অতিসম্প্রতি ভৌতিক মামলা দায়েরের হিড়িক পড়েছে। এসব মামলা থেকে একদিকে বিদেশ যেয়েও রক্ষা মিলছে না। অন্যদিকে মরেও শান্তি নেই। কবরবাসী হয়েও আসামি হতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় এমন আজগুবি কিংবা গায়েবি তথা ভুতুড়ে মামলা দায়েরের অভিযোগ, পুলিশের বিরুদ্ধে। বিতর্কিত এসব মামলা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে। মামলার আসামি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অভিযোগ, বহুল আকাক্সিক্ষত একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভীতির পরিবেশ তৈরিতে এসব গায়েবি মামলা দায়ের হচ্ছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিরোধী মতকে দমন ও সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে পুলিশ উৎসাহি হয়ে এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, এখন স্পষ্ট যে, পুলিশের একটা বড় অংশ সরকারি দলের বাহিনী হয়ে গেছে। এই অংশ অপরাধ দমন থেকে সরকারি দল নির্বাচনে যেনো জিততে পারে, সেটাই তাদের মুখ্য কার্যক্রম বলে মনে হচ্ছে। জেনেশুনে মিথ্যা মামলা করাটা যেমন ফৌজদারি আইনে অপরাধ, তেমনই পুলিশের আইনগত দায়িত্বের সম্পূর্ণ বরখেলাপও বটে। ভৌতিক মামলাগুলোর এজাহারের বর্ণনা একই, শুধু ঘটনাস্থল এবং আসামিদের নাম ভিন্ন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ রকম কিছু ভৌতিক মামলার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তারই কয়েকটি এখানে তুলে ধরছি।
মৃত ব্যক্তি আসামি: গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর চকবাজার মডেল থানার এসআই কামাল উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছে চকবাজার থানা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজুল্লাহ। অথচ আব্দুল আজিজুল্লাহ মারা গেছেন ২০১৬ সালের মে মাসে। মৃত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছেন তিনি। এমনকি অন্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটিয়েছেন। কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সত্তোরোর্র্ধ্ব নূরুল ইসলাম গত ৩১ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পাঁচ দিন পর তাকে কামরাঙ্গীরচর থানায় ৫ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলায় ৩১ নম্বর আসামি করেছে পুলিশ।
এসআই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-২৩। এ মামলায় ২৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে মিন্টু কুমার দাস নামে ১১ বছর আগে মারা যাওয়া এক মৃত ব্যক্তিকে। তিনি ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজারবাগ ইউনিট বিএনপির সভাপতি ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সে অনুযায়ী মৃত্যু সনদও নিয়েছে পরিবার। তবে পল্টন থানা পুলিশের দায়ের করা মামলায় তিনি এখনও জীবিত। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সড়ক অবরোধ করছিলেন মিন্টু কুমার দাস। এ মামলায় তার ভাই পিন্টু দাসও আসামি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানসহ বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে মামলার আসামি করা হয়েছে। এজাহারে কোনো মৃত ব্যক্তি থাকলে তা বাদ দেয়া হবে।
হজে গিয়ে আসামি: ৫ সেপ্টেম্বর চকবাজার মডেল থানার এসআই কামাল উদ্দিনের দায়ের করা মামলার আসামি বিএনপির সমর্থক আব্দুল মান্নাফ ওরফে চাঁন মিয়া গত ৪ আগস্ট হজ পালন করতে সৌদি আরবে যান। তিনি এখনো দেশে ফেরেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের যে কথা পুলিশ বলছে, সে রকম কিছু ওইদিন ঘটেনি। মামলায় পুলিশ বলেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার ৫ সেপ্টেম্বর থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয়। বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করতে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেলা ১১টার দিকে বেচারাম দেউড়ি আজগরি মঞ্জিলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে মামলার বাদী এসআই কামাল উদ্দিনসহ দুজন আহত হন। পুলিশ হামলাকারীদের আটক করতে গেলে তারা পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। ওই মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, ৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক সাংবাদিক খালেদা জিয়ার মামলার তথ্য সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন। সেদিন ওই রকম কোনো ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তা গণমাধ্যমে আসত।
চকবাজার মডেল থানায় ৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি গায়েবি মামলা হয়েছে। এজাহারের বর্ণনা একই, শুধু ঘটনাস্থল এবং আসামিদের নাম ভিন্ন। এজাহারে বলা হয়েছে, ১৪ আগস্ট রাতের বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়াসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে ১৪ আগস্ট রাতে চকবাজারের বিভিন্ন পাড়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কাঙালিভোজের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে হইচই পড়ে যেতো। ওই মামলায় বিএনপির ৩৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে ৩১ জনকে আসামি করা হয়। ৪ নম্বর আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খতিবুর রহমান ১০ আগস্ট হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যান। তিনি এখনো সেখানে অবস্থান করছেন।
শয্যাশায়ী রোগী আসামি: ওয়ারীর বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব মাঠে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ৯৬ জনের নামে ৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করে ওয়ারী থানা পুলিশ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত ৮২ বছর বয়স্ক লুৎফুল কবিরকে ওই মামলায় ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। জানা যায়, লুৎফুল হক ৪ আগস্ট থেকে পরবর্তী সাতদিন ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ৫৬০ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে লুৎফুলের ছাড়পত্রে উল্লেখ রয়েছে, ১১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা খরচ হিসেবে হাসপাতালকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৫ টাকা পরিশোধ করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে একই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে, তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ও হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে রাখা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ১১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও এখনো অন্য কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না। কিন্তু পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার ওয়ারীতে বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব মাঠে জমায়েত হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছিল লুৎফুল কবির। ৫ সেপ্টেম্বর হুইল চেয়ারে করে তাকে হাইকোর্টে হাজির করলে চার্জশিট দাখিল না পর্যন্ত আদালত তার জামিন দেন।
বিদেশে-হাসপাতালে থেকে আসামি: ওয়ারীর বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব মাঠে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ৯৬ জনের নামে গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করে ওয়ারী থানা পুলিশ। ওই মামলায় ১৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা সাব্বির আহমেদ আরিফকে। তবে যে ঘটনায় মামলাটি হয়েছে তিনি সেসময় দেশেই ছিলেন না। ভিসা, ইমিগ্রেশন, হোটেলের কাগজপত্র এবং কলকাতা থেকে তার ফ্লাইটের বোর্ডিং পাসের তথ্য বলছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করেছেন।
গাজীপুরে বিএনপির মানবন্ধন কর্মসূচি চলাকালে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ১১ সেপ্টেম্বর জয়দেবপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় বিদেশে থাকা বিএনপি নেতাদেরও আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম গণমাধ্যমে জানান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুলের ছেলে অসুস্থ থাকায় ১০ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টায় তিনি বিমানবন্দরে যান। সেখানে থেকে সকাল ৮টার ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে যান তিনি। সিটি করপোরেশনের ভূরুলিয়া এলাকার অ্যাডভোকেট মনির ঘটনার তিনদিন আগে ভারতের চেন্নাই গেছেন। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান। কিন্তু তাদের নামে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়েছে।
ঘটনা না ঘটলেও মামলা: রাজধানীর পোস্তাগোলার ইগলবক্সের সামনে অরাজকতা ও গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে ৫ সেপ্টেম্বর ‘১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমাত আইনে’ কমদতলী থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলা নম্বর ১৩। মামলায় ঢাকা-৪ (শ্যামপুর, কদমতলী) আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন, তার ছেলে রবিন, ছাত্রদলের ৩ নং ওয়ার্ড সভাপতি জুম্মন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার কবিরসহ ১৯৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে লোহার রড, কাঠ, গাছের লাঠি ও কাঁচের ভাঙা অংশসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ। এদিকে, ভাংচুরের অভিযোগের একদিন পর ঘটনাস্থলে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা এলাকাবাসী ও স্থানীয় দোকানদারদের সাথে দেখা করলে তারা জানায়, ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, ৫ সেপ্টেম্বর এত বড় ভাংচুরতো দূরে থাক, সাধারণ কোনো ভাংচুরের ঘটনাও ওই স্থানে ঘটেনি। এজাহারে সাক্ষী আল আমিন ও নুরুল ইসলাম ‘কখন ভাংচুর হয়েছে’ তা তারা না জানলেও ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজু মিয়া গণমাধ্যমকে ভাংচুরের ঘটনার ঘটেছে মর্মে দাবি করেন। মামলার বাদী কদমতলী থানার এসআই আকতার মামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে জানান, মামলার বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু বলা নিষেধ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় ১২ আগস্ট অজ্ঞাত ৭০ থেকে ৮০ জন আসামি দিয়ে মামলা করে এসআই নাজমুল ইসলাম। মামলায় বলা হয়েছে, ৩০ জুলাই হবিগঞ্জের জে কে অ্যান্ড হাইস্কুলের সামনে আসামিরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, যানবাহন ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন এবং সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে। অথচ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ওইদিন হবিগঞ্জ শহরে এ রকম কিছুই ঘটেনি। মামলায় যে সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে তখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও হবিগঞ্জে কেউ পথে নামেনি। তারপরও হবিগঞ্জ শহর ও জেলায় চারটি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১০টি মামলা করে রেখেছে পুলিশ। হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট বিধান ত্রিপুরা গণমাধ্যমে জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই মামলা করা হয়েছে। যদিও ঘটনা ঘটার পরপরই মামলা দায়ের বাধ্যতামূলক নয়, তারপরও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর এই মামলা করেছে।
প্যারালাইসিস রোগী আসামি: বগুড়ার ধুনট থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় ৭ সেপ্টেম্বর মামলা করে পুলিশ। নাশকতার এ মামলায় ৮৬ বছর বয়স্ক আবদুল খালেক সরকার নামে শয্যাশায়ী এক প্যারালাইসিস রোগীকে আসামি করেছে পুলিশ। মামলায় তার বয়স দেওয়া হয়েছে ৩৮ বছর। গণমাধ্যমের খবরের জানা যায়, উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত মোবারক আলী সরকারের ছেলে আবদুল খালেক সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিস রোগী। প্যারালাইসিস রোগী হিসেবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।
আমরা মনে করি, ভৌতিক মামলার বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীলরা দায় সারা বক্তব্য দিলেও এসব রাজনৈতিক মামলার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, বিরোধী শক্তিকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে যাতে বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া না দিতে পারে। তৃতীয়ত, এসব মামলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা এবং অর্থ উপার্জনের একটা পথ বের করা। চতুর্থত, সমাজে এক ধরনের ভয়, ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করে রাখা। পঞ্চমত, কয়েক মাসের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন। সেই কারণে এই মামলাগুলো হয়তো জনগণের বাক-স্বাধীনতা রহিত করার জন্য ব্যবহৃত হওয়ার একটা আশঙ্কা আছে। বলাবাহুল্য, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। যে ঘটনা ঘটেনি বা একটা ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা বড় ধরনের অজ্ঞাতনামা মামলার উদ্দেশ্য কখনো ভালো হতে পারে না। মামলায় জনগণকে হয়রানি বা অর্থ উপার্জন কিংবা বিরোধী দলমতকে কোণঠাসা করার জন্য যে কারণেই হোক না কেনো, এসব থেকে পুলিশ বাহিনীকে বিরত করা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব।
লেখক: দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন