শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

রোহিঙ্গাদের কান্না শোনার কেউ নেই

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পবিত্র ঈদুল আযহা সমাগত। সারা বিশে^র মুসলমানরা যখন আল্লাহর রাহে ত্যাগের নিদর্শন হিসেবে পশু কুরবানি দেয়ার আয়োজন করছে, সে মুহূর্তে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম, হিং¯্র ও নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। এ এক হতভাগ্য জনগোষ্ঠি, যাদের পৃথিবীতে কেউ নেই। কেউই তাদের জন্য কথা বলে না, তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় না। তাদের কান্নার শব্দ কারো কানে পৌঁছায় না। তাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। একটি পাখিরও জীবনের মূল্য আছে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বাস করার পরও তারা সে দেশের নাগরিক নয়। তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমারের নিষ্ঠুর শাসকরা। রোহিঙ্গা মানে মুসলমান, মুসলমান মানেই ঘোর শত্রæ। যখন তখন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জ¦লে ওঠে হিংসার আগুন। নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা ক্ষমাহীন ক্রোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে রোহিঙ্গা জনপদগুলোতে। বইয়ে দেয় রক্তের স্রোত, আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত করে ঘরবাড়ি। নারী-পুরুষ-শিশু কারো রক্ষা নেই হিং¯্র পশুদের কবল থেকে। কিশোরী, তরুণী, যুবতীর পবিত্র সম্ভ্রম লুট করছে তারা, তাদের জীবনে ডেকে আনছে অন্ধকারের হাহাকার। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এ নির্মমতা। কোনোভাবেই যেন এর থেকে নিস্তার নেই হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের। জীবন বাঁচাতে তাদের অনেকেই আজ দেশছাড়া। সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে গিয়ে বিগত বছরগুলোতে সলিল সমাধি হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গার। বিদেশের আশ্রয় শিবিরে মানবেতর অবস্থায় কাটছে অনেকের জীবন। রক্তপিপাসুদের তাÐবে বিপন্ন হয়ে রোহিঙ্গারা জীবন-সম্ভ্রম বাঁচাতে ছুটে আসছে বাংলাদেশে। কিন্তু তাদের ভাগ্য বিরূপ। সম্প্রতি এখানেও নিভে গেছে তাদের আশার প্রদীপ। বাংলাদেশের সীমান্তও বন্ধ তাদের জন্য। ফাঁক-ফোকর গলে কেউ ঢুকলেও আবার তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে মিয়ানমারের হিং¯্র পশুদের থাবার নীচে। মৃত্যু ও ধ্বংসই আজ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির অনিবার্য বিধিলিপি।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর নতুন করে সহিংসতার গজব নেমে এসেছে যার পরিণতিতে বাংলাদেশ অভিমুখে তাদের ঢল নেমেছে। জানা যায়, ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশের বেশ কিছু পুলিশ ফাঁড়িতে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এতে ১২ জন পুলিশ এবং ৭৭ জনের মত রোহিঙ্গা হামলাকারী নিহত হয়। এর পর শুক্রবার থেকে শুরু হয় রাখাইন প্রদেশের হামলা সংঘটিত হওয়া এলাকাগুলোতে সেনা অভিযান। এর মধ্য দিয়ে হত্যা, গ্রেফতার, ধর্ষণের মহোৎসব শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ভিডিওতে তোলা ছবিতে দেখা যায়, বাড়িঘর জ¦লছে আগুনের লেলিহান শিখায়। অসহায় মানুষ তাদের সব কিছু ভস্মীভূত হতে দেখে চিৎকার, আর্তনাদ করছে। এদিকে প্রাণ বাঁচাতে, সম্ভ্রম বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু ছুটছে পাহাড়-বন-জঙ্গল পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। কিন্তু, বাংলাদেশ সীমান্ত তাদের জন্য বন্ধ। স্থলপথ, নৌপথ থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীদের প্রতি সরকারের নির্দেশ, কেউ যেন ঢুকতে না পারে। সীমান্তের ফাঁক-ফোকর দিয়ে কেউ ঢুকে পড়লেও তাকে পুশব্যাক করা হচ্ছে। সীমান্তে এখন খোলা আকাশের নিচে, গাছতলায় অবস্থান করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সৈন্যরা তাদের উপর গুলি চালাচ্ছে। বাধ্য হয়ে অসহায় বহু মানুষ অবস্থান নিয়েছে নোম্যান্সল্যান্ডে। কোথাও বিজিবি তাদের যৎসামান্য কিছু সাহায্য সামগ্রী দিলেও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দিতে তারা অটল।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট ঢাকাস্থ মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সাথে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানিয়েছে। একটি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী নয় বলে তাতে সাড়া দিচ্ছে না।
এদিকে পর্যবেক্ষকরা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট পেশের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এ সহিংসতা শুরু হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কফি আনানের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হয় ২৩ আগস্ট। আর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোর পুলিশ চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটে ২৪ আগস্ট। রাখাইন কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্টে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে উগ্রবাদের উত্থান ঠেকাতে এবং শান্তি ফিরাতে চাইলে মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে ও তাদের চলাফেরার উপর আরোপিত বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে। তা নাহলে উগ্রবাদী গোষ্ঠিগুলো অধিকার বঞ্চিতদের তাদের দলে ভিড়াবে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলপ্রয়োগ করে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের দমন করতে চাচ্ছে তা সফল হবে না বলেও কমিশন হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এ সংগঠনটির নাম আগে শোনা যায়নি। তবে আগে থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। তার পশ্চিমাংশের এলাকা আরাকান বা রাখাইন নামে পরিচিত ছিল। কয়েকশত বছর ধরে রোহিঙ্গারা আরাকানে বাস করে আসছে। তাদের আজ মিয়ানমার সরকার ও উগ্র বৌদ্ধরা বাঙালি বলে আখ্যায়িত করে। অথচ রোহিঙ্গারা নিজেদের বাঙালি মনে করে না। তারা নিজেদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোসাঙ্গের অধিবাসী হিসেবে রোহিঙ্গা বলে পরিচিত। ইতিহাস বলে, আরাকান এক সময় ছিল স্বাধীন রাজ্য। আট-নয় শতকে কিছু আরবীয় বণিক সেখানে আসে। তখন থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সেখানে তুর্কি, ইরানি, বাঙালি মুসলিমরা গিয়ে বসতি স্থাপন করে। জানা যায়, পনেরো শতকে আরাকানের তৎকালীন রাজা নরমিখলা রাজ্য হারিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। পরে বাংলার সুলতানের সৈন্য সাহায্যে তিনি রাজক্ষমতা পুনর্দখল করেন। তার সাথে বহু মুসলিম বাংলাভাষীর আরাকানে আগমন ঘটে। বস্তুত সব মিলিয়ে রোহিঙ্গারা মিশ্র ভাষাভাষী এক মুসলিম জনগোষ্ঠি। তবে তাদের ভাষার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার আংশিক মিল আছে। যাহোক, মুসলিমরা এক পর্যায়ে সেখানে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। শাসন ক্ষমতায়ও তাদের বড় রকমের অংশগ্রহণ ছিল। সতেরো শতকে কবি আলাওল (তাঁর জন্মস্থান বর্তমান মাদারিপুর ) আরাকান তথা রোসাঙ্গ রাজদরবারে সভাকবি ছিলেন। একই সময়ে ছিলেন দৌলত কাজী নামে আরেকজন কবি, যিনি পদস্থ রাজকর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের। এ ছাড়া লশকর উজির আশরাফ খান, মাগন ঠাকুর প্রমুখ অমাত্য ও মন্ত্রীর কথাও জানা যায়। ভৌগোলিক কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে প্রতিবেশী আরাকান অঞ্চলের বরাবরই ভালো যোগাযোগ ছিল। সম্ভবত রাজক্ষমতায় মুসলিমদের প্রাধান্যের কারণে ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির সাথে সতেরো শতকেই তাদের ব্যাপক দ্ব›দ্ব-সংঘাত শুরু হয়। আঠারো শতকে বার্মার রাজা আরাকান রাজ্য দখল করে নেন। ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা বার্মা দখল করে। ব্রিটিশ আমলে মাঝেমধ্যে এ সংঘাতের বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে তাদের কঠোর শাসনে একটি স্থিতাবস্থা বজায় ছিল। বার্মার স¦াধীনতা লাভের পরও কিছুদিন বজায় ছিল তা। কিন্তু পরে সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার বাতিলসহ বিভিন্ন বঞ্চনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ’৭০ দশকের শেষ ভাগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় জাতিগত নির্মূল অভিযান যা এখনো চলছে। তখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখের কাছাকাছি। এ নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশত্যাগ করেছে। নিহত হয়েছে বহু। আরাকান যার বর্তমান নাম রাখাইন প্রদেশ, সেখানে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখের মতো।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত ও রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী। বলা দরকার, রোহিঙ্গা সমস্যা কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটা রোহিঙ্গাদের সৃষ্ট সমস্যাও নয়। বরং এটি সম্পূর্ণ রূপেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের ঐতিহ্যগত প্রতিহিংসাজাত এবং একটি মানবিক সমস্যা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণরূপে অবাঞ্ছিত। তাদের নাগরিক অধিকার না থাকায় তারা সেদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে যেমন বঞ্চিত, তেমনি তারা কোনো সরকারি চাকুরিও পায় না। নিজ সমাজের বাইরের জনজীবনে তাদের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। বিয়ে করার জন্য, এমনকি সন্তান জন্ম দিতে হলেও তাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। তারা সরকারি অনুমতি ছাড়া এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে পারে না, জমির মালিক হতে পারে না এবং বিয়ের সময় দু’টির বেশি সন্তান না নেয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। বিশে^র আর কোনো রাষ্ট্রে আর কোনো জনগোষ্ঠিই এরূপ নিষ্ঠুর নিপীড়নের শিকার নয়।
এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই যে, রোহিঙ্গাদের কী উপায় হবে? এই একুশ শতকে এসে মানব সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগে গোটা বিশ^ যখন ডিজিটাল প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করছে, কারো পক্ষেই যখন শক্তির বেপরোয়া প্রয়োগে কোনো জাতিগোষ্ঠিকে নির্মূল করে ফেলা যথেষ্ট রকম কঠিন, সেই সময়ে মানবতার এই লাঞ্ছনা, গণহত্যা, নারীর সম্ভ্রমহানির এ মহোৎসব চালানো সম্ভব কিনা? আর বাকি বিশ^ নীরবে বসে তা দেখবে কিনা। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এখন অনেকটাই সোচ্চার, তাদের নাগরিক অধিকার প্রদানের জন্য ক’দিন আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবানও জানিয়েছে। দেশটির সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি, করবে বলেও মনে হয় না। সেক্ষেত্রে মিয়ানমারকে বাধ্য করার মতো পদক্ষেপ জাতিসংঘ নেবে কিনা, নিতে পারবে কিনা তা বলা মুশকিল। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর (যেমন জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি) সমর্থনের প্রয়োজন। সমস্যা হচ্ছে, বহু রকম স্বার্থে অন্ধ ও প্রচÐ মতপার্থক্যের শিকার বিশ^ পরাশক্তিগুলো এবং প্রভাবশালী দেশসমূহ ও সংগঠন (যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন) রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আগ্রহহীন। বিশেষ করে, নয়-এগারোর ঘটনা ও পরবর্তীতে আল কায়েদা, আইএসের মতো তথাকথিত ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের নানা অপতৎপরতা ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশে^র বিরাট অংশে ইসলামোফোবিয়ার সৃষ্টি করেছে। ফলে মুসলিমদের বিষয়ে তাদের স্বভাবগত অনাগ্রহ এখন অনীহা বা পরিহারের রূপ নিয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, গৃহযুদ্ধ এবং পাকিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর সহিংসতার শিকার হয়ে আজ ধুঁকছে। এ সব কারণে ইসলামী উম্মাহ সাম্প্রতিককালে ভীষণ রকমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ’৭০ ও ’৮০-এর দশকে মুসলিম বিশে^ বিরাট সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার আলো জে¦লে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা ওআইসি (ইসলামী সম্মেলন সংস্থা, পরে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা) আজ পরিণত হয়েছে নিষ্প্রভ, দ্যুতিহীন এক কাগুজে সংস্থায়। যে সংস্থাটি হয়ে উঠেছিল মুসলিম বিশে^র পরিচয়ের প্রতীক, তা আজ এমনভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে যে, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই ভার। ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে ব্যর্থতা, কাশ্মীর সমস্যা, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাকের কুয়েত দখল ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, আফগানিস্তান ও পরে ইরাকে মার্কিন হামলা ইত্যাদি বিষয়গুলো ওআইসিকে মুমূর্ষু করে ফেলে। সংস্থাটি আর গা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তাই এ ওআইসি আজ আর মুসলিম বিশে^র জন্য কোনো আশা-ভরসা নয়।
জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত রাখাইন কমিশনের সুপারিশ মিয়ানমার সরকার গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে কিনা তা বলা সম্ভব নয়। ধারণা যে, সর্বশেষ সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে এ রিপোর্টের বিষয়কে আড়ালে নেয়ার চেষ্টা করবে মিয়ানমার সরকার। এখন জাতিসংঘ যদি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে একটা ভালো কিছু ফল আশা করা যেতে পারে। তবে এ মুহূর্তে সবেচেয়ে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন ওআইসির। কিন্তু ২৮ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নীরবতা পালন করেছে সংস্থাটি। বরং বলতে হয়, খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ রোববার রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষার আবেদন জানিয়ে মানবতাবোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আফসোস যে, গোটা বিশে^র সাথে সমগ্র মুসলিম বিশ^ও রোহিঙ্গা হত্যা-নিপীড়ন বিষয়ে নীরবতা পালন করছে। এ অবস্থায় হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের জন্য আল্লাহতালার রহমত কামনা করা ছাড়া আর কিছু করার আছে কী?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mohammed Abdur Shukkur ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১:৫৩ পিএম says : 0
আল্লাহ আছেন।
Total Reply(0)
Md Manik Ali ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১:৫৩ পিএম says : 1
ঠিক বলেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন