রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আশুরার দিন কেয়ামত হবে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম | আপডেট : ১২:৩৬ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মাহে মুহাররমে হযরত হুসাইন রা. স্বীয় লোকজনসহ জালিম ইয়াযীদ ও তার লোকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেছেন। সে জন্য মাহে মুহাররমে হজরত হুসাইন রা. এর এ ত্যাগের কথা স্মরণ করে দীনের হিফাজতের জন্য জানমাল কোরবানি করার প্রত্যয় করা আমাদের কর্তব্য।
তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, সৃষ্ট জগতের প্রলয় শিঙ্গার ফুৎকারের মাধ্যমে সাধিত হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘আর শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেটা হবে নির্ধারিত দিনে।’ (সুরা ক্বাফ: আয়াত ২০)। আরও ইরশাদ হয়েছে: ‘যেদিন শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেদিন পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর বাসিন্দারা বেকারার হয়ে যাবে।’ (সূরা নমল: আয়াত ৮৭)। এই ফুৎকার মুহররমের ১০ তারিখ কোনো এক শুক্রবার দিন উচ্চকিত হবে। কিন্তু কিছু লোক আশুরার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে অতিরঞ্জিত ও গর্হিত কার্যকরাপ দ্বারা বিদআত ও নাজায়িজ বিষয়ের অবতারণা করে চলেছেন। মুসলমানদের সেসব গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন:
১. আশুরার সিয়ামকে শোক পালনের উদ্দেশে করা: মুহাররম মাসের বা আশুরার সুন্নত আমল হিসেবে রোযা রাখা কর্তব্য। আশুরার সেই রোযার উদ্দেশ স্পষ্ট হাদীস দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। আর তা হল, অত্যাচারী শাসক ফিরআউনের কবল থেকে মুসা আ. এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ ও সিয়াম পালন করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে শোক পালনের উদ্দেশে সিয়াম পালনের কোনো সুযোগ নেই। অথচ অনেকে তা করে থাকেন। বলা বাহুল্য, আশুরার এই সিয়ামের সূচনা হয়েছে মুসা আ. এর সময় থেকে। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় জিবদ্দশায় সেই সিয়াম পালন করেছেন। অপরদিকে কারবালার ঘটনা ঘটেছে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওফাতের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরীতে। হাদীস শরীফে সেই রোযা পালনের উদ্দেশের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তা হচ্ছে অত্যাচারী শাসক ফিরআউনের কবল থেকে মুসা আ. এর নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরূপ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সা. যে উদ্দেশে আশুরার রোযা রেখেছেন, আমাদেরও সেই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে রোযা রাখতে হবে।
২. ১০ই মুহাররমকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা : রাফেজীরা (কট্টর শী’য়া) হযরত হুসাইন রা. এর শাহাদাতের শোক স্বরূপ শোক দিবস পালন করে। পক্ষান্তরে একটি গোষ্ঠী রাফেজীদের বিরোধিতা করার লক্ষ্যে এ দিনটিকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করে। এ উভয় প্রকার কাজই গর্হিত ও বিদআত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এ দিনটিকে শোক দিবস হিসেবেও পালন করেননি, আবার আনন্দ উৎসবে পরিণত করেননি। তারা শুধুমাত্র ফিরআউনের কবল থেকে মুসা আ. এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ সিয়াম পালন করেছেন। সুতরাং আমাদেরও তা-ই করতে হবে।
৩. তা’যিয়া: তা’যিয়া অর্থ বিপদে সান্ত¦না দেয়া। তবে বর্তমানে শাহাদাতে হুসাইন রা. এর শোক মিছিলে রূপ নিয়েছে। অথচ ইসলামে কারও মৃত্যুতে তিনদিনের অধিক (আর স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য চারমাস দশ দিনের অধিক) শোক পালন করা নিষেধ। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৬২)। তাই শী’য়াদের উদ্ভাবিত উক্ত তা’যিয়া সম্পূর্ণ বিদআত। তা থেকে সকলের দূরে থাকতে হবে।
৪. আশুরা উপলক্ষে চোখে সুরমা লাগানো: অনেকেই আশুরার দিন বা ১০ই মুহাররম উপলক্ষে এদিন বিশেষ ফজীলতের আশায় চোখে সুরমা লাগিয়ে থাকেন। এটাও সুস্পষ্ট বিদাআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম রা. আশুরার নিয়মরূপে চোখে সুরমা লাগাননি এবং কোনো ফজীলত বর্ণনা করেননি। এ মর্মে যা প্রচলিত আছে, তা মাওযূ বা জাল।
৫. ১০ই মুহাররমে বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা: অনেকে ১০ই মুহাররমে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে থাকেন। এটাও সম্পূর্ণ বিদআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এদিনে বিশেষ কোনো সালাত আদায় করেছেন বা বলেছেন মর্মে কোনো নির্ভরযোগ্য দলীল নেই। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন, সিয়াম ব্যতীত আশুরা সম্পর্কিত কোনো বিশেষ নিয়মের আমলের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। সুতরাং আশুরা উপলক্ষে আমাদের ইসলামের সহীহ আমলরূপে রোযা পালন করতে হবে। এ জন্য আশুরার দিন এবং তার সাথে মিলিয়ে তার আগের বা পরের দিনসহ রোযা পালন করা বাঞ্ছনীয়। আর এ মাসকে সম্মানিত জ্ঞান করে এ মাসে দাঙ্গা-ফাসাদ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিশেষভাবে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়াও কারবালার ঘটনার ব্যাপারে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হতে বিরত থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
তারেক মাহমুদ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৪৭ এএম says : 0
লেখাটি থেকে অনেক কিছু জানলাম
Total Reply(0)
mozammel Haque ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৫:১৩ পিএম says : 0
jaza kallahu Khairan
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন