ইসলামিক টেররিজমের প্যানিক ও ফোবিয়া সৃষ্টি করে পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানদের সন্ত্রস্ত করে তোলার পাশাপাশি ওয়ার অন টেররিজমের নামে মুসলিম বিশ্বে অন্তহীন যুদ্ধের পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এজেন্ডা ব্যর্থ হয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় পশ্চিমাদের সামরিক-রাজনৈতিক ব্যর্থতার পর তালেবানদের সাথে সমঝোতা করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিনী সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ওয়ার অন টেররিজম কার্যত অনানুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও পেন্টাগনে রহস্যজনক সন্ত্রাসী বিমান হামলার পর সূচিত যুদ্ধকে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আক্ষরিক অর্থেই ‘ক্রুসেড’ এবং ‘অন্তহীন যুদ্ধ’বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আল কায়েদা নেটওয়ার্কসহ মুসলমানদের চরমপন্থী রাজনৈতিক তৎপরতা দমনের নামে দেশে দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গড়ে তোলা হয়। সে সময় বাংলাদেশেও নব গঠিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়েছিল। র্যাব বাংলাদেশে উগ্রবাদী অপতৎপরতা দমনে বেশ সাফল্য অর্জনে সক্ষম হলেও সাম্প্রতিক এক দশকে র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের অভিযোগসহ গুম-খুনসহ নানা ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ডের অনেক অভিযোগ উঠে আসে। এসব অভিযোগ নিয়ে পশ্চিমা মাননবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে তাদের জরিপ রিপোর্ট তুলে ধরে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কেউ কেউ সেসব অভিযোগ প্রকারান্তরে অগ্রাহ্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলতেও দ্বিধা করেনি। তারই ধারাবাহিকতায় সাবেক সেনাপ্রধান, র্যাব ও পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে রাজনৈতিক ব্লেইমগেমও চলছে সমানতালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও প্রসঙ্গক্রমে সেসব বিষয় উঠে আসে। র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরুতে র্যাবের প্রশিক্ষণে ইঙ্গ-মার্কিন ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। অর্থাৎ র্যাবের কাউন্টার টেররিজমের সাথে তথাকথিত ওয়ার অন টেররিজমের একটি নিবিড় যোগসূত্র থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব-পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে বোঝা যায়, পশ্চিমারা বাংলাদেশে তারা পূর্বের (ওয়ার অন টেররিজমের) অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে অথবা সরকারের সাথে তাদের মতবিরোধ ঘটেছে।
জঙ্গিবাদ বা জঙ্গি তৎপরতার সাথে কখনো মূল ধারার কোনো রাজনৈতিকদল বা ধর্মীয় সংগঠনের সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়া না গেলেও তথাকথিত জঙ্গিবাদী তৎপরতা নিয়ে সরকার এবং মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্লেইমগেইম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এটি আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক এজেন্ডা থেকেই দেশে দেশে আভ্যন্তরীন রাজিনীতিতে বিস্তার লাভ করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে রাখা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধিদল ও মত দমনে (বিশেষত ইসলামিক রাজনৈতিক ধর্মীয় ইস্যু) জঙ্গিবাদকে শক্ত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গোয়েন্দা সংস্থার ফল্স ফ্লাগ অপারেশনের মাধ্যমে টার্গেটেড বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠির উপর দায় চাপিয়ে বিরোধি জনমতকে দাবিয়ে রাখার অপকৌশল কখনো কখনো ওপেন সিক্রেট হিসেবে প্রকাশিত হয়ে গেছে। এমনকি ওয়ার অন টেররিজমের মূল অনুঘটক নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী বিমান হামলার ঘটনাটিকেও সিআইএ-মোসাদের কারসাজি বলে কোনো কোনো গবেষণায় উঠে এসেছে। সেদিন হাজার হাজার ইহুদি নাগরিকের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের অফিসগুলোতে অনুপস্থিতি, ইসারাইলী প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিলসহ বেশকিছু আলামত ও প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী বিমান হামলার পেছনে ইসরাইলের নেপথ্য সম্পৃক্ততার অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই ঘটনার পর কথিত ওয়ার অন টেররিজমের ধারাবাহিক পরিনতি হিসেবে একের পর এক মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোকে টার্গেট করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার নামে মার্কিনীদের বশংবদ আরব রাষ্ট্রগুলোর উপর হাজার হাজার কোটি ডলারের সামরিক অস্ত্রচুক্তির জালে আবদ্ধ করার মধ্য দিয়ে পশ্চিমা মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্সের রমরমা বাণিজ্য হয়েছে। ওয়ার অন টেররিজম’র নামে ফল্স ফ্ল্যাগ ও উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেয়ার রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা বিশ্বকে আরো অস্থির ও অনিরাপদ করে তুলেছে। এর দ্বারা মুসলমান সমাজকে সন্ত্রস্ত করা গেলেও মুসলমানদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া বা অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা যায়নি। বিশ বছরে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের যুদ্ধব্যয়ের পর আফগানিস্তানের তালেবানরা আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে আপস করেই মার্কিনীদের আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হয়েছে। সাম্প্রতিক বিশ্ববাস্তবতায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী নীতি আবারো সোভিয়েত স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার অবস্থানে চলে গেছে। ওয়ার অন টেররিজমের সাবেক ইস্যু এখন অনেকটাই পরিত্যাজ্য। এর কারণ হচ্ছে, পশ্চিমা মিডিয়া প্রোপাগান্ডার এজেন্ডা হিসেবে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোকে তুলে ধরা হয়েছিল, প্রায় সবগুলো সংগঠনের সাথে কোনো না কোনোভাবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে তালিবানদের সহযোগী সংগঠন হিসেবে আল কায়েদা, এমডিআই, লস্কর ই-তৈয়েবা বা জইশ ই মোহাম্মদের মত সংগঠনগুলোকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মাধ্যমে সিআইএ প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থসহায়তা দিয়েছিল। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর সে সব সংগঠনের সাথে সিআইএ’র সম্পৃক্ততা ছিন্্ন হলেও এসব জঙ্গিবাদী সংগঠন এক সময় পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী বিমান হামলার ঘটনার পর আল কায়েদা, তালেবান, হামাস, হেজবুল্লাহ, ইসলামিক জিহাদ, লস্কর-ই তৈয়েবা, জইশ-ই মোহাম্মদসহ যেসব সংগঠনগুলোকে ‘টেরর অর্গানাইজেশন’ আখ্যা দিয়ে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা ও নির্মূলের বহুমাত্রিক অভিযানের নামই হচ্ছে ওয়ার অন টেররিজম।
যে সব ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে ২০ বছর ধরে ওয়ার অন টেররিজম পরিচালনা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেসব লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ হওয়ার কারণেই ওয়ার অন টেররিজমের সাবেক ডিসকোর্স ও টার্গেট পরিত্যাজ্য হয়েছে। তবে সেসময় মার্কিনীদের সামরিক ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে যেসব দেশ সহযোগী হিসেবে যোগ দিয়েছিল তারা নিজেদের স্বার্থেই তাদের পূর্বতন ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষত ভারতে কাশ্মির ইস্যুতে লস্কর-ই তৈয়েবা ও জইশ-ই মোহাম্মদ-এর বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান এখনো অ্যাডভেঞ্চারিজমের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে। একইভাবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোড়ন-উদ্বেগ ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী জঙ্গি সংগঠন আইএস’র উত্থান এবং এর তৎপরতা নিয়ে যেসব কনস্পিরেসি থিওরি ও ধারণা চালু রয়েছে, তাও অনেকটা অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছ। অর্থাৎ এর উত্থান ও তৎপরতার পেছনে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যোগসাজশ ও ইন্ধনের যেসব অভিযোগ ও তথ্য-প্রমান উঠে এসেছে, তার সবগুলো অগ্রাহ্য বা উড়িয়ে দেয়ার মত নয়। কোনো দেশ বা রাজনৈতিক শক্তি আইএস কে সমর্থন বা প্রশ্রয় না দিলেও এরা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ভয়ঙ্কর এক জনপদে পরিনত করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করেছে। আইএস জুজু দেখিয়ে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলার সমৃদ্ধ পশ্চিমা বশংবদ দেশগুলোতে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির মওকা পেয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতা ভারত বা পাকিস্তানের মত নয়। এখানে ইসলামি উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ কখনো সাধারণ মানুষ ও মূল ধারার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলের সমর্থন লাভ করেনি। এরপরও এ দেশে হরকাতুল জিহাদ, বাংলাভাইদের অপতৎপরতার যে চিত্র পাওয়া যায় তা অনেকটাই অস্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক কারসাজি ও ব্লেইমগেমের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা ভাইদের উত্থান ও পতন, সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা থেকে শুরু করে রাজধানীতে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসি হামলায় বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা পর্যন্ত কোনো ঘটনার সাথেই দেশের প্রধান কোনো রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় সংগঠনের সম্পৃক্ততা খুঁেজ না পাওয়া গেলেও এসব ঘটনা নিয়ে মূল ধারার রাজনৈতিক দলসহ দেশের ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত ও বদনাম করা হয়েছে। একশ্রেণীর সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মী জঙ্গিবাদী তৎপরতার সাথে দেশের মাদরাসা শিক্ষার উপর দায় চাপানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেও সফল হননি। সরকার তাদের কথায় কান না দিয়ে কওমী মাদরাসা সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষকদের একটি অংশের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি জননী উপাধি লাভ করেছেন। যদিও এই স্বীকৃতি কওমি অঙ্গনের সব মহলের তো নয়ই, অধিকাংশের দ্বারা স্বীকৃত কিনা তা নিয়েও জোর বিতর্ক রয়েছে। অর্থাৎ দেশের মাদরাসা শিক্ষায় একদিকে সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অন্যদিকে বিরোধি মতের আলেম-ওলামাদের দমনে নানাবিধ পন্থা সক্রিয় রয়েছে।
বলাবাহুল্য, তথাকথিত ইসলামি জঙ্গিবাদের তকমা পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদের নীলনকশার সৃষ্টি। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কারণে প্রক্সি বা ফল্স ফ্ল্যাগ অপারেশনের মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি করে সুবিধাজনক অবস্থা নিশ্চিত করাই এসব নেপথ্য কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সে ধরণের এজেন্ডা থাকার সুযোগ খুব ক্ষীণ। বিগত এক দশকে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ নিমূর্লে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে দেশকে জঙ্গিবাদের হুমকিমুক্ত করার সাফল্য দাবি করেছে। গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গিবাদের কোনো হুমকি বা তৎপরতা বিরোধি অভিযানও চালাতে হয়নি। এখন দেশে আবার জঙ্গিবাদের আস্ফালনের তথ্য প্রচার পাচ্ছে কেন? সম্প্রতি জঙ্গিবাদী তৎপরতার সাথে জড়িত বলে সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন। দেশে অন্তত ৩২ হাজার পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এভাবেই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। পক্ষান্তরে এই মুহূর্তে ভারতের ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোর মুসলিম ও অহিন্দু বিদ্বেষী সহিংস তৎপরতা বিশ্বের সামনে ভারতকে একটি জঙ্গিবাদপ্রবণ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করছে। সেখানকার মুসলমানরা একটি সম্ভাব্য গণহত্যা বা এথনিক ক্লিনজিংয়ের শিকার হতে পারেন বলে ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক জেনোসাইড ওয়াচের তরফ থেকেও সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের নাগরিকত্ব আইন বা হিন্দুত্ববাদের প্রভাবে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি হলেও এখানে সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের কোনো সুযোগ নেই। তবে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট রাজনীতি বিমুখ নয়। সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ব থেকে বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন এবং অদ্যাবধি এ দেশের উলামা-মাশায়েখদের শত শত বছরের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীনতা-স্বাধিকার আন্দোলন আর সন্ত্রাসি তৎপরতা এক কথা নয়। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের শাসন নিরঙ্কুশ রাখতে প্রতিবাদী আলেম-উলামাদের উপর অত্যাচারের স্টীমরোলার চালিয়েছিল। কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে কখনো রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলেই শত বছরের ঔপনিবেশিক শাসনেও কওমি মাদরাসার আলেমদের অন্তর থেকে মুসলমানদের স্বাধীনতা ও হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের চেতনা ম্লান করা যায়নি। ঔপনিবেশিক শাসনমুক্তির ৭৫ বছর এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসেও কেন এ দেশের আলেম সমাজকে নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড়ের শিকার হতে হচ্ছে? এই প্রশ্নের গভীরে অনুসন্ধান ও সমাধানের সঠিক পন্থা গ্রহণ ব্যতিরেকে একটি স্থিতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক কোনো কুশীলবদের গোপন এজেন্ডায় বাংলাদেশের উপর যেন জঙ্গিবাদের তকমা না পড়ে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে আবারো জঙ্গিবাদের ভুয়া রিপোর্ট সৃষ্টি করে কোনো পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে কিনা, দেশবাসি এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে। আরো বাসযোগ্য, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশ এখন একটি চরম বিপদসঙ্কুল ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জঙ্গিবাদের কথিত তৎপরতার প্রচারনা দেশের সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উত্তরণের পথকে রুদ্ধ করে দিতে পারে।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন