বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দুই বছর বন্ধ থাকার পর জোড়াতালি দিয়ে ফের উৎপাদনে যাচ্ছে সিইউএফএল

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর জোড়াতালি দিয়ে ফের উৎপাদনে যাচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি রিঅ্যাক্টর লিকেজ ও কুলিং টাওয়ার অচল হয়ে পড়ায় কারখানাটি টানা দুই বছর বন্ধ থাকে। এরইমধ্যে বিসিআইসির মাধ্যমে ইতালিয়ান এএক্সও কোম্পানির কারিগরি সহায়তায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটির মেরামতকাজ সম্পন্ন করা হয়। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ফের উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ। তবে ৯ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ এ কারখানায় জোড়াতালি দিয়ে কতদিন উৎপাদন করা সম্ভব তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়। সিইউএফএল সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। ওই সময় কারখানাটির নির্মাতাকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান ২০ বছর মেয়াদ বেঁধে দিলেও পার হয়ে গেছে ২৯ বছর। বিভিন্ন সময়ে গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটিতে কারখানাটি ৮/৯ মাস বন্ধ থাকলেও এবার সর্বোচ্চ উৎপাদন বন্ধ থাকে দুই বছর। এতে কারখানার ৬ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে চাকরি নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি সার কারখানার মধ্যে সিইউএফএলে উৎপাদন খরচ সবচেয়ে কম। কিন্তু সার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস ও মিঠা পানি সংকটের কারণে দফায় দফায় বন্ধ রাখতে হয়েছে কারখানাটির উৎপাদন। এটি পুরোদমে চালু করতে প্রয়োজন হয় ৫২ মিলিয়ন সিএফডি গ্যাস। তাছাড়া কারখানাটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় অনেক যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার ফলে বেশিরভাগ সময় কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ ছিল। কারখানার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ৯ বছর আগে পুরো প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কারখানার বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে কিছু কিছু যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা হলেও বাকিগুলো ঝুঁকির মধ্যে আছে। এছাড়া কারখানা চালু থাকলে প্রতি ঘণ্টায় ৮ শত মেট্রিক টন করে দৈনিক ১৯ হাজার ২ শত মেট্রিক টন পানির প্রয়োজন হয়। এ কারখানা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কালুরঘাট ওয়াটার প্ল্যান থেকে পানি এনে প্রতিষ্ঠান চালানো হয়। কিন্তু কর্ণফুলী নদীতে পানির লবণাক্ততা বেড়ে গেলে চাহিদামত পানি নেয়া সম্ভব হয় না। তখন অন্য উৎস থেকে পানি এনে কারখানাটি চালু রাখতে হয়। তবে পানির সমস্যা সমাধানে সরকারের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি এক সপ্তাহ আগে সিইউএফএল পরিদর্শন করে গেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে বিসিআইসি পানির সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে। সূত্র আরো জানায়, সিইউএফএল সার কারখানায় উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় বিসিআইসিতে এ সংক্রান্ত মাসিক বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ভুইয়া কারখানার সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন। অচল হয়ে পড়া কারখানার রিঅ্যাক্টর লিকেজ ও কুলিং টাওয়ারের মেরামত কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি কারখানায় গ্যাস সংযোগ পাওয়া গেছে। ফলে ১৭ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারখানায় আপাতত দৈনিক ১৪-১৫ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা যাবে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে চাকরি হারানোর শংকা ছিল বেশি। আবার অনেকের অন্যত্র বদলিও হয়ে গেছে। সম্প্রতি কারখানা চালুর খবরে শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ভুইয়া ইনকিলাবকে জানান, গ্যাস সংকটসহ নানা সমস্যায় দীর্ঘ দুই বছর কারখানা বন্ধ ছিল। এ সময়ে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানার মেরামতকাজ সম্পন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে কারখানায় গ্যাস সংযোগও পাওয়া  গেছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন