(পূর্বে প্রকাশিতের পর) সময় রূপ নেয়, প্রকৃতি রুপ নেয়। একই খেজুর ভৌগলিক অবস্থা ও প্রকৃতিনুযায়ী রূপ আলাদা। আদম (আঃ) হতে এরূপ (মানুষের) চলে আসছে। আদম মাঝে এ ‘রুহ’ তার রূপের প্রকাশ।
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভৌগলিক প্রাকৃতিক পরিবেশে-তথা- মাটি, পানি, বায়ুর কারণে মানুষের রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। হুবহু একই রূপের বা চেহারার মানুষ দেখা যায় না। আত্মার সাথে রূপের দেহের একটা সম্পর্ক আছে। আত্মা অদৃশ্য আলো বা শক্তি যা জৈবিক সত্তায় এসে রূপ নেয়-বাপ-মার মাধ্যমে। বাপ-মার রূপের সাথে সন্তানের রূপ বা চেহারায় মিল দেখা যায়। এটা বাহ্যিক অবস্থা। ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মের ছাপ অনবরত পড়তে থাকে আত্মায়। এভাবে ভাল ও খারাপ ছাপ নিয়ে আত্মা তার প্রকৃত রূপ পায়। সেটা নিয়ে তাকে দুনিয়া হতে চলে যেতে হয়। আল্লাহ নিজেও বিভিন্ন সময়ে নব নব শানে বিভূষিত হয়ে প্রকাশিত হচ্ছেন। রাসূল (সাঃ) তাঁর বিভিন্ন সিফাতে ও বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন জগতে প্রকাশিত হয়েছেন ও হচ্ছেন তার নূরের আকৃতিতে।
এ মাটির পৃথিবীতে বিশ্ব প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করার জন্য যেমন বৃষ্টির প্রয়োজন হয়, তদ্রুপ নূরী জগতে (আলো) নূরী বৃক্ষ রাজী ও ফলমূলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নূরী বৃষ্টি হয়। যা হয় ঐসব জগতের জন্য আত্মার খোরাক। এর প্রতিটি জগতে রাসূল আহ্মদ রূপে তার অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন। মাহ্মুদ রূপে বিশেষ জগত যেমন - মহাসাগর এর নীচের জগতে তার ভূমিকা পালনরত। লাল আর সবুজ আলো সমগ্র সৃষ্টিতে বিরাজিত। প্রতিটি পদার্থে বিকশিত ও প্রকাশিত। ত না হলে এ সৃষ্টির লয় অনিবার্য।
বিভিন্ন সময় তিনি নানারূপে এসেছেন ও চলে গেছেন। সবশেষে তিনি আরবে প্রেরিত মহাপুরুষ রূপে আবির্ভূত হন এবং বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা সমগ্র দুনিয়া শাসন করলেন। (দ্রঃ মানুষ ও বিশ্বজনীন ধর্ম-মাওলানা বদিউল আলম) আলমে মেছালে, লওহে মাহ্ফুজের সমস্ত বিষয় রূপকময় হয়ে থাকে। এ এক অদ্ভুত রহস্যময় আলম বা জগত। আলমে খালক্ (জড় জগত) এবং আলমে আমরের (সূক্ষ্জগত) সব কিছু আলমে মিছালে (স্বরূপজগত) প্রতিবিম্বিত হয়ে রয়েছে। এমনকি এ আলমে আল্লাহ তায়ালার যাত পাক এবং যাবতীয় আসমা ছেফাতে প্রতিবিম্বিত হয়ে রয়েছে। (দ্রঃ ফছুছুল হেকাম; হুজ্জাহুল্লাহিল-বালেগা; ইমাম রাজী)
বস্তুময় এ পৃথিবীর রূপ জগতের পশ্চাতে একটা জগত আছে যা আলমে মেশাল বা স্বরূপ জগত। রূপজগতের দোষ গুণ স্বরূপ জগতে শরীর হয়ে বিচরণ করে। (দৈনিক ইনকিলাব-ফজলুর রহমান মুন্সী)
মৌলভী আশরাফ আলী থানভী তার ‘নাশরুত্তীবে’-হাকিকতে মোহাম্মদীর উপর আলোচনা রেখেছেন। তফ্সীরে রুহুল বয়ান-সূরা-আরাফ : নবম পারায় এই আয়াতের ব্যাখ্যায়-“(তিনিই, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র আত্মা হতে সৃষ্টি করেছেন) বলেন; যে সমস্ত আত্মা হুজুর (সাঃ) এর আত্মা হতে পয়দা করেছেন। অতএব হুজুর (সাঃ) হলেন “আবুল আরোয়াহ” বা সকল আত্মার পিতা।”
তাই, জানতে হবে কোন চিন্তা ও জ্ঞানকে ‘বিজ্ঞান’ বলে, কোন চিন্তা ও জ্ঞানকে ‘দর্শন’ বলে; আর কোন চিন্তা ও জ্ঞানকে -‘আধ্যাত্মিক জ্ঞান’ বলে। এর নিরিখে খোঁজতে হবে জানতে জবে-‘আমি কে? কোথায় ছিলাম? কোথায় এলাম? আর কোথায় যাব? কি আমার রূপ? কি আমার স্বরূপ?
আল্লাহ তুর পাহাড়ে তার নূরের তজোল্লি নিক্ষেপ করলে তুর পাহাড় পুড়ে যায়, মুসা নবী অজ্ঞান হয়ে যান। অথচ তুর পাহাড়ের পাদ দেশে এক বৃক্ষে তার নূর প্রকাশ ও আওয়াজ এল - “আমি জগত সমূহের প্রভু।” তখন বৃক্ষটি পুড়লো না?
রাসূল (সাঃ) দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে আলো দান কর, আমার সম্মুখ ও পশ্চাতে; আমার ডাইনে-বামে; আমার উর্ধ্বে; আমার অন্তঃস্থলে; আমার কর্ণে; আমার চোখে; আমার কেশে; আমার চর্মে; আমার মাংস; রক্ত ও অস্থিতে, আমার কবরে আলোক দান করে। হে আল্লাহ! আমার জন্য আলো বৃদ্ধি কর; আমাকে আলোক দান কর এবং আমাকে জ্যোতির্ময় কর।” (তিরমিযি) রাসূলের এ চাওয়া ব্যর্থ হয়নি। তিনি আলোয় পরিপূর্ণ হয়ে জ্যোতির্ময় হয়েছিলেন। তাই চাঁদ ও সূর্যের আলো-মহাজ্যোতি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর আলোকিত দেহের উপর ছায়া সৃষ্টি করতে পারে নি। (তাফ্সিরে আজীজ) তাই, রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “আমি আল্লাহর নূরে সৃষ্টি সমুদয় বস্তুজগত আমার নূরে সৃষ্টি।” বলেছেন, পরম আলোকে আমি পৌছিয়েছি আর সেই আলোকেই বাস করি”। কোরআনে বলা হয়েছে-“আল্লাহ নিজেই আস্মান ও জমিনের আলো”। বাইবেলে বলা হয়েছে : “আলো হউক এবং আলো হয়ে গেল।” (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন