শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, নিঃস্ব ৩ পরিবার

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেশ কিছু মৌজায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল উপশহর ও তার আশপাশ এলাকা ঘিরে আবাসন কোম্পানী গড়ে উঠেছে। এসব আবাসন কোম্পানীতে স্থানীয়দের জমি বিক্রি করে দেয়ার নামে ভুঁইফোড় দালালের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে অব্যাহতভাবে। এই সুযোগে কতিপয় জালিয়াত চক্র এসব কোম্পানীর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে তৎপর হয়ে উঠেছে। তাতে সাধারণ ও নিরীহদের জমি ও ঘরবাড়ি প্রকৃত মালিককে না জানিয়ে ভুয়াদাতা সাজিয়ে ও ভুয়া পর্চা ও দলিল সৃজন করে অসাদু উপায়ে আত্মসাৎ করছে। একের জমি অন্যের নামে নামজারি জমা ভাগ করে নেয় প্রতারক ও জালিয়াত চক্র। পরে সেই জমিই ভুয়া দাতা সাজিয়ে বিক্রি করে দেয় আবাসন কোম্পানীর কাছে। শুধু তাই নয় প্রকৃতভাবে নিরীহদের জমি সঠিক দাম প্রদানের প্রতিশ্রæতি দিয়ে বিক্রি করলেও সময়মতো উপযুক্ত দাম পরিশোধ করেনা। এসব অপকর্ম সম্পাদনে রয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও প্রতারক হিসেবে পরিচিত মাছুম চৌধুরী অপুর সরাসরি হস্তক্ষেপ। জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর এলাকার ছাদত আলীর মেয়ে মমিনা খাতুন অর্থাভাবে সিলেট শহরের ব্যাংক কর্মচারী মহি ইমাম চৌধুরীর বাসায় কাজ করতেন। সেখানে মমিনার সাথে বাড়ির মালিক মহি ইমাম চৌধুরীর অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিষয়টি জেনে মহি ইমাম চৌধুরীর বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা তাদের সিলেট থেকে তাড়িয়ে দেয়। মহি ইমাম ও মমিনা খাতুন এরপর থেকে জাঙ্গীর এলাকার ছাদত আলীর বাড়িতে ঘর জামাতা হিসেবে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের সন্তান মাছুম চৌধুরী অপু বড় হয়ে তার নানার সম্পদ মায়ের প্রাপ্ত অংশের দিগুণ লিখে নিয়েছে প্রতারণার মাধ্যমে। সম্পর্কের নানা হওয়ার কারণে ছাদত আলী তার নাতি অপুর অপকর্মে সায় দিলেও বাড়ি থেকে বিতারিত হতে হয় মাছুম চৌধুরী অপুকে। পরে ঢাকার সাভার থানার জিরাব এলাকায় একটি তৈরী পোশাক কারখানায় চাকুরি নেয়। এতেও সুবিধা করতে না পারায় স্থানীয় ঢাকা ভিলেজের পরিচালক বিল্পব কুমার সরকারের সাথে গড়ে তুলেন সখ্য। আর সাথে সখ্যর সুযোগে শুরু হয় জালিয়াতি কর্মকাÐের অবাধ দৌরাত্ম্য। একই সাথে অবৈধ সম্পদ ব্যয় করে স্থানীয় যুবক শ্রেণি ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে গড়ে তুলেন অপু বাহিনী নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তার জালিয়াতি ও অপকর্মকাÐের শিকার হয়ে একই এলাকার আফতাব উদ্দিন ও ভিংরাব এলাকার গোলজার হোসেন ও তার ছেলে মোহাম্মদ হোসেনসহ বেশকিছু পরিবার হারায় তাদের শেষ সম্বলটুকু। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবী, অপু সাধারণ লোকজনের সাথে চেক জালিয়াতি ও প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়ে কোটি কোটি টাকা। প্রতারণা করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। পরে ল্যান্ড বাজার.কম নামে একটি জমির দালালী সংস্থার নামে আবাসন কোম্পানী ও পূর্বাচল উপশহরের বিভিন্ন প্লটের দালালী শুরু করে। ভুয়া কাগজ ও পর্চা তৈরী করে মাঠ জড়িপ অফিস ও ঢাবা ভিলেজে ‘ক’ ও ‘খ’ তফসিলের সরকারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জমি বিক্রি করে। অন্যদিকে জমি বিক্রেতার সাথে চুক্তিমতো দাম পরিশোধ না করে অস্ত্রের মুখেও হাতিয়ে নেয় নগদ অর্থ। একই কায়দায় প্রতারণা করে ভিংরাব এলাকার গোলজার হোসেন ছেলে মোহাম্মদ হোসেনের ১৫ বিঘা জমি বিক্রি করে দেয়। পরে ঢাকা ভিলেজের অসাদু কর্মকর্তা সাথে যোগসাজশ করে মোহাম্মদ হোসেনকে ভুয়া চেক দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে মোহাম্মদ হোসেনকে ঢাকা ভিলেজের দুটি প্লটও বহুতল ভবন করে দেয়াসহ ঢাকা ভিলেজের শেয়ার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে শান্ত রাখে। এভাবে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি যে প্রতারণা তা বুঝতে পারে মোহাম্মদ হোসেন। একই কায়দায় তার বাবা গোলজার হোসেনের সাথেও প্রতারণা করে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, একইভাবে আফতাবউদ্দিনের সাথেও মোটা অংকের চেক জালিয়াতির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ অর্থঋণ আদালতে সেশন কোর্টে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়। উভয় মামলায় আদালত তাকে পৃথকভাবে ১ বছর করে সাজা প্রদান করে। তবে ভুক্তভোগীরা তাদের জমি ফেরত না পাওয়ায় এখন নিঃস্ব। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে প্রথমে গড়ে তুলেন সখ্য। আ.লীগের জনসভায় অবৈধভাবে আয় করা অর্থ ব্যয় করে জনবল উপস্থিতি দেখিয়ে হয়ে ওঠেন আস্থাভাজন ব্যক্তি। ফলে ৬ মাসের জন্য এমপি সাহেব তাকে ছাত্রলীগের উপজেলার নেতৃত্বে স্থান দেন। নেতৃত্ব পেয়েই শুরু করেন চাঁদাবাজি। আ.লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে ৬ মাস না পেরুতেই এমপি সাহেব তাকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেন। এমপির কাছে ঠাঁই না পেয়ে নেমে পড়েন পুনঃ সন্ত্রাসী কর্মকাÐে। এবার জমি দখল, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জালিয়াতি করে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের এলএ শাখা থেকে বিল উত্তোলন ও ভুয়া দাতা সাজিয়ে জমি বিক্রি ও চেক জালিয়াতির মত নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানায়, অপু চৌধুরীর বাহিনীতে রয়েছে একাধিক মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। জাঙ্গীর, মুশুরী, হারিন্দা, মধুখালী ও পিতলগঞ্জের শতাধিক যুবককে নেশাসক্ত তৈরীতে তার রয়েছে সরাসরি হস্তক্ষেপ। এদের মাঝে স্থানীয় আসাদ মিয়া তার ছেলেকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা যায়। পরে মৃত আসাদের পরিবার মাছুম চৌধুরী অপুকে দায়ী করে। তবে এ ব্যাপারে কোন মামলা হয়নি থানা বা আদালতে। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা আবু হোসেন ভুঁইয়া রানু বলেন, মাছুম চৌধুরী অপুকে সন্ত্রাসী ও নানা অপকর্মের অভিযোগে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানি। এ বিষয়ে মাছুম চৌধূরী অপু বলেন, আমি কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাÐের সাথে জড়িত নই। ঢাকা ভিলেজে জমির বিক্রি করি। এখানে কারো সাথে প্রতারণা করেননি বলে দাবী করেন তিনি। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী নেতা মাছুম চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে অত্র থানায় জমি সংক্রান্ত ও চেক জালিয়াতির অভিযোগ ব্যতীত কোন মামলা নেই। তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে বা ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন