শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ৫ লাখ মানুষের ঈদ আনন্দ ম্লান

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়ে এবং প্রকৃতির সাথে নিরন্তর যুদ্ধ করে আইলায় বিধ্বস্ত ঘুরে দাড়ানো বৃহত্তর খুলনার উপকুলীয় অঞ্চলের ৫ লাখ মানুষের জীবনে এবার ঈদ, ঈদের মত কোন আনন্দের বার্তা নিয়ে আসতে পারেনি। রমজানের শেষ। পবিত্র ঈদ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এ বছর খেয়ে না খেয়ে ইফতারী ও সেহেরী করতে হয়েছে তাদের। সাতক্ষীরা আর খুলনার অংশ বিশেষে ভিটে বাড়ি হারা মানুষের দুর্দিন যেন আর শেষ হচ্ছে না। ঈদ তাদের কাছে কোন আনন্দের বারতা বয়ে আনবে না। তাদের বক্তব্য আমাদের আবার ঈদ কিসের......। অতি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে কপোতক্ষের পাড়ের ৩ থেকে ৪ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও সরকার নানাভাবে সাহায্য করছে গৃহ হারা এই মানুষদের। এর সাথে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বিত্তবান ও দানশীল মানুষেরা। হয়তো “রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” গানটি এবার তাদের হৃদয়ের দরজায় তেমনভাবে কড়া নাড়তে না পারলেও প্রত্যেকেই তাদের সীমিত সাধ্য নিয়ে ঈদ পালনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। বাঁধভাঙ্গা প্লাবিত ও আইলা ক্ষতিগ্রস্ত অনেক স্থানে এখনও চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বেচে থাকাই এখন তাদের প্রানান্ত চেষ্টা। কোনমতে খেয়ে না খেয়ে সেহরী ও ইফতারী করেছে এরা। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে দিনের এক একটি সময় অতিবাহিত হচ্ছে তাদের। ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে রোদ্দুরে পুড়ে জীবন যাপন করছে হতভাগ্য মানুষগুলো। আগে এই মানুষগুলোই সাচ্ছন্দে রোজা পালন ও ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে একাকার হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে একসময়ের গৃহস্থ এখন পথের ভিখারী। অবর্ননীয় কষ্টে আছে তারা।
অতিবর্ষণে বন্যায় খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় দুর্গত এলাকার ১০ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। মানুষ সেখানে চরম মানবতের জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে এ অঞ্চলের প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া করছে কোনমতে। শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং অনেক জায়গায় এগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় এসব কলেজ, স্কুল, মাদরাসার লেখাপড়াসহ সকল কার্যক্রম চলে ঢিমেতালে। অপরদিকে আসান্ন এই গোনে অনেক তাৎক্ষণিকভাবে আটকানো বাঁধ আবার ভেসে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। তাছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ভোগান্তি আরো বেড়ে যাবে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও ত্রানসামগ্রীর তীব্র সংকট রয়েছে। সরকারিভাবে ঈদ উপলক্ষে টিআরের ১৪ কেজি গম এর পাশাপাশি কিছু কিছু স্থানে সামান্য ঈদ বোনাস হিসেবে চাল ও শাড়ি লুঙ্গি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। সরু বাঁধের উপর ছাপড়াঘর তুলে এখনো বসবাস করছে হাজার হাজার দুর্গত মানুষ। দুর্গত এলাকার প্রধান সমস্যা বিশুদ্ধ পানি। রমজানে মাসে সেহরী ও ইফতারীতে খাবার পানির সংকট তীব্রভাবে অনুভুত হয়েছে। সরকারের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার ত্রাণ থেকে তারা বঞ্চিত।সংশ্লি­ষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৫ মে ২০০৯ প্রলয়ংকারী ঘূণিঝড় আইলার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। প্রবল জোয়ারে ভেসে যায় ঘর বাড়ি আসবাবপত্র, বই খাতা, কলম। বহু মানুষ হতাহত হয়। তারপর আইলার ঘাঁ শুকাতে না শুকাতেই প্রতি বছর বাঁধ ভাঙ্গন ও অতি বর্ষণে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, কপোতক্ষসহ এ অঞ্চলের নদ-নদী গুলো একে একে শুকিয়ে যাওয়া, নদী দখল, ঘের পাটা দিয়ে নদী প্রবাহ আটকে রাখা, অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছাভাবে চিংড়ি ঘেরের কারণে এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে। পানি আটকে থাকছে, সরচ্ছেনা। জলাবদ্ধতার ফলে ইতোমধ্যে ঘর বাড়ি ছেড়ে রাস্তার উপর, স্কুলে, উচু জায়গায় খুবই অমানবিকভাবে জীবন যাপন করছে।
কয়রা সংবাদদাতা মোস্তফা শফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বর্ষণে অনেক বাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম হয়। এবার বর্ষণে প্রায় ৪টি ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বের করার কোন উপায় নেই। এছাড়া দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভেঙ্গে যাওয়া অংশ দিয়ে লোকলয়ে জোয়ার ভাটা হচ্ছে। কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি মারাত্মাকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, খুলনা জেলার দাকোপে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে কয়েকটি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রæত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি মেরামত না করলে যে কোন সময়ে বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ সকল ঝঁকিপূর্ণ স্থানগুলির ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের এক তৃতীয়াং নদী গর্ভে বিলিন হলেও মাত্র কয়টি স্থানে সংশিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবকদের সহায়তায় এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত ও বিকল্প বেড়িবাঁধের কাজ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় বলে এলাবাসীর অভিযোগ। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে এবারের ঈদ অত্যন্ত আতঙ্ক ও বেদনার। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের জীবনে ঈদের আমেজ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন