শীতকালে গ্যাস সংকট চরমে ওঠে। এবারকার শীতে রাজধানীর এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে গ্যাস সংকটে ভুগছেন না ভোক্তারা। তিতাস কর্তৃপক্ষের মতে, শীতকালে বাসাবাড়িতে ২০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এ সময় গরম পানির জন্য গ্যাসের চুলা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শীতে তাপমাত্রা কম থাকায় গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহও ব্যাহত হয়। গ্যাসের লাইনে এ সময় তেলজাতীয় পদার্থ জমা হয়। দেশে এখন গড়ে প্রতিদিন গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে তিতাসের প্রতিদিনের চাহিদা ১ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সংস্থাটি পাচ্ছে ১ হাজার ৪৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ঘাটতির পরিমাণ ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট। শীতে গ্যাসের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব মিলিয়ে দৈনিক ঘাটতি দাঁড়ায় ৬৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্যাস সংকটের কারণে বিভিন্ন এলাকার গৃহিণীরা পড়েছে ঘোরতর সমস্যার কবলে। সকাল ও দুপুরে রান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেকে গভীর রাতে রান্না-বান্নার কাজ সম্পন্ন করছে বাধ্য হয়ে।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্প উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখা যেমন জরুরি, তেমনি আবাসিক চাহিদা পূরণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান অবস্থা মোকাবিলায় সরকারকে ভাবতে হবে। নতুন গ্যাসকূপ আবিষ্কারের দিকে যেমন নজর দিতে হবে তেমন তরল গ্যাস আমদানির বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বের দাবিদার। দেশের স্থলভাগে বড় ধরনের কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম থাকায় সাগর প্রান্তের গ্যাস অনুসন্ধানে জরুরিভিত্তিতে নজর দিতে হবে।
আবাসিক, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সিএনজি স্টেশন মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে কম। প্রতিদিন গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এই ঘাটতির মধ্যেই আবার একটি সঞ্চালন লাইন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছে। অবৈধ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহারের কারণেও সংকট প্রকট হয়েছে। রাজধানীতে জনসংখ্যা বাড়ছে। গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এই বাড়তি চাহিদা মোকাবিলার জন্য চাই আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায়ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। গৃহস্থালি বা আবাসিক কাজে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা স্বল্প গ্যাস ব্যবহার করে থাকে এবং অতি প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে খাবার তৈরির কাজে এ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এ সরবরাহ কোনোক্রমেই ব্যাহত করা যাবে না। এ ব্যাপারে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গ্যাস সরবরাহ।
এমনিতেই নাগরিক জীবনে দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। তার সঙ্গে গ্যাস সংকট যোগ হয়ে এখন তা রীতিমতো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। শীতে গ্যাস সংকট প্রতিবছরের ঘটনা হয়ে দাঁড়ালেও সংকট মোকাবিলার জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন ছিল, তা-ও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন