রুপে নির্মাণ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় এককোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাঁচ গ্রুপের এই কাজের দায়িত্ব পান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পাংশার মের্সাস বাধন ট্রেডার্স, মের্সাস শাহ জুই এন্টারপ্রাইজ, মের্সাস রাজীব এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স আমানত এন্টারপ্রাইজ। এরমধ্যে বাধন ট্রেডার্স ও শাহ্জ্ুঁই এন্টারপ্রাইজের মালিক যথাক্রমে ইদ্রিস মন্ডল ও ছিদ্দিকুর রহমান। এরা তৎকালীন মেয়র ওয়াজেদ আলী মন্ডলের আপন ভাই। এছাড়া অপর দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও বিগত মেয়রের আতœীয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজের মেয়াদ ধরা হয় একবছর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরো একবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময় শেষ হওয়ার পরেও কাজ সম্পন্ন করা হয় নাই। পাংশা রেলস্টেশন থেকে বারেক মোড় ভায়া কালীতলা বাজার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম দিকে ৫০০ মিটার নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স বাধন ট্রেডার্স। প্রতিপাশের ব্যয় ধরা হয় ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার একশ ৪০ টাকা। একই প্রকল্পের পরের ৫০০ মিটারের দায়িত্ব পান শাহ্জুঁই এন্টারপ্রাইজ। প্রাক্কলিত মূল্যই একই ধরা হয়। পাংশা রেলগেট থেকে চন্দনা নদীর তীর ভায়া টেম্পুস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৮৬৬ মিটার ড্রেনের দায়িত্ব নেন ৫২ লাখ ৭৪ লাখ আটশ ২০ টাকা। পাংশা রেলস্টেশন থেকে বারেক মোড় ভায়া কালীতলা বাজার ড্রেন নির্মাণ শেষাংশের দায়িত্ব পান আমানত এন্টারপ্রাইজ। কাজের ব্যয় হিসেবে বাধন ট্রেডার্স দুই প্রকল্প থেকে যথাক্রমে ২৩ লাখ ২৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। ছিদ্দিকুর রহমান ২২ লাখ, রাজীব এন্টারপ্রাইজের আলী আকবর ৪৭ লাখ এবং আমানত এন্টারপ্রাইজের নজরুল ইসলাম ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশ দিয়ে ড্রেন তৈরী করা হয়েছে। ড্রেনের উপর দিয়ে তৈরি করা হয় পায়ে হাটার রাস্তা (ফুটপথ)। কিন্তু ড্রেনের স্লাপ বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও পরে স্লাপ অনেক খানি ভেঙে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ ভাঙা অংশে বস্তা ফেলেছে। এতে করে একটু অসাবধান হলেই হোচট খেতে হয়। পথচারী অনামিকা রায় বলেন, একে তো ফুটপথের বিভিন্ন স্থান দখল করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানে ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে এটি আর সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগি থাকছে না। পাংশা শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাহারাম হোসেন জানান, পাংশা শহরের মধ্যে উভয়পাশের মার্কেট থেকে রাস্তা নিচু হওয়ার ড্রেন খুব প্রয়োজন। কিন্তু ড্রেনে ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারে না। জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। একারনে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। ঠিকাদার ইদ্রিস আলী মন্ডল প্রকৌশলীদের লাঞ্চিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা এখনো কাজের পুুরো টাকা পাই নাই। বরাদ্দকৃত বাকী টাকা পেলে অবশিষ্ট কাজ ও ভাঙ্গা অংশ ঠিকঠাক করে দেবো। এই কারনে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ছিদ্দিকুর রহমান জানান, নিয়ম মেনে ড্রেন নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের নকশায় ভূল ছিলো। আর কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে এখন ভেঙে গেলে আমাদেও করার কিছুই নেই। তাছাড়া আমাদেও পুরো টাকা এখনো দেওয়া হয় নাই। পৌরসভার প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত সহকারী) আজিবর রহমান জানান, কাজের সময় সিমেন্ট, বালু, খোয়া প্রভৃতি উপকরণ নিয়মমাফিক দেওয়া হয় নাই। অনিয়মের মাধ্যমে জোর-জবরদস্তি করে কাজ করা হয়। আমরা প্রতিবাদ করে লাঞ্চিত হয়েছি। সঠিক ভাবে কাজ করাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। পৌর মেয়র আবদুল আল মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ড্রেনের অবস্থা বেহাল থাকায় প্রায় দিনই কেউ না কেউ পড়ে আহত হয়। এছাড়া পানিও ঠিকমতো নিষ্কাশন হয় না। এতে করে কাজের সুবিধা কেউ পাচ্ছে না। অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন