শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ঘুষ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট

মোরেলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘুষ ছাড়া হয় না দলিল সম্পাদন : ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সাব রেজিস্টার তন্ময় কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে সেবা প্রাত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী।
উপজেলার হোগলাপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান টুকু লিখিত অভিযোগে বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর ০.৬৩০০ একর বিলান জমি (দলিল নম্বর ৬৫০৭) দাতা ইদ্রিস আলী রেজিস্ট্রি নিতে গেলে সাব-রেজিস্টার তন্ময় এজলাসে বসে তার কাগজ ঠিক নেই বলে দলিল ছুড়ে মারেন। পরবর্তীতে স্থানীয় একজন মহুরি তাকে সরকারি ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা সাব-রেজিস্টারকে দিতে বললে ভুক্তভোগী টুকু কোন উপায় না পেয়ে ২০ হাজার টাকা মহুরি সোহাগের হাতে তুলে দেন। পরে উক্ত দলিল কোন যাচাই-বাচাই ছাড়াই রেজিস্ট্রি করে দেন। এরপরে ভুক্তভোগী তার কাগজ ঠিক ছিল বলে দাবি করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি অবহিত করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সাব-রেজিস্টার কোন উপায় না পেয়ে কামরুজ্জামানকে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। মোরেলগঞ্জে সপ্তাহে দুইদিন অফিস করেন এই সাব-রেজিস্টার।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এই দুইদিনে তিনি ৫ লক্ষাধিক টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। এছাড়া তিনি সপ্তাহে দুইদিন অফিস করেন, দুপুর ১২টার পরে অফিসে প্রবেশ করেন, উপজেলার দূর দূরান্ত থেকে আসা সেবা প্রত্যাশীদের নানা হয়রানির স্বীকার হতে হয়, একশ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এই উপজেলার সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেÐার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্টার তন্ময় জড়িয়ে পড়েছেন নানা অনিয়মে।
অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্টার সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা আমমোক্তার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিলের টুকিটাকি ভুল ধরে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
তিনি এ অফিসে যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ে ভাগ ভাটোয়ারা করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, দলিল ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও অতিরিক্ত ফি ছাড়া সাব-রেজিস্টার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। সাব রেজিস্ট্রার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করে থাকেন। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়। দলিল লেখক সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। নিয়মবহির্ভ‚তভাবে প্রত্যেক দলিল থেকে সেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্টার তন্ময় কুমার মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, তাৎক্ষনিকভাবে দলিল লেখককে অব্যহিত দিয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
শফিউল আলম খান ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৫ এএম says : 0
আমার জানা মতো সাব রেজিস্ট্রি অফিস এর চিত্র সকল জায়গায় প্রায় একই রকম চিত্র। দু এক জায়গায় ব্যাতিক্রম হতে পারে। সরকারের এই সময়ে এই দিকটায় নজর দেওয়া উচিত। জমি রেজিস্ট্রেশন এর বিষয় টি উন্মুক্ত করে দেওয়া। যদিও আইন আছে তবুও এটা স্বতঃসিদ্ধ র মত হয়ে গেছে যে মিডল ম্যান ছাড়া দলিল হয়না। জনগন এর হয়রানি লাঘব করার জন্য সরকার কেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন