জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে কক্সবাজারের ৪টি নির্বাচনী এলাকায় বদলে যাচ্ছে ভোটের হিসাব। কক্সবাজারের ৪টি অসনই বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি বলে খ্যাত। ৫ জানুয়ারির সেই বিতর্কিত ভোটার বিহীন নির্বাচনে বিকাশে এমপি বানিয়ে কক্সবাজারের ৪টি আসনই দখলে নিয়েছিল ১৪ দলীয় জোট তথা আওয়ামী লীগ।
টানা ১০ বছর আওয়ামী লীগের শাসনকালে শত শত মামলায় হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীদের আসামি করে জেলে পুরে, ঘর-বাড়ি ছাড়া করা হলেও তাদের মনোবল ভাঙতে পারেনি সরকার। এখন ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছে লোকজন। সচেতন মহলের মতে আগামী নির্বাচন ৫০শতাংশ সুষ্ঠু হলেও কক্সবাজারের ৪টি আসনই হাতছাড়া হতে পারে আওয়ামী লীগের।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ এখনো ভারতের শিলং এ। গত তিন বছর ধরে তিনি সেখানে বন্দী জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি বেকসুর খালাস পেয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষা করছেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়। এই আসনে সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমদের নামে বিএনপি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে মনোনয়ন পাওয়ার তালিকায় আছেন দলের জন্য ত্যাগী নেতা সিআইপি সালাহ উদ্দিন আহমদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম। চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি¦তা করার জন্য সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ইতোমধ্যে হাই কমান্ডের গ্রীণ সিংগনাল পেয়েছেন বলে প্রচার করে মাঠে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে গতবারের (বিকাশ) এমপি মৌলবী ইলিয়াছকে বাদদিয়ে এবারে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন এককালের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি (অপর এক) সালাহ উদ্দিন আহমদ।
তবে এই আসেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদকে বাদ দিয়ে ভোটের কোন হিসাব মিলবেনা বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এ আসনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে-৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ৫ জানুয়ারির সেই বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি হয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। এই আসনে এবারো আশেক উল্লাহ রফিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন আলোচনায় আছেন বলে জানা গেছে।
২০০৮ সালের সংসদে এখানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আযাদ ৪ দলীয় জোটের এমপি ছিলেন এ আসনে। সেই সুবাদে আসনটি এবারো জামায়াত দাবি করে আসছিল বিএনপির কাছে। কিন্তু আদালত অবমাননার একটি মামলায় হামিদুর রহমান আযাদ জেল খাটায় নির্বাচনে অংশ নিতে আইগত জটিলতা দেখাদেয় বলে জানা গেছে। তবে এই আসনে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করায় আসনটি পুনরোদ্ধারের আশা করছেন বিএনপি।
এ আসনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে- ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বর্তমান এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য তার অপর দুই সহোদর সোহেল সরওয়ার কাজল ও নাজনিন সরওয়ার কাবেরী আবারো মনোনয় চেয়েছেন। কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক এমপি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আমদের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তপক্ষ চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফুরকান আহমদসহ অনেকেই মনোনয়ন চাইলেও সাইমুম সরওয়ার কমল দলের হাই কমান্ডের গ্রীণ সিংগনাল পেয়েছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে কানজ ফাতেমাও মনোনয়ন পেতে হাল ছাড়েননি বলে জানাগেছে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় মৎসজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল ও সাবেক এমপি ইঞ্জনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান এবং অধ্যাপক আজিজুর রহমান।
মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী নির্বাচন করতে না পারায় এ আসনটি জামায়াত দাবি করছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর নাম রয়েছে জামায়াতের তালিকায়। এদের একজন কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রটারী জিএম রহিমুল্লাহ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট সলিমুল্লাহ বাহাদুর। তবে গত ২০অক্টোবর হর্টিএ্যটাকে জিএম রহিমুল্লাহ ইন্তেকাল করায় জামায়াত এড. সলিমুল্লাহ বাহাদুরকে দিয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি বিশ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বলেও জানাগেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে সুষ্ঠু নির্বাচন বা নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলেও বিএনপি-জামায়াতের যে কোন প্রার্থীকে দিয়ে আসনটি পুনরোদ্ধার করাযাবে। এ আসনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে- ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৫।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে জামায়াতের একাধিক জনপ্রিয় নেতা থাকলেও জামায়াত আসনটি দাবি করেনি।এটি বিএনপিকেই ছেড়ে দিয়েছে জামায়াত। এখানে সাবেক এমপি শাহজাহন চৌধুরী ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ঠিক করাই আছেন। তিনি এর আগে চারবার এমপি ছিলেন। ছিলেন গণর্পূত মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার জেলা বিএপির সভাপতিও।
এ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুর রহমান বদি দুর্নীতির মামলা ও মাদক সংশ্লিষ্টতাসহ নানা করণে ব্যাপক সমালোচিত হওয়ায় দলীয় মনোনয়নও পাননি। তবে আওয়ামী লীগ এখানে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে বদির বউ শাহীন আক্তারকে। তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অবঃ আবু তাহের ও যুবলীগ নেতা সোহেল আহমদ বাহাদুর ও হাল ছাড়েননি বলে জানা গেছে।
এবার বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারের আশা করলেও বদি সম্রাজ্যের পতন না হওয়ায় বিএনপির জন্য আসনটি পুনরোদ্ধার খুব একটা সহজ হবে বলে মনে করছেন না পর্যবেক্ষক মহল। এ আসনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে- ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮২৪।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন