উদাহরণ-১০: ইমাম মালেক (র) পবিত্র রওযা শরীফ ও মসজিদে নববীর প্রতি অনেক বেশী সম্মান প্রদর্শন করতেন। কেউ তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে,তিনি বললেন:
(আমি যা দেখতে পাচ্ছি,তা যদি তোমরা দেখতে পেতে, তাহলে তোমরা আমার কর্ম-আচরণের প্রতি প্রশ্ন উথ্থাপন করতে না।) প্রিয়নবী (স) এর প্রতি তাঁর উক্তরূপ আদব-সম্মান প্রদর্শনের কারণেই তিনি প্রতিনিয়ত,অধিকহারে মহানবী (স)-কে স্বপ্নে দেখতে পেতেন।হযরত আবূ সা‘দ (র) ‘হিল্ইয়া’গ্রন্থে মুসান্না ইবন সাঈদ (র) থেকে বর্ণনা করেন, ইমাম মালেক (র) বলেছেন:“আমার এমন কোন রাত অবিাহিত হয়নি, যে-রাতে মহানবী (স)-কে স্বপ্নে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।”
উদাহরণ-১১: হযরত আবূল ফযল জাওহারী উন্দুলুসী (র) মদীনা শরীফের দীর্ঘ সফরে রওয়ানা হলেন। যখন মদীনার কাছাকাছি পৌঁছে শহরের ঘরবাড়ী দৃষ্টিগোচর হল, তখন তিনি বাহন থেকে নেমে পড়লেন এবং নিন্মোক্ত কবিতা পড়তে পড়তে পায়ে হাটা শুরু করলেন-
(যখন আমরা সেই সম্মানী নবীর নিদর্শন দেখলাম-যিনি তাঁর নিদশর্নের পরিচয়জ্ঞানের মত আমাদের অন্তরও রেখে যাননি,বিবেকও ছেড়ে যাননি। আমরা বাহন থেকে নেমে পড়লাম এবং সেই মহিয়ান সত্তার সম্মানার্থে পায়ে হাটতে লাগলাম, বাহনে আরোহিত অবস্থায় যাঁর যিয়ারত অবশ্যই আদব পরিপন্থী।)
উদাহরণ-১২: শায়খুল ইসলাম হাফেয আবুল-ফাত্হ তাকীউদ্দীন ইবন দাকীক (র) মহানবী (স)-এর সম্মান বিষয়ে এমনটি বলেছেন-
(হে হিজায অভিমুখী যাত্রী! আমি তোমার জন্য উৎসর্গ হই,তুমি দিবারাত্রি চলতে থাকবে)
(যখন তুমি বুযুর্গী-নৈকট্য অন্বেষণে রাত জাগরণ করবে;তখন তন্দ্রাও যেন না আসে তোমার ধারে)
(তুমি সে-স্থানে যাবে যেখানে প্রচুর ‘নূর’চমকাতে থাকে;আর যেখানকার মাটি সুগন্ধি ছড়াতে থাকে)
(তুমি ওইসব স্থান ও ঝর্ণার পাশে অবস্থান নেবে;যা ‘কুবা’ উপাত্যকার নিকট, ‘উম্মুল-কুরা’র সবুজ-শ্যামল প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত)
(তারপর প্রিয়নবীর নিদর্শনের দিকে এগুবে;তাঁর যিয়ারত শেষে দু’গাল মাটিতে রেখে দেবে}
(আর যখন তুমি ওহী নাযিলের স্থান দেখতে পাবে;যা সারা পৃথিবীতে জ্যোতি আর জ্যোতি ছড়িয়েছে)
(মনে রেখো! তুমি তাঁর অনুরূপ কাউকে দেখতে পাওনি;বিগত দিনেও নয়,নয় ভবিষ্যতেও)
উদাহরণ-১৩: কোন কোন বড় ওলী-শায়খ বাহনের সামর্থ থাকা সত্তে¡ও, পায়ে হেটে নিজ বাড়ী থেকে মদীনা শরীফ যিযারতে, সফরে বের হতেন। জিজ্ঞাসা করা হলে,জবাবে বলতেন:“পলায়নপর দাস নিজ মনিবের দ্বারে বাহনে আরোহণ করে হাজির হয় না। যদি শক্তি থাকতো,তাহলে তো আমি বরং মাথা নিচু করে,(মাথার দ্বারা হেটে) তাঁর দরবারে হাজির হতাম!”(আশ্শিফা)
উদাহরণ-১৪: হযরত উমর ইবন আবদুল আযীয (র)-এর ইন্তেকালের সময় যখন ঘনিয়ে এলো তখন কারও চিন্তায় এল,তাঁকে মহানবী (স) এর রওযা শরীফের কাছে দাফন করা হবে। বিষয়টি তাঁর কান পর্যন্ত গড়ালে,তিনি তা প্রত্যাখ্যানপূর্বক বললেন:“মহানবী (স)-এর রওযার পাশে দাফন হওয়া আমার পক্ষে বে-আদবীর নামান্তর হবে। আমার সময়টা কি? কোন্ সময়-স্তরে আমার অবস্থান যে,তাঁর কবর শরীফের কাছে আমার কবর হবে?”
উদাহরণ-১৫: দেওবন্দী আলেমগণের বিশ্বাস হচ্ছে,সাইয়্যেদেনা রাসূলুল্লাহ (স)-এর কবর শরীফের যে-মাটি তাঁর দেহ মুবারকের সঙ্গে লেগে আছে, তা মহান আরশের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী (র) অত্যন্ত সুন্দর ও স্পর্শ্বকাতর দেহের অধিকারী ছিলেন। মদীনা শরীফে যখন পৌঁছতেন তখন জুতো পরতেন না। পাথরী জমিতে খালি পায়ে চলতে চলতে পায়ের তলা যখম হয়ে গেল। কেউ জিজ্ঞাসা করল, হযরত! জুতো পরিধান করছেন না কেন? উত্তরে বললেন,যে ভূমিতে আমার মনিব (স) এর বরকতপূর্ণ পদচিহ্ণসমূহ বিদ্যমান তা আমি নিজ জুতো দ্বারা কিভাবে মাড়াতে পারি? এটা তো সম্পূর্ণ বে-আদবীর নামান্তর হবে-
হজের সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে তিনি মহানবী (স)-এর পবিত্র শানে একটি দীর্ঘ কবিতা লেখেন ; যার মাঝে রয়েছে আদব ও মহব্বতের তুমুল ঝংকার।
উদাহরণ-১৬: জনৈক ব্যক্তি হযরত কাসেম নানুতুবী (র)-কে সবুজ রঙ্গের অত্যন্ত সুন্দর একটি জুতো উপহার দিলেন। তিনি সুন্নাত হিসাবে ‘উপহার-হাদিয়া’ গ্রহণ করলেন বটে; কিন্তু তা ব্যবহার করলেন না। কেউ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে, তার জবাবে বললেন:“কাসেম এর জন্য এমনটি অশোভনীয় যে,‘রওযা শরীফ’এর রঙও সবুজ আর আমার জুতোর রঙও হবে সবুজ! সবুজ রঙ্গের জুতো পরিধান আমার মতে বে-আদবীর নামান্তর।”
উদাহরণ-১৭
একজন লোক হযরত গাঙ্গুহী (র)-কে একটি কাপড় হাদিয়াদান কালীন বলল,হুজুর এটা আমি মদীনা শরীফ থেকে এনেছি। তিনি কাপড়টিকে চুমু খেলেন এবং তা চোখে মুছে নিলেন। একজন ছাত্র বললেন,“হযরত! এটা তো ভিন্ দেশী কাপড়;মদীনায় তো এটা তৈরি হয়নি”। তিনি বললেন,হোক তা যে-কোন দেশেরই তৈরি;মদীনা শরীফের,মাহবূব (স)এর দেশের হাওয়া তো এর গায়ে স্পর্শ্ব করেছে। নবীপ্রেম ও নবী (স)-এর প্রতি আদব-সম্মান প্রদর্শনের কত উত্তম উদাহরণ!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন