সরদার সিরাজ : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এটাই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। কারণ, ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ অসুস্থ থাকে। ফলে কষ্টভোগ করে/মৃত্যু ঘটে। তাই ব্যাধির সুচিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। মহান স্বাধীনতার প্রধান অঙ্গীকারগুলোরও একটি। তাই সরকারিভাবে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পুনরায় চালু করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকও। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সরকারি বে-সরকারি ও এনজিওর বহু হাসপাতাল, ক্লিনিক আছে। অর্থাৎ দেশের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবকাঠামো মোটামুটি ভালো। পাক-ভারতের চেয়ে বেশি বলে জাতিসংঘের অভিমত। কিন্তু বিপুল ঘাটতি আছে স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর। যেমন : ডা. যোবায়ের আহমেদ জানিয়েছেন, হু’র নীতি হচ্ছে- ডাক্তার ও মানুষের রেশিও ১ ঃ ১৪০। আছে ১ ঃ ১২,০০০ এর অধিক। ডাক্তার ও নার্সের রেশিও ১ ঃ ৩। আছে ১ ঃ ১। শিক্ষক, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্টাফ ইত্যাদিরও ঘাটতি বিপুল। সব মিলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে ৪০ হাজার পদ শূন্য আছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন। ওষুধ, রোগীর খাবার, হাসপাতালের বেড ইত্যাদিরও বিপুল ঘাটতি আছে। এসব নানা কারণে দেশের বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। তারা বিভিন্ন ব্যাধিতে ভুগছে। ফলে সংশ্লিষ্ট পরিবার ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশের ব্যাধিগ্রস্ত মানুষকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। (১) ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ খান, (২) ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ না করে নিজে নিজে কিংবা ওষুধের দোকানির কাছে ব্যাধির কথা বললে তিনি অনেক ওষুধ দেন, (৩) ডাক্তার ও ওষুধের ধারে কাছে যায় না। এই তিন অংশের শ্রেণিভিত্তিক/ব্যাধিভিত্তিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তাই অনুমেয় মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রথম শ্রেণি- ৫-১০%, দ্বিতীয় শ্রেণি ২৫-৩০% আর তৃতীয় শ্রেণি প্রায় ৭০%।
এখন শ্রেণিভিত্তিক ব্যাধিগ্রস্ত লোকের কিছু বর্ণনা প্রয়োজন। যারা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ ও ওষুধ খান তাদেরও বিপত্তি অনেক। যেমন- দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারের মান। তাই তাদের কাছে চিকিৎসা নেয়ার পর বহু লোকের ব্যাধি ভালো হয় না। বরং ভুল চিকিৎসার জন্য নতুন ব্যাধি সৃষ্টি হয়। হাসপাতাল/ক্লিনিকের স্টাফদের অনিয়ম, দুর্ব্যবহার আর নোংরা পরিবেশ ভয়াবহ। আজকাল ডাক্তারগণ জীবিত মানুষকেও মৃত বলে ঘোষণা দেন। আর ভুল চিকিৎসা কিংবা অবহেলার কারণে প্রায়ই মানুষের মৃত্যু ঘটছে/ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নানা কারণে সরকারি হাসপাতালে গরিব মানুষ ছাড়া সহজে কেউ যায় না। যদিও কেউ যায়, অবস্থা দেখে দ্বিতীয়বার যায় কি-না সন্দেহ আছে।
বেসরকারি হাসপাতালে বর্ণিত ভোগান্তি কম। কিন্তু খুবই ব্যয়বহুল। মানও খুব উন্নতর নয়। কারণ, বেশিরভাগ ডাক্তারই তো সরকারি মেডিকেল কলেজ/হাসপাতালেরই। বেসরকারি পর্যায়েরও টেস্ট মানসম্পন্ন নয়। কিন্তু মূল্য অত্যধিক। তাই ধনীরা বিদেশেই চিকিৎসা করান। শুধুমাত্র ভারতেই বছরে ৭ লাখ লোক চিকিৎসা করান বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও অন্য দেশেও প্রায় তদ্রুপ।
আর যারা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করেন না। নিজে নিজে ওষুধ কিনে খান কিংবা ওষুধ দোকানিকে ব্যাধির কথা বললে তিনি অনেকগুলো ওষুধ দেন। যার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয়, হাইপাওয়ারের, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি। অথচ বিবিসি বাংলার সাথে সাক্ষাৎকারে এক বিশিষ্ট ডাক্তার বলেন, ‘ভুল, অতিরিক্ত, হাইপাওয়ারের, অ্যান্টিবায়োটিক, নকল, ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ ইত্যাদি ওষুধ খেলে মানুষের শরীরের খুব ক্ষতি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়’। তবুও এ দেশে ওষুধ খাওয়া লোকের মধ্যে বেশিরভাগই এসব ওষুধ খান। কারণ, নিরুপায়! উল্লেখ্য, এ দেশে উৎপাদিত ওষুধের প্রায় অর্ধেকই নকল, ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ, নি¤œমানের ইত্যাদি। সারাদেশে অগণিত ওষুধের দোকান আছে। যার অবস্থা মুদি দোকানের মতোই। এমনকি বহু পান-বিড়ির দোকানেও ওষুধ বিক্রি হয়। অথচ সরকারি নিয়ম হচ্ছে- প্রত্যেকটি ওষুধের দোকান লাইসেন্সযুক্ত, আধুনিক, ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না দেয়ার। কিন্তু ৯৯% দোকানেই এসব পালিত হয় না।
যাদের ডাক্তার দেখানোর ও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই, তারা যেকোন ব্যাধি হলেই ছুটে যান হুজুরের কাছে। হুজুর তা দেখে/শুনে পানি পড়া, ঝার, ফুঁক, তাবিজ ইত্যাদি দেন। আবার অনেকেই ফুটপাতের হকারের কাছ থেকে গাছের ছাল, বাকলা, শেকড় নেনÑ তাদের চটকদারী কথা শুনে। আবার অনেকেই বিভিন্ন মাজার, দরগা ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নানা মানত করেন।
দেশে আধুনিক ওষুধ নীতি করার জন্য বিভিন্ন মহল দাবি করছেন বহুদিন যাবত। কিন্তু তা করা হয়নি। তাই ১৯৮৩ সনের প্রণীত নীতিই চলছে। কিন্তু তাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই নকল, ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ, মানহীন ওষুধে বাজার সয়লাব। এ অবস্থা বৈধ কোম্পানির মধ্যেও রয়েছে! যেমন ‘মাননীয় হাইকোর্ট ৩৪টি বৈধ কোম্পানিকে বাজার থেকে ওষুধ প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায়’। অনুমেয় সব কোম্পানির প্রতিটি আইটেমই পরীক্ষা করা হলে প্রমাণিত হবে বেশিরভাগ ওষুধই মানসম্পন্ন নয়। সর্বপরি যখন তখন মূল্য বৃদ্ধি করা হয়।
অপরদিকে, দেশে নিরাপদ খাদ্য নেই বললেই চলে। মাছ, মাংস, ফলমূল, তরকারি, সবজি ইত্যাদির বেশিরভাগই বিষ মেশানো/ভেজালযুক্ত। আর হোটেল, রেস্তোরাঁর খাবার তো খুবই অনিরাপদ। পঁচা, বাসি, মরা ও ব্যাধিগ্রস্ত মাছ হাঁস মুরগি ও পশুর মাংসই বেশি। ভেতরের পরিবেশও চরম নোংরা। দেশের বড় বড় হোটেলে পর্যন্ত প্রায় একই অবস্থা। তাই হোটেলে পরপর কয়েকদিন খেলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর ফুটপাতের খাবারে তো বিন্দুমাত্রও মান নেই। বোতলজাত পানি, নানা ড্রিংকস ও বেকারির নানা খাদ্যও মানসম্মত নয়। অথচ পশ্চিমা দেশসহ বিশ্বের বহু দেশের মানুষ সারাজীবন হোটেল-রেস্তোরাঁয় খান। বড় বড় কোম্পানির প্যাকেটজাত খাদ্য বিভিন্ন দেশের মানুষ আমদানি করে খান। এখন তো ড্রোন দিয়ে খ্যাদ্য পৌঁছানো হচ্ছে যাচিত ব্যক্তির কাছে। বড় কোম্পানিগুলো এটা চালু করেছে অতি সম্প্রতি। কিন্তু বর্ণিত খাবার খেয়ে কোথাও কেউ অসুস্থ হন না। কিন্তু আমাদের দেশে তার বিপরীত। অথচ দেশে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ আছে। যা জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যুগান্তকারী আইন বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কিন্তু আইনটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে যা হবার তাই-ই হচ্ছে।
এমনকি ঘরে রান্না করা খাদ্যও ১০০% নিরাপদ নয়। কারণ, খাদ্যের সব উপকরণই ভেজাল/বিষযুক্ত। স্মরণীয় যে, দেশে ভোক্তা অধিকার, পরিবেশ রক্ষা, বায়ূ দূষণ, শব্দ দূষণ, মাদক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অনেক আইন আছে। কিন্তু কোনটিই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এসব আইন বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও প্রয়োজনীয় লোকবল আছে। কিন্তু কাজীর গরু কাগজে আছে গোয়ালে নেই এর মতো। অবশ্য তারা যে কিছুই করেন না-তা নয়। বহুদিন পরপর কোথাও কোথাও অভিযান চালান। তাতে অনেক অপরাধী ধৃত, জেল জরিমানা ইত্যাদি হয়। কিন্তু শাস্তির মেয়াদ খুবই সামান্য হওয়ায় পরক্ষণই যাহা পূর্বং তাহা পরং। তাই বর্ণিত আইনগুলোর আওতাধীন অপরাধসমূহ বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার ছিটে-ফোটা প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিনই। যার শুধুমাত্র একটি খবর উল্লেখ্য-দুর্নীতিতে ডুবছে স্বাস্থ্য খাত। তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র হতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পর্যন্ত সর্বত্রই দুর্নীতি, লুটপাঠ আর অনিয়ম-বিশৃঙ্খলায় আকণ্ঠ ডুবে আছে। তাই বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৮টি দেশের খারাপ পরিস্থিতির তালিকায় বাংলাদেশ ১৫১তম। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম স্কোর পেয়েছে স্বাস্থ্যবিধি সূচকে। ১০০-এর মধ্যে মাত্র ৫।
কিন্তু এসব ব্যাধি সৃষ্টিকারী বিষয় নির্মূল না করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত ও পর্যাপ্ত করা হলেও দেশের মানুষ ব্যাধিমুক্ত হবে না। কারণ, উন্নত চিকিৎসার জন্য কিছু সৃষ্ট ব্যাধি ভালো হলেও নুতন বহু ব্যাধি সৃষ্টি হবেই। অর্থাৎ দেশের স্বাস্থ্যখাতে সর্বনাশ ঘটছে। এসব দেখে শুনেই হয়তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বা সবার জন্য স্বাস্থ্য এগুলো বক্তব্য হিসেবে অনেক বড় আকষর্ণীয়। কিন্তু সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সহজ কাজ নয়। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এ কাজ অনেকটা সহজ করতে পারে’। কিন্তু সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার কর্মসূচি তো সরকারই ঘোষণা করেছেন। তাহলে কি বাস্তবতা না বুঝেই করেছেন? কিন্তু সব দেশেই সরকার, এমনকি দায়িত্বশীল বিরোধী দলীয় নেতারা কথা-বার্তা বলেন সামর্থ্য ভিত্তিক। অর্থাৎ ঘটনার পরিধি, বাস্তবায়নের জন্য অর্থ ও জনবল, পরিবেশ ইত্যাদি বুঝে-সুজেই বলেন। আর আমাদের দেশে তার বিপরীত। অর্থাৎ শুধুই চটকদারী/ভাষণ সর্বোস্ব? পাবলিকও তেমনি! না বুঝে না সুজেই কড়া হাততালি দিয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করেন। দলদাস বুদ্ধিজীবীরাও তাই। যা’হোক, দেশের স্বাস্থ্য খাতের এই করুণ অবস্থার মধ্যেই বর্তমানে নতুন নতুন মরণঘাতি ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে অহরহই।
যা’হোক, সার্বিক বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে ব্যাধি নিরাময় করার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার চেয়ে ব্যাধি সৃষ্টি প্রতিরোধ করার দিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। এটা খুব কঠিন, ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। একটু গুরুত্ব দেয়া হলেই স্বল্প সময় ও ব্যয়েই সৃষ্ট ব্যাধির অর্ধেক ভালো এবং নতুন ব্যাধি সৃষ্টি কমানো সম্ভব। যেমন : বর্তমান ওষুধ নীতি, নিরাপদ খাদ্যনীতি, ভোক্তা সংরক্ষণ নীতি, পরিবেশ নীতি, বায়ূ দূষণ নীতি, শব্দ দূষণ নীতি, মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন ইত্যাদি কঠোরভাবে বাস্তবায়ণ করতে হবে অবিলম্বে। প্রয়োজনে সব ক্ষেত্রেই ভিজিলেন্স টিমের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিদিনই অভিযান চালানো এবং বর্ণিত আইনগুলো সংশোধন পূর্বক শাস্তি ব্যাপক কঠোর করা আবশ্যক। তাহলেই অপরাধসমূহের অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ব্যাপক কমে যাবে। এতে প্রশাসনিক ব্যয় কিছু বাড়বে কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় তার কয়েকগুণ হ্রাস পাবেই। এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতের ৪০ হাজার শূন্য পদ প্রতিযোগিতামূলক ও নিরপেক্ষভাবে যথাশীঘ্রই পূরণ এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট খাতের সর্বত্রই কঠোর জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য্য। স্মরণীয় যে, এ দেশের মানুষ শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ- মহাপরাক্রমশীল জঙ্গিরা তিন-চারটা লোমহর্ষক অপারেশনের কারণেই ঠা-া হয়ে গেছে। প্রশাসনের নিয়মই এটা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নানা ব্যাধি প্রতিরোধ করতে প্রতিটি মানুষেরও করণীয় আছে, যা বিনা খরচেই সম্ভব। যেমন : নিয়মিত ও পরিমিত নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ, ঘুম, ব্যায়াম, খেলাধুলা, বিনোদন, সার্বক্ষণিক পরিষ্কার থাকা। এছাড়া মাদক-তামাক, অতিরিক্ত তৈলযুক্ত মাংস, শুকনা মরিচ, মসল্লা, কৌটার ও পাউডার দুধ পরিহার, শাকসবজি, ছোট মাছ ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া ইত্যাদি। তাহলে ব্যাধি সৃষ্টি হওয়া হ্রাস তো পাবেই, সৃষ্ট ব্যাধিরও অনেকগুলো ভালো হবে। স্মরণীয় যে, প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা ঘাম ঝড়ানো হাঁটলেই ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ব্যাথা, শরীরের মেদ ও রক্তের চর্বি হ্রাস পায়, ঘুম ভালো হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উপরন্তু সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির অনুশাসন, ভালো বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক প্রভৃতি মনকে প্রফুল্ল রাখে। ফলে আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস পায়। এছাড়া প্রতিদিন ১টি করে ডিম খেলে অপুষ্টি দূর হয়। অটিস্টিক শিশুর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেওয়ার আগে তার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন জরুরি। একজন অটিস্টিক শিশু সার্থক জীবনযাপন করবে, এটা কোন ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, বরং সেটাই বাস্তবতা। যেন-তেন অসুখেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক নয়। মানসিক রোগ মানেই লজ্জার কোন কারণ নয়। মানসিক রোগ দূর করতে কুসংস্কারমুক্ত বিশ্ব প্রয়োজন। মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই অসুস্থতা। সব মানসিক রোগেরই বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব। বর্তমানে অনেক উন্নত ও কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই এই রোগ পুরোপুরিই সেরে যাচ্ছে। রোগীরা কর্মক্ষম থাকতে পারছে। ক্যান্সার জয়ে ইমিউনিথেরাপি ওষুধ ও পুরুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য হরমন ইনজেকশন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং দিনদিন এসব ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের মনোযোগ রোগ নিরাময়ের আগে প্রতিরোধের দিকেই নিবদ্ধ করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardar siraj55@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন