শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কুষ্টিয়ার চামড়াপট্টি স্থানান্তর প্রক্রিয়া ফাইলবন্দি

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না : পরিবেশ রায় যখন সরকারের নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে ঠিক তখন কুষ্টিয়া শহরের একেবারে মধ্যবর্তিস্থানে কাঁচা চামড়ার কারখানায় দিনভর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণ আর গুদামজাত করায় এক দুর্গন্ধে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। শহরের এ চামড়াপট্টিটি আবাসিক এলাকা থেকে স্থানান্তর করার জন্য ইতোপূর্বে বহুবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোন এক অজ্ঞাত কারণে ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরজমিনে শহরের ওই চামড়া পট্টিটি ঘুরে এমন দৃশ্যই পরিলতি হয়েছে। চামড়ার দুর্গন্ধযুক্ত পঁচাবর্জ্যে সেখানকার এলাকাবাসীর জীবন বিষিয়ে তুললেও চামড়াপট্টি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন স্বপ্নই রয়ে গেল। পচাবর্জের দুর্গন্ধে শহরের এই অভিজাত এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচলে নাকে রুমাল থাকলেও দায়িত্বরত পরিবেশবিদদের গন্ধ লাগেনা তেমন একটা। দিনের পর দিন নয়, সেই দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই একসময়ের শহরের এক কর্ণারে ফাঁকা জায়গায় গড়ে ওঠে কাঁচা চামড়া শিল্পের চামড়ায় লবনজাত প্রক্রিয়ার এই চামড়াপট্টি। শুরু থেকে কাঁচা চামড়া শিল্পের জন্য কোন সমস্যা না হলেও বর্তমানে এই কালের আবর্তে গড়ে ওঠা অভিজাত আবাসিক এলাকার পরিবেশ দুষিত হচ্ছে প্রতি নিয়ত। এখানকার পরিবেশ এতটায় দুষিত যে, এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ি ও ব্যাংক গ্রাহকদের ওই এলাকায় ঢুকতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে। শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এই চামড়াপট্টি স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেই কারো। চামড়াপট্টির ব্যবসায়ীরা ব্যবসার নিরাপত্তা ও উপযুক্ত পরিবেশ, ব্যাংক, অবাধে যাতায়াতের ভাল সুব্যবস্থা পেলে তারা চামড়াপট্টি স্থানান্তরের পে সব সসময়, কিন্তু তাদের এই দায়িত্ব নেবে কে বা কোন প্রতিষ্ঠান। চারটি চামড়া বোঝায় ভ্যান এসে দাঁড়ালো চামড়াপট্টির একটি আড়তের সামনে। একপিচ চামড়া নামানোর সাথে সাথে পচাঁ চিমটি দূর্গন্ধ পুরো এলাকার পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে দোকানগুলোতে আগত ক্রেতা, বিশেষ প্রয়োজনে শহরের আসা সাধারণ মানুষ, কুষ্টিয়া অঞ্চলিক আয়কর অফিসে কর দিতে আসা করদাতা, সোনালী ব্যাংকে আসা গ্রাহক সবাই এক মুহুর্তেই নাকে মুখে রুমাল চেপে ধরলো। থেমে গেলো অনেকটাই তাদের চলার গতি। কোন রকমে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে দ্রæত সরে গেলেন অনেকেই। চামড়া নামানো শেষে ব্যবসায়ীরা প্রতি দিনই উৎছিষ্ট পচাবর্জ পানি দিয়ে ধুয়ে নামিয়ে দিচ্ছে পৌরসভার আবদ্ধ ড্রেনে। সুর্যের তাপ বাড়ার সাথে সাথে আবদ্ধ ড্রেনের রক্ত মেশানো ও চামড়ার পচা বর্জ আরো পচে গলে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বেশি। এখানে জন্ম নিচ্ছে কোটি কোটি মশা। এই মশকবাহিনী অতিষ্ট ও বিষিয়ে তুলছে শহরবাসীকে এমন কথাই জানালেন ব্যাংক গ্রাহক আলাউদ্দিন। খোকসা থেকে আয়কর দিতে আসা ওষুধ ব্যবসায়ী ফয়সাল হাসান জানান, চামড়ার পচাবর্জের চিমটি গন্ধে এই অফিসেই আসা দায়। রিক্সা কিংবা হেটে আসার সময় দূর্গন্ধে বোমি উঠে আসে। সামলানো মুশকিল। সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাব আড়–য়া পাড়ার জনৈক ব্যক্তি জানালেন আরো ভিন্ন কথা, চামড়া পচার গন্ধ্যে ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ পথচারীরা নিত্য মুখোমুখি হওয়ার কারনে শ্বাসকষ্ট সহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পান্তরে পরিবেশ রায় নিয়োজিতরা কোন ব্যবস্থা নেয়া কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিমূলক এই খাতটিকে বাচিয়ে রাখতে চামড়াপট্টিটি স্থানান্তরে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানাতে কোন উদ্দ্যেগতো নেয়নি আজো। সব কিছু দেখেও তারা না দেখার ভান করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। কুষ্টিয়া চামড়াপাট্টির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কুষ্টিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর জানান, পরিবেশ দূষমনমুক্ত রাখতে চামড়া ব্যবসায়ীরাও বদ্ধপরিকর। দেশ স্বাধীনের অনেক আগে থেকেই একসময়ের শহরের এক কর্ণারে ফাঁকা জায়গায় হাতে গনা কয়েকটি আড়ৎ নিয়ে গড়ে ওঠে চামড়ায় লবনজাত প্রক্রিয়ার কাঁচা চামড়া শিল্পের এই চামড়াপট্টি। বর্তমানে এ পট্টিতে ছোট বড় দিয়ে প্রায় ৫০টি চামড়ার আড়ৎ রয়েছে। এসব আড়তে প্রতি বছর ১লাখ ৮০ হাজার থেকে ২লাখ পর্যন্ত গরু ও মহিষের চামড়া এবং ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ পিচ পর্যন্ত ছাগল ও ভেড়ার চামড়া লবনজাত প্রক্রিয়া করণ করে ঢাকা হাজারীবাগ ও যশোরের নয়াপাড়ার টেনারীতে আমদানী করা হয়।
গরু মহিষের প্রতি পিচ চামড়া ২ হাজার থেকে শুরু করে ৩ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়ার প্রতি পিচ চামড়া ২৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৩’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে প্রতি বছরের কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে ও চলমান অর্থনীতির চাকাকে আরো গতিশীল করতে প্রায় ৪০/৫০ কোটি টাকা যোগ হয়। তিনি বলেন কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল এই খাতটিকে বাচিয়ে রাখা সবার দায়িত্ব। চামড়া ব্যবসায়ীরাও পরিবেশ রার পরে লোক। চামড়াপট্টির ব্যবসায়ীরা ব্যবসার নিরাপত্তা, উপযুক্ত জায়গা ও পরিবেশ, ব্যাংক, সুবিধা, অবাধে যাতায়াতের ভাল সুব্যবস্থা পেলে চামড়াপট্টি স্থানান্তরের পে সব সসময়। কিন্তু তাদের এই দায়িত্ব নেবে কে বা কোন প্রতিষ্ঠান। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা মিন্ত্রণালয় যদি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে চামড়াপট্টি স্থানান্তর করে কুষ্টিয়া শহরের পরিবেশ না করা উদ্দ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে চামড়া ব্যবসায়ীরা সাধুবাদ জানাবেন। তিনি আরো জানান,এক সময় ব্যবসায়ীরা চামড়ার বর্জ যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিতো। এতে পরিবশে মারাত্বক দূষিত হত। কিন্তু বর্তমানে এ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ময়লা আবর্জনার সাথে চামড়ার উৎছিষ্ট বর্জ নিজ নিজ আড়তের গুছিয়ে রাখা হয় এবং পৌরসভার ময়লা নেয়া গাড়ী এলে গুছিয়ে তুলে দেয়া হচ্ছে। শুরু থেকে চামড়ায় লবনজাত প্রক্রিয়ায় কোন সমস্যা না হলেও বর্তমানে কালের আবর্তে গড়ে ওঠা অভিজাত আবাসিক এলাকার জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বইকি। আর এতে শহরের বাবর আলী গেট থেকে চামড়া পট্টিটি স্থানান্তর করা এখন এ এলাকার মানুষের এক মাত্র দাবী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন