মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

উদ্দেশ্যমূলক মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:১৩ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন পুলিশ ও সরকারি এজেন্সিগুলো সারাদেশে হাজার হাজার মামলা দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের লাখ লাখ কর্মীকে গ্রেফতার-হয়রানির মধ্যে ঠেলে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করেছে। দুই সপ্তাহে দেড় হাজারের বেশি মামলা দিয়ে বিএনপির লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত সমাবেশে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত লাখো মানুষের সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। দলের চেয়ারপারসন প্রায় ৮ মাস ধরে জেলে অসুস্থ হয়ে আছেন, উপযুক্ত চিকিৎসাও পাচ্ছেন না বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করার পরও নেতাকর্মীরা দলের সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই পালন করছেন। এরপরও হঠাৎ করে ৫ সেপ্টেম্বর নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কারাগারে বিশেষ আদালত বসিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দেয় সরকার। এহেন বাস্তবতায় এ সপ্তাহে বিএনপি দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিকী অনশনের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে অভাবনীয় সাড়া দিতে দেখা যাচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও প্রতিটি কর্মসূচির পরই শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুরনো মামলার অজ্ঞাতনামা আসামীদের তালিকায় ফেলে কারাগারে পাঠাচ্ছে। সেই সাথে প্রতিদিনই শত শত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব মামলার বেশিরভাগই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে বিএনপি
বিগত সময়ের আন্দোলনে বাসে অগ্নি সংযোগ ও নাশকতার ঘটনার মামলায় বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে জড়ানো হয়েছে, সেই সাথে নাশকতার অজুহাতে বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতেও বাধা দেয়া হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত এসব রাজনৈতিক মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিনমাস বাকি। ক্ষমতাসীনদল ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিকদল, নাগরিক সমাজ, দলনিরপেক্ষ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করছে। ৫ জানুয়ারির অনুরূপ আরেকটি একতরফা নির্বাচন দেশের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। সরকারও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এহেন বাস্তবতায় শীর্ষ নেতাদের জেলে রাখার পাশাপাশি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মীর জন্য নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কঠিন করে তোলা হয়েছে। মামলাবাজির মধ্য দিয়ে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনাকেই নস্যাৎ করা হচ্ছে। একদিকে সরকার সবদলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে, অন্যদিকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকদলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করছে এবং আদালতের দ্বারস্থ করে তাদের জন্য স্বাভাবিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ কঠিন করে তুলেছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন গণহারে মামলার কারণে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।
বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা সাম্প্রতিক সময়ের মামলাগুলো এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কোন সত্যই অপ্রকাশিত থাকে না। রাজধানীতে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ের যে কোন অপরাধ-নাশকতার ঘটনার স্থানীয় সাক্ষ্য ও ভার্চুয়াল তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করা অসম্ভব নয়। কিন্তু এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা অতি উৎসাহী ভ‚মিকা নিয়ে পাইকারী মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, মামলায় এমন সব ব্যক্তিদের আসামী করা হচ্ছে যা’তে পুলিশকে মিথ্যা মামলাবাজির অপবাদ শুনতে হচ্ছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের দায়ের করা এক মামলায় হাসপাতালে থাকা ৮২ বছর বয়েসী এক রোগীকে আসামী করা হয়েছে। আরেক মামলায় নাশকতার দায়ে এমন একজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যিনি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ২৮ মাস আগে ইন্তেকাল করেছেন। কুমিল্লায় নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন শলাপরামর্শে উপস্থিত থাকার দায়ে ওমান প্রবাসী এক ব্যক্তিকে আসামী করার সংবাদও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে মাত্র কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এমন অমূলক মামলা দেয়া অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হলেও এই পুলিশ বাহিনীর আইজিসহ শীর্ষ ও মাঠ পর্যায়ে অনেক পেশাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা জানেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ এবং আদালতের অবস্থান ও মর্যাদা আইনগতভাবেই নির্দিষ্ট ও স্থায়ী। পুলিশের কিছু সংখ্যক অতি উৎসাহী কর্মকর্তা দলীয় ক্যাডারের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এটা পুলিশ বাহিনীর জন্য অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকছে। দলের ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, পুলিশের এসব কর্মকান্ডও হয়তো একদিন বিচারের আওতায় আসবে। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন, পুলিশের আইনগত নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থেই গণহারে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলার অপরাজনৈতিক তৎপরতা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Mofazzal Hossain ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:০১ পিএম says : 0
Law and forces agencies have to realize that they are also a part of the people, they get their salary by the taxes of the people. So that they should be neutral to assure equal opportunity for all nation.Otherwise they will be condemned for their partiality.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন