শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

অস্তিত্ব সঙ্কটে পদ্মা নদীতে হচ্ছে পিঁয়াজের চাষ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী, রাজশাহী থেকে : পদ্মা নদীতে এখন পিঁয়াজের চাষ করা হচ্ছে। পদ্মা নদীসহ শ শ নদী মরে যাচ্ছে, অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দেশে জলবায়ুর প্রতিক‚ল প্রভাব পড়ছে। এখন শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা একটি নদীর নাম পদ্মা। এটা কি নদী? বিশ্বাস করা যায় না। পদ্মার সেই খরস্রোত নেই কেন? এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে একালের শিশু, কিশোর, ছাত্র ছাত্রীসহ কোন আগন্তুককে। বিশাল বিস্তৃত ধু ধু বালু চর আর পানির ক্ষীণ বিল কিংবা লেকের মতো পদ্মার ঐতিহ্য অস্তিত্বকে এতটা বিপন্ন করেছে। ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে আবহমানকাল ধরে প্রবাহিত গঙ্গা- পদ্মা নদীর ভারতের অংশ ফারাক্কায়। নদী আছে পানি নেই, বালু আছে কিন্তু কোথায় যেন কোন মাটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে পদ্মার কোলে জেগে উঠা চরে সবুজ ফসল ফলানো সম্ভাব হচ্ছেনা। প্রতি বছর বালু জমতে জমতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মার ভয়াবহ রূপ দিনে দিনে হারিয়ে ফেলেছে। বিগত বছরগুলোতে এ নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এ বার তাও নেই। একটা বিলে পরিনত হয়েছে। এখন রেলবাজার ঘাটের সামনে মানুষ হেটে নদী পার হচ্ছে। কয়েক বছর পর নৌকার পরিবর্তে গরুর গাড়ি কিংবা সাইকেলে নদী পার হওয়া বলে সচেতন মহলের ধারনা। ফারাক্কা ব্যরেজের সব কয়টি গেট বন্ধ করে নদী শাসন করে মেরে ফেলা হয়েছে অসংখ্য নদ নদীকে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে পরিবেশ জীবন জীবিকায় নেমে এসেছে প্রচÐ ধস। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ধীরে ধীরে মরু ভূমিতে পরিনত হচ্ছে। গ্রীস্ম মৌসুমে পানির স্তর আস্বাভাবিকভাবে নীছে নেমে যাওযায় উত্তরাঞ্চচলের বেশীর ভাগ নলকূপে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে এই ফারাক্কা ব্যারেজ। এসব এলাকার মানুষ যাকে মরণ ফাদ বলে জানে। এ ব্যারেজ চালু হওয়ার সময় বলা হয়েছিল এটি উভয় রাষ্ট্রের কল্যাণের প্রতীক। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভরতের বিমাতাসুলভ আচারণের কারণে এ ব্যারেজ এ দেশের মানুষের জন্য অকল্যাণ। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, নৌযোগাযোগ, পরিবেশ, জীবন জীবিকাকে ঠেলে দিয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে। পদ্মা নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে শাখা নদী বড়াল, মরাবড়াল, নারোদ, মুছাখান, ইছামতি, চিকনাই, নাগর, ধলাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, হিসলা, কাজলা, চিত্রা, সাগোরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ মরে যাচ্ছে, কালিগঙ্গা, বেলাবত এসব নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিনের জন্য এসব নদীতে পানি থাকলেও প্রায় সারা বছর থাকে পানিশূন্য।
তাছাড়া এসব নদী মরে যাওয়ার সাথে সাথে দু’পার্শ্ব অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। এখন এসব নদীর নাম বইয়ের পাতায় কিংবা মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশর কোটি কোটি মানুষ বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াসের কবলে পতিত হয়, সীমাহীন দূর্ভোগ পহাতে হয়, দুঃখের সীমা থাকে না। অকালে ঝরে য়ায় লাখ লাখ মানুষ, গরু ছাগল, হাঁস মুরগীর প্রাণ। জলবায়ুর উপর দেখা দেয় বিরৃপ প্রভাব।এর অন্যতম প্রধান কারণ মরন বাঁধ ফারাক্কা। মৃত. মৌলানা আবদুল হামিদ খাঁন ভাসানী ফারাক্ক ব্যারেজের বিরুদ্ধে ব্যারেজমূখি ফারাক্কা লং মার্চ করেছিলেন, ব্যারেজটির মারাত্মক পরিণতির কথা বিবেচনা করে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হয়ে এবং তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র দেশ হওয়ার কারণে কখনই তাদের অভিযোগ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। ফারাক্কা ব্যারেজ উজানে পানি প্রত্যাহারের প্রকল্প নয়। এটি একটি শত সহস্র বছর প্রবাহমান আন্তর্জাতিক নদীর গতিপথের সম্পূর্ণ পরিবর্তন যা আন্তর্জাতিক আইন কানুনের পরিপন্থী। গঙ্গা-পদ্মা অভিন্ন নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে, এ কথাটি আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারিনা কেন? আমাদের বলা উচিৎ নয় কি?

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন