শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে আছেন আমাদের হৃদয়ে

অধ্যাপক ড. এম এ মাননান | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৯৭১ এর ডিসেম্বরে গ্রাম এলাকা হয়ে উঠের্ছিলো রাজাকারদের কসাইখানা। তাদের ভীতিজনক উৎপাত দেখে রংচটা লুঙ্গি আর হাফ সার্ট পরে কুমিল্লা থেকে যাত্রা করে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছলাম রাত প্রায় একটার দিকে। হানাদার বাহিনীর প্রিয় জিনিস ’ডান্ডি কার্ড’ সাথে না থাকলে রাস্তাতেই হতো আমার জীবনের যবনিকাপাত। লঞ্চ থেকে বাদামতলীর কাছাকাছি বুড়িগঙ্গার পাড়ে নামতেই ধরা পড়লাম পাকসেনাদের হাতে। ডাÐি দেখাও বলার সাথে সাথে পান দোকানের কর্মচারির নামে তৈরি করা কার্ডটা দেখালাম। কনুই আর হাঁটু পরখ করে ’ডান্ডি কার্ড’ দেখে হাই পাওয়ারের চশমা পরা ছেলেটিকে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে ছেড়ে দিলো। মেইন রোড ছেড়ে অলিগলি দিয়ে আতঙ্কিত মনে তাঁতীবাজারের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠলাম। পরের দিন জগন্নাথ কলেজে পড়–য়া এক আত্মীয়কে নিয়ে নয়াবাজারের দিকে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। গুটি কতক মানুষের সতর্ক আনাগোনা, রক্তাত্ত পিচঢালা পথ, আগুনে পোড়া সব দোকানপাট আর পচা ক্ষত-বিক্ষত লাশের দুর্গন্ধে ভারী পুরনো ঢাকার বাতাস। সঙ্গীকে নিয়ে বংশালের ভিতর দিয়ে কুখ্যাত খোন্দকার মোশতাক আহমেদ-এর বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে বদরুন্নেছা কলেজের পাশ দিয়ে বুয়েটের সামনের রাস্তা হয়ে পলাশী মোড়ে এসে পরিচিত দোকনদারদের সাথে কথা বলে খোঁজ-খবর নিয়ে আমার প্রিয় মাস্টারদা সূর্যসেন হল (তখন জিন্নাহ হল)-এ আমার ১০৮ নম্বর রুমটি দেখার জন্য কিছুদূর এগোতেই দেখি পাক হানাদার বাহিনীর গুম্পধারী কয়েক জন সেনা মহসিন হলের মাঠে বসে গল্প-গুজবে মেতে আছে। আর এগুলাম না। নীলক্ষেতের পরিচিত একটি লেপের দোকানে বসলাম। কথার ফাঁকে জানলাম সে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাই ঢাকায় আছে। অনেক খবর তার জানা। তার কাছ থেকেই জানলাম সব ছাত্রহলে পাকবাহিনী লুট করেছে আর এখন ক্যাম্প বানিয়েছে। কর্মচারিদের গুলি করে আর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ঘটনার সাক্ষী, মধুর ক্যান্টিনের স্বত্বাধিকারী জীবন্ত ইতিহাস মধুদাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শিরদাঁড়া বেয়ে একটা অজানা ভয়ের ¯্রােত বয়ে গেলো যখন শুনলাম ভয়ঙ্কর সেই দিনের কথা যেদিন ঋষিতুল্য অমায়িক শান্তশিষ্ট অজাতশত্রæ সমসাময়িক কালের অন্যতম সেরা দার্শনিক অধ্যাপক জি সি দেবকে অসভ্য বর্বর হানাদাররা তাদের দোসর আলবদর বাহিনীর শয়তানতুল্য জল্লাদদেরকে সাথে নিয়ে শিববাড়ির বাসা থেকে টেনে-হেঁচড়ে জগন্নাথ হলের মাঠে নিয়ে হলের ছাত্র-কর্মচারিদের সাথে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মাটিচাপা দিয়ে হায়েনার উল্লাসে ফেটে পড়েছিলো। শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষককে ধরে নিয়ে গেছে নাম-না-জানা কোথাও। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাকেই পাচ্ছে তাকেই নির্বিচারে হত্যা করছে। আতঙ্কিত আমি একটুও বিলম্ব না করে অলিগলির ফাঁকফোঁকর দিয়ে চলে গেলাম। গায়ে আগের দিনের পোশাক, পকেটে পান দোকানের ডান্ডিকার্ড, গতকাল আমার বেঁচে ফিরে আসার ট্রাম্পকার্ড।
অনেকটা ঘরবদ্ধ জীবন কাটাচ্ছিলাম। ভয়ংকর দিনগুলো নিঃশব্দে কেটে যায়। ১৩ কী ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয় ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ ঢাকার আকাশে। এ প্রথম জঙ্গী বিমান দেখা। বাড়ির ছাদে উঠে দেখতাম কী ভয়ঙ্কর অপরূপ ভঙ্গিতে জঙ্গী বিমানগুলো নিঃসীম আকাশে মোহনীয় ভঙ্গিতে চক্কর দিতে দিতে পাকিস্তানী জঙ্গী বিমানগুলোর দিকে গোলা ছুড়ছে। রেডিও’র খবর শুনে জানলাম ভারতীয় আর মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মিত্রবাহিনী আর কাদেরিয়া বাহিনী আসছে রাজধানীর দিকে। বিভিন্ন স্থানে হানাদার পাকবাহিনী পিছু হটছে। এমনতরো সময়ের মৃত্যু-শীতল সেই ক্ষণটির কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠি: ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে ইংলিশ রোডের মোড়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছিলাম। হঠাৎ দুজন বিহারি তাঁতী বাজারের রাস্তা থেকে এসে আমার গায়ের লাল রঙের সোয়েটারটির একপাশ ধরে টান দিয়ে ধরে কর্কশ গলায় আধো বাংলা আধো উর্দুতে জানতে চাইলো, আমি কেন ছাদ থেকে গতকাল হাত নেড়ে নেড়ে ভারতীয় বিমানের দিকে কীসব ইঙ্গিত করছিলাম। চলন্ত মানুষেরা সতর্ক দৃষ্টিতে আমার দিকে দেখছে আর নি:শব্দে চলে যাচ্ছে। বলে রাখা ভালো, তখন অল্প কয়েকটি ছাড়া পুরো তাঁতী বাজার আর শাঁখারি বাজার এলাকার বাড়ি-ঘরগুলো বিহারিদের দখলে। অল্প সংখ্যক বাঙালিরা তাই সব সময় শংকিত থাকতো। অনেক করে বোঝানোর পর তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো এরপর আমরা তোমাকে ছাদে দেখলে বাড়িতে গিয়ে ধরে নিয়ে যাবো। সন্ত্রস্ত মনে বাসায় ফিরে গেলাম। রাতেই রেডিও’র খবরে শুনলাম, কাল অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর নিকট রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করবে। সারা রাত ও-বাড়ির কেউ আমরা ঘুমাইনি। অপেক্ষা করছি পূর্ব দিগন্তে কখন স্বাধীনতার লাল সূর্যটার উদয় হবে। সকাল প্রায় ৭টার দিকে নয়াবাজার হয়ে কয়েকজন মিলে ছুটলাম রেসকোর্স ময়দানের দিকে যে ময়দানে সত্তরের দিনগুলোতে রোজ ভোরে জিন্নাহ হল থেকে এসে জগিং করতাম। পায়েদল চলে এলাম রেসকোর্স ময়দানের পশ্চিম পাশের রাস্তায় বাংলা একাডেমির সামনে। দেখি অগণিত লোকজনের মিছিল। আসছে তো আসছে, বেশুমার লোকজন চারদিক থেকে ছুটে আসছে।
বাংলা একাডেমির পাশে শিববাড়ির সরু রাস্তাটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত কয়েকজন কর্মচারিকে পেয়ে গেলাম। তাদের কাছ থেকে শুনলাম বিগত কয়েক রাতের রোমহর্ষক ঘটনা। সিনিয়র অধ্যাপকদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া, মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার মর্তুজাকে গুলি করে হত্যা, শিববাড়ির বস্তিবাসীদের নির্বিচারে মেরে ফেলা, রেসকোর্স ময়দানের বিখ্যাত কালীমন্দিরটি গুঁড়িয়ে দেয়া, আরও আরও সব ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা।
আমার স্মৃতিচারণের বেশির ভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে যেখানে পার করেছি প্রায় অর্ধশত বছর, ছাত্র আর শিক্ষক হিসেবে। শহীদ মিনার রোড, ঈশা খাঁ রোড, আনন্দ বাজার কোর্য়াটার, নীলক্ষেত আবাসিক এলাকা, জগন্নাথ হলের সড়কগুলো দিয়ে যতবার হেঁটেছি মনের ভেতরে গুমরে উঠেছে আর্তনাদ, হাহাকার আর গোঙ্গানির আওয়াজ। প্রিয় শিক্ষকদের মুখগুলো ভেসে উঠেছে মানসপটে। আজ সেই পুরোতন তিনতলা বিল্ডিং ভেঙ্গে আকাশচুম্বি কোর্য়াটার হয়েছে কিন্তু পুরনো স্মৃতিগুলো সব হৃদয়ের মণিকোঠায় সঞ্চিত হয়ে আছে।
জেনেছিলাম, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ২৫ মার্চের আগেই। আর এ জঘন্য কুটকৌশল আঁটে মেজর জেনারেল ফরমান আলী যার ডায়েরী থেকে বুদ্ধিজীবীদের একটা তালিকায় সারাদেশের হাজারখানেক প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গের নাম পাওয়া যায়। তবে হত্যার মুল ক্ষেত্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৫ মার্চ রাত থেকে ২৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় আধুনিক রাইফেল, ট্যাঙ্কবিধ্বংসী বিকয়েলস্, রকেট লাঞ্চার, মর্টার আর হালকা মেশিনগান নিয়ে বিশ্বাসঘাতক পাকবাহিনী অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জেনেছি, প্রথম হামলা হয় নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ২৩ নং বাড়িতে যেখানে দুই আত্মীয়সহ মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ফজলুল রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর হানা দেয় অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও রাশিদুল হাসান স্যারের বাসায়। কিন্তু বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার ঘর থেকে ফিরে যায় হানাদার পশুরা। উভয় শিক্ষক ওই রাতে প্রাণে বেঁচে গেলেও আলবদর বাহিনী তাদের ঠিকানা খুঁজে বের করে পরবর্তীতে তাদের হত্যা করে। ২৪ নং বাড়ির বাসিন্দা বাংলার অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলামের বাসার সামনে আহত এক নারীর রক্ত দেখে হার্মাদের দল ফিরে যায়। প্রাণে বেঁচে যান স্যার। কিন্তু বাঁচতে পারেননি ফুলার রোডের বাসায় থাকা ভূতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুক্তাদির।
বিজয়-দিনের পর থেকে ছুটে বেড়িয়েছি রায়ের বাজার বধ্যভুমি, মিরপুরের জল্লাদখানা, কালাপানি, রাজারবাগ, নাখালপাড়া, মোহম্মদপুর, জগন্নাথ হলসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। স্মৃতির পাতা উল্টোলে আজো মনে ভেসে উঠে ১৪ ডিসেম্বরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেটি ছিল তখন ভয়ংকর পাকপশুদের নরকখানা। তাদের টার্গেট ছিল প্রগতিশীল, স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক শিক্ষক/বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে মেধাশূন্যতা তৈরি করে ভবিষ্যত বাংলাদেশকে পঙ্গু জাতির দেশে পরিণত করা।
কী অপরাধ করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ? অপরাধ ছিলো কি তার কন্ঠে থাকা জেগে-ওঠার জয়গান? নিভৃত কবি মেহেরুন্নেছাকে কী অপরাধে বিহারি অধ্যুষিত মীরপুরের বাসায় গলা কেটে তারই চুল দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো ফ্যানের সাথে? অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. হাবিবুর রহমান, ড. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, ড. রাশিদুল হাসান, সুখরঞ্জন সরকার, মীর আবদুল কাইয়ূম, শহীদুল্লাহ কায়সার আর জহির রায়হান কী দোষ করেছিলেন? তাদের ক্ষুরধার লেখনীই কি তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো? সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা, খোন্দকার আবু তালেব, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, শহীদ সাবের, সেলিনা পারভীন, শেখ আবদুল মান্নানসহ আরও অনেক প্রখ্যাত সাংবাদিক কি জনজাগরণের কথা লিখে অন্যায় করেছিলেন? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবদুল কাইয়ূমকে কেন পদ্মার তীরে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিলো? ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে কী কারণে জীবন্ত অবস্থায় বাঘের খাঁচায় ফেলে দেয়া হয়েছিলো? মাগুরার শিক্ষিকা লুৎফুন্নাহার হেলেনকে কেন জীপের পেছনে বেঁধে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে শহরের রাস্তায় ঘুিরয়ে হত্যা করা হয়েছিলো? যশোরের আইনজীবী মশিউর রহমানের চেহারা কী কারণে বীভৎসভাবে বিকৃত করে দেয়া হয়েছিলো? সৈয়দপুরের ডাক্তার শামশাদ আলীকে কোন্ অপরাধে ্েট্রনের জ্বলন্ত কয়লার ইঞ্জিনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছিলো? মীরপুরের ’জল্লাদখানা’ খ্যাত বধ্যভূমিতে কেন লোকদের হত্যা করা হতো? সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, পাকশী, ঈশ্বরদী, পাহাড়তলীতে ট্রেনের ইঞ্জিন কেন সব সময় জ্বালিয়েই রাখা হতো বুদ্ধিজীবীসহ অন্যদের পোড়ানোর জন্য?
ধর্মের ধ্বজাধারী পাকিস্তানী আর এদেশীয় বেঈমানরা এমনি এমনি সারা দেশের ৯৯১ জন বুদ্ধজীবীকে হত্যা করেনি। পরিকল্পনা ছিলো সুচিন্তিত আর আয়োজন ছিলো ব্যাপক। নিষ্ঠুরভাবে সারা দেশে তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজকে আলবদর বাহিনীর সদর দপ্তর বানিয়ে সদ্য ফাঁসি হওয়া জামাতে ইসলামীর মহাসচিব বুদ্ধিজীবী নিধনের মূলহোতা আলী আহসান মো: মুজাহিদ-এর নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। তাকে সক্রিয় সহায়তা করে মীর কাসেম আলী, বুদ্ধিজীবী কিলিং মিশনের ইনচার্জ চৌধুরী মঈনউদ্দিন আর চীফ এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খান। তারা এক এক করে হত্যা করেছে বুদ্ধিজীবীদের - অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, লেখক, ঔপন্যাসিক, শিল্পী, আইনজীবী, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, চলচ্চিত্রকার, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং অন্যদের যারা তাদের মেধা-মনন দিয়ে বাঙালিদের উজ্জীবিত করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসন্ন দেখে তারা ভীষণভাবে ঘাবড়ে গিয়েছিলো। পরাজয়ের চরম মূহুর্তে তারা নি:শেষ করে দিতে চেয়েছিলো তাদেরকে যারা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে অধিকার-সচেতন করে তুলেছিলেন, দেশব্যাপি রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাষ্টারমাইন্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আর পাকিস্তানী শাসকদের সৃষ্ট বৈষম্য, শোষণ আর সামাজিক-রাজনৈতিক অধিকার হরণের বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বাঙালিদের হৃদয়ে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানী শাসক আর পাঞ্জাবীপ্রেমী বাঙালিদের এসব সহ্য না হওয়ায় প্রথমে প্রচন্ড আঘাত হানে বাঙালিদের ভাষা আর সংস্কৃতির উপর এবং এরপর আঘাত হানে এদেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের উপর।
এ লেখনী আর কতো লিখবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনের মর্মন্তুদ বেদনার কাহিনী। কলম তো অশ্রুজলে ভিজে যাচ্ছে। জলভরা নয়নে লেখনী আর এগোতে পারে না। আনন্দের কথা সে লিখবে সেদিন যেদিন দেখবে সারা দেশব্যাপি বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল অপরাধীর বিচারের সাথে সাথে সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীর নির্ভুল তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নয়নের জল আড়াল করে আবার এ লেখনী লিখবে সুন্দরের জয়গান। মসি হয়ে উঠবে স্বাধীনতা-বিরোধীদের অশুভ চক্রান্ত রুখে দেয়ার বলে বলীয়ান চির-উন্নত অসি।
লেখক : উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন