(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
মানুষ যখন নানা অনাচার ও অনৈতিক কর্মকান্ড, অশালীন খেল তামাশা এবং অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ে, তখন তার জীবনটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, হতাশা ও নৈরাশ্য তার জীবনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সুতরাং বিনোদনের ধরন পদ্ধতি কি রকম হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তি, বয়স ও সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর। মানুষের নানা দিক ও অবস্থা বিবেচনা করে বিনোদনের পদ্ধতি নির্ধারিত হওয়া উচিত। নিম্নে আমরা বিনোদনের নানা রূপ তুলে ধরেছি:
লিঙ্গভেদে বিনোদনঃ নারী পুরুষ সৃষ্টিগতভাবেই পরস্পর বিপরীতমুখী স্বভাব চরিত্রের হয়ে থাকে। তাই বিনোদনের ধরন বা প্রকৃতিও নারী পুরুষ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পুরুষ জাতির জন্য তার সৃষ্টিগত স্বভাব চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যশীল বিনোদনের তৎপরতা হয়ে থাকে। নারী জাতির জন্য উপযোগী বিনোদন আলাদা হয়, যা পুরুষদের বিনোদন থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।
বয়সভেদে বিনোদন ব্যবস্থাঃ সব বয়সের মানুষের রুচি ও চাহিদা একই রকম হয় না; বরং তা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সে হিসেবে বিনোদন ব্যবস্থাও ব্যক্তির বয়সের সাথে মিল রেখে হয়ে থাকে। শিশুর জন্যে বিনোদন ব্যবস্থা প্রযোজ্য হতে পারে, তা যুবকদের জন্যে অনুপযোগী। এভাবে বয়স্কজনদের বিনোদন পদ্ধতিও তাদের বয়সের দিকটি বিবেচনা করে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
শিক্ষার মান ও বিনোদন পদ্ধতিঃ সমাজ জীবনে শিক্ষার প্রভাব অনেক বেশি। শিক্ষিত মানুষের চাল চলন ও অশিক্ষিত মানুষের আচার আচরণে বিরাট ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। সে কারণে বিনোদনের প্রকৃতি ও অনেক সময় ব্যক্তির শিক্ষার যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। এজন্যে শিক্ষিত শ্রেণীর বিনোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও বিনোদন পদ্ধতিঃ অর্থ মানুষের সামগ্রিক কর্মকান্ডের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখে এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতা মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। এ নিরিখে আমরা বলতে পারি, যে কোন সমাজের বিনোদন পদ্ধতি তার আর্থিক সামর্থ্যরে আলোকে হয়ে থাকে। কারণ, বিনোদনের এমন অনেক মাধ্যম আছে, যেগুলো বিশাল অংকের আর্থিক ব্যয় দাবি করে। এজন্যে দেখা যায়, সমাজের অনেক সম্পদশালী মানুষ আর্থিক সামর্থের জোরে নানারকম বিনোদনে ডুবে থাকে।
সময়ের আলোকে বিনোদনঃ সময় মানুষের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নিয়ামত। সময়ের সুষ্ঠূ ব্যবহার মানুষের জীবনে সাফল্য যেমন এনে দেয়, তেমনি অপচয় কিংবা অপব্যবহার ব্যক্তির জীবনের নানা রকম ক্ষতি বয়ে আনে। তাই বিনোদনের জন্যে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সময়ে প্রাচুর্য আর স্বল্পতা বিচারে বিনোদনের ধরণ প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। কোন কোন বিনোদন দীর্ঘ সময়জুড়ে হয় আবার কোন কোনটি স্বল্প মেয়াদী হয়।
স্থান ও চাহিদার আলোকে বিনোদনঃ যে কোন বিষয় স্থান ও সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনের নিরিখে হয়ে থাকে। এ হিসেবে মানুষের বিনোদনমূলক কর্মকান্ড স্থান, কাল ও পাত্রভেদে নানা রকম হয়। বিনোদনের সব প্রকৃতি ও ধরন সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না, বরং স্থান ও সুখের চাহিদার আলোকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে হয়ে থাকে।
বিনোদনের লক্ষ্য ঃ মানব জীবনের কোন কাজই লক্ষ্যহীন নয়; বরং সনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই তার সব কাজ পরিচালিত হয়। কাজেই বিনোদনের ও কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন-
আরাম প্রশান্তি অর্জনঃ বিনোদনের একটি লক্ষ্যমাত্রা হলো- কাজের ভারে ক্লান্ত দেহও মনকে একটু আরাম দেয়া, অবসর সময়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গকে বিশ্রাম দেয়া। মোটকথা ব্যস্ততম জীবনে মানুষের দেহ ও মনে যখন ক্লান্ত ও অবসাদ ভর করে, তখন একটু বিনোদন তার দেহও মনকে আরাম প্রশান্তিতে ভরে দেয়।
মানুষের দৈহিক শক্তি-সামর্থ্যের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা ঃ বিনোদনের নানা রকম উপায় উপকরণ ব্যবহারের ফলে মানুুষের শারীরিক পরিশ্রম হয়। এর মাধ্যমে শরীরের নানা অংশ বিভিন্ন প্রকার দূষিত পদার্থ থেকে মুক্ত হয় এবং অঙ্গ প্রতঙ্গ সচল থাকে। এক কথায় বিনোদন মানুষের শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করে।
জীবনের ভারসাম্য রক্ষাঃ মানুষের রয়েছে নিজস্ব ঝোঁক প্রবণতা, আগ্রহ ও অভ্যাস। প্রত্যেক মানুষের চাহিদা, মনের আগ্রহ ও পছন্দ অপছন্দ এক রকম নয়। কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয় এমন রয়েছে যেগুলো প্রতিটি মানুষের দেহ মনের সুস্থতার জন্যে জরুরী। তেমনি ভাবে বিনোদন জীবনের সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
বিনোদনের সময় ঃ সময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা নিয়ামত। মানব জীবনে এর মূল্য অপরীসীম। কারণ, এ সময়ই মানবজাতির উত্থান ও পতন, সফলতা ব্যর্থতা ও উন্নতি অগ্রগতির সবকিছুরই প্রধান উপলক্ষ। সময়ের সুষ্ঠূ ব্যবহারে সফলতা অনিবার্য। এ জন্যে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সময়ের কসম করেছেন, যাতে সময়ের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। সাথে সাথে মানবজাতিকে আল্লাহ তাআলা খুবই যত্মশীল হওয়ার জন্যে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন; কসম সময়ের, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মাঝে নিমজ্জিত। ‘সময়’ মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের সাথে সময়কে সম্পৃক্ত করলে সময়কে দু ভাগে ভাগ করা যায়।
কাজ ও দায়িত্ব পালনের সময় ঃ সময়ের এ অংশে মানুষ বিভিন্ন কাজও নানা দায়িত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে। এ সমস্ত কাজ ও দায়িত্ব আবার নানা প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- ক. শরীয়ত নির্ধারিত আবশ্যিক কার্যাবলি। খ. পানাহার ও নিদ্রা। গ. বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজন পূরন। ঘ. সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দাবি ও কর্তব্য পালন। যেমন আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করা, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ও অতিথি সৎকার করা। এভাবে সময়কে যথার্থ ও প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যক্তি তার জীবনকে সকল দিক থেকে ফলপ্রসূ ও সুন্দররুপে গড়ে তুলতে পারে।
দায়িত্বমুক্ত অবসর সময় ঃ এটি সময়ের ঐ অংশ, যাতে মানুষ যাবতীয় প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও কাজকর্ম থেকে অবসর পায় এবং তার ওপর থাকে না দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের কোন বাধ্যবাধকতা। সুতরাং বিনোদনমূলক কর্মকান্ড চর্চা করতে গিয়ে যেন কাজের ব্যাঘাত, সময়ের অপচয়, দায়িত্ব অবহেলা, সর্বোপরী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা একান্ত বাঞ্জনীয়।
প্রয়োজন রুচিশীল বিনোদন ঃ মানুষ আশরাফুল মাখলুখাত। তার রুচিবোধ হবে অন্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা। মানুষের আর অপরাপর প্রাণীর অভ্যাস, আচার আচরণও কর্মকান্ডের মাঝে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। এজন্যে একজন মুসলিম ব্যক্তির বিনোদনে থাকতে পারে না চরিত্রহীনতা ও অনৈতিকতা, যা মানুষের মনে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, ব্যক্তিজীবনে অস্থিরতা ডেকে আনে বরং; প্রয়োজন এমন বিনোদন, যা মানব স্বভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও রুচিশীল।
ইসলামের বিনোদনের গুরুত্বঃ ইসলাম সুষ্ঠু বিনোদন ব্যবস্থায় গুরত্ব দিয়ে থাকে। মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক ভারসাম্য রক্ষায় সুস্থ বিনোদনের বিকল্প নেই। সঠিক বিনোদন ব্যবস্থা মানুষকে যেমন কর্মক্ষম থাকতে সহায়তা করে, তেমনি তা সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশেও ভূমিকা রাখে। তদুপরি রুচিসম্মত বিনোদন মানুষকে নানাবিধ অপরাধকর্ম ও হতাশা থেকে ও নিবৃত রাখে। এজন্যে ঈমানদারগণ এমন কিছু চিত্ত বিনোদনমূলক কর্মকান্ড করবেন, যাতে আত্মার প্রশান্তি আসে। এ প্রসঙ্গে রাসূল স. ইরশাদ করেন: তোমরা মাঝে মধ্যে আত্মাগুলোকে বিশ্রাম দাও, কারণ আত্মাসমূহ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তা হয়ে যায় অস্থির অবস্থায় নিপতিত।
উপর্যুক্ত হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, আত্মাকে বিশ্রাম দেয়া এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। কারণ, কাজকর্মে জর্জরিত ব্যাক্তির আত্মা কাজের চাপে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধন্ত গ্রহণে সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠে। তাই মানুষের স্বভাবজাত মনের সতেজতা রক্ষা করতে ইসলাম চিত্ত বিনোদনের ওপর গুরূপ্ত দিয়ে থাকে। সাইয়িদুনা আল’ী রা. এর একটি উক্তি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন, নিশ্চয় অন্তর সমূহের কামনা বাসনা, উৎসাহ উদ্দীপনা এবং হতাশা ও পিছটান রয়েছে। সুতরাং অন্তরের চাহিদা ও উৎসাহ ঠিক রেখে চলো। কারণ, মনকে যে কোনো বিষয়ে বাধ্য করলে তা অব্যবস্থিত হয়ে পড়ে। নিম্নে আমরা বিনোদনের গুরুত্ব বিষয়ক মুসলিত মনীষীগণের কয়েকটি উক্তি উল্লেখ করছি।
সাইয়িদুনা আলী. রা. বলেন: তোমরা আত্মাসমূহকে প্রফুল্লতা দাও এবং তার জন্যে প্রজ্ঞাপূর্ণ চমৎকার মজার বিষয় তালাশ করো, কারণ দেহের মতো আত্মা ও বিরক্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বিশিষ্ট সাহাবী উসামাম ইবনু যায়িদ রা. আল্লাহ তাআলার যিকর এর মাধ্যমে অস্থির আত্ময় প্রশান্তি আনতে বলেছেন। তিনি বলেন: আত্মগুলোকে আনন্দ দাও যিকর এর মাধ্যমে।
বিশিষ্ট তাবিয়ী আল হাসান আল বাসরী রাহ. বলেন, এই অন্তকরণসমূহ জীবন্ত থাকে, আবার নির্জীবও হয়ে যায়। আত্মা যতখন জীবন্ত থাকে, তখন তুমি একে ফরয ইবাদতের সাথে সাথে নফল বন্দেগীতেও নিয়োজিত রাখো। আত্মার নির্জীব হয়ে গেলে তুমি শুধু ফরয ইবাদতে একে নিয়োজিত করো।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস শিহাব আয যুহ্রী রহ. বলেন: কোনো এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ স. এর সাহাবীদের সাথে উঠাবাস করতেন এবং তিনি তাঁদের সাথে কথাবার্তা তাদের পারস্পরিক কথাবার্তা যখন বেশি হয়ে যেতো এবং কথা যখন তাদের কাছে ভারী হয়ে উঠত তখন তিনি বলতেন, নিশ্চয় কানসমূহ কথা শুনতে অনীহা দেখাচ্ছে আর অন্তরগুলো বিতৃষ্ণা ভাব দেখাচ্ছে। অতএব, তোমরা তোমাদের নানা রকম কবিতা ও কথামালা উপস্থাপন করো।
উপর্যুক্ত মুসলিম পন্ডিতগনের উক্তির মাধ্যমে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, চিত্ত বিনোদন ইসলামের দৃষ্টিতে উপেক্ষিত নয়; বরং ইসলাম একে উৎসাহিত করেছে। কারণ, এটি মানুষের স্বাভাবিক দাবী। কাজের পর একটু বিশ্রাম বা অবকাশ যাপন দেহ মনের স্বাভাবিক চাহিদা। মানুষের কাজের গতি ও কর্মোদ্দীপনা বাড়াতে এর কোন বিকল্প নেই। ইমাম কাযিম রা. মানুষের সময়কে চারভাগে ভাগ করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা চেষ্টা করো, যেন তোমাদের সময়কাল চার অংশে বিভক্ত হয়। এক অংশে কেবলমাত্র মহান আল্লাহর সাথে নির্ভৃতে সম্পর্ক গড়ে তোলে তার ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকবে, আরেক অংশ তোমাদের জীবনোপকরণ অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট রাখবে, আরেক অংশ তোমাদের ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাতের জন্য বরাদ্দ রাখবে, চতুর্থ সময়ের একটি অংশ এমনভাবে নির্ধারিত রাখবে, যাতে তোমাদের বৈধ পন্থায় আনন্দ খুশি ও মজা করে সময় কাটাতে পার। সময়ের এ অংশটির মাধ্যমেই তোমরা অপর তিনটি অংশের দায়িত্বগুলো পালন করতে শক্তি সঞ্চয় করবে।
মানুষের জীবনটাই আল্লাহ প্রদত্ত এক বড় নিয়ামত। দেহ ও মনের সুস্থতা হলো এই জীবনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম শর্ত। শরীয়তসম্মত পন্থায় চিত্ত বিনোদন মানুষকে ইবাদত বন্দেগী কাজকর্ম ও সামগ্রিক উৎপাদনে সক্ষম করে তোলে। সাথে সাথে এটি যুবসমাজকে স্থায়ী কর্মমুখর রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, চিত্ত বিনোদনের সব উপায় উপকরণ যেন কুরআন সুন্নাহ এবং সাহাবা কিরাম রা. এর সুমহান আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়। অতএব নিম্নোক্ত কয়েকটি দিক বিবেচনায় রাখলে বিনোদনের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। মানুষের স্বভাবজাত দাবি হিসেবে দেহ ও মনের ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই জরুরী, যা সুস্থ বিনোদন ছাড়া সম্ভব নয়।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে নানা ধরণের অসুস্থ ধারায় বিনোদন এবং এসব বিনোদনের বহুবিধ উপায় উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজ তাতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে তা ব্যক্তি চরিত্র ও সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার রুচিশীর ধারায় আঘাত হানছে। এমতাবস্থায় সুস্থ রুচির বিনোদন ব্যবস্থার প্রচলন সমাজের জন্যে অত্যন্ত জরুরী, যা নিঃসন্দেহে ব্যক্তিকে এবং সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
নারী পুরুষের জন্য শার’য়ী সীমারেখা মেনে পৃথক ভাবে তাদের স্ব স্ব স্বভাব ও প্রকৃতি উপযোগী বিনোদন ব্যবস্থা সমাজে গড়ে তুললে তা নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হবে।
ইসলামে বিনোদনের বিধানঃ শরী’আতের সুনির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্য থেকে যে সুস্থ ও রচিশীল বিনোদন চর্চা করা হয়, তাকে ইসলামে বৈধ ঘোষণা করেছে। সুস্থ রুচি পরিপন্থি যে কোন গতানুগতিক ব্যবস্থাকে ইসলাম অনুমোদন দেয় না। এ ভিত্তিতে বিনোদনের এমন সব ব্যবস্থাকে ইসলাম বৈধতা দেয়, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিনোদনের ধরণ প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতেক এর বিধানের ভিন্নতা রয়েছে।
বিনোদন যদি ইসলামে নির্দেশিত নীতিমালার পরিপন্থি হয় তবে তা নিরর্থক কথা ও কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। এ জাতীয় বিনোদনের কারণে মানব জীবনের মূল্যবান সময় বিনষ্ট হয় এবং তা জীবনকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরূপ চিত্ত বিনোদন এমন একটি নিরর্থক কাজ, যা একজন ইমানদার ব্যক্তির জন্য কখনো শোভা পায় না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের অপ্রয়োজনীয় কাজ ও বিষয় থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন: আর (ঐ সকল মুমিন সফলকাম হয়েছে) যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিমুখ থেকেছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অন্য আয়াতে এসেছে: আর (দয়াময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হলো) যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়া কর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।
উপর্যুক্ত কুরআনের আয়াতগুলো থেকে জানা যায়, একজন মুমিন ব্যক্তি অপ্রয়োজনীয় কথা কাজ বা যে কোন ধরণের বিষয় কিংবা কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে না। এ জাতীয় কার্যকলাপ তার জন্য শোভনীয়ও নয়।
বিনোদন যদি ইসলামী নীতিমালার আলোকেই সম্পন্ন করা হয় এবং এর উদ্দেশ্য ও হয় ইবাদতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, তবেই তা বৈধ। এর পক্ষে কয়েকটি দলিল নিম্নে উপস্থাপন করা হলো: ক. আবদুল্লাহ ইবনু রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স. তাকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবদুল্লা! আমাকে কি জানানো হয়নি যে, তুমি দিনের বেলায় সাওম পালন কর এবং রাতের বেলায় জেগে জেগে আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলূল্লাহ স.! রাসূল স. বললেন, তুমি এরূপ করো না। তুমি সাওম পালন করবে, আবার মাঝে মাঝে সাওম ছেড়েও দেবে, নামাজের জন্য রাতে দাঁড়াবে, আবার ঘুমাবেও। কেননা তোমার ওপর শরীরের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার আত্মার হক রয়েছে। আর তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর ও অধিকার আছে।
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন