আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা শহরে টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি অনেক বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ততো বেশি জোরদার হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীগুলোর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলা শহরে পিকআপ অথবা মোটরসাইকেলে দলগত টহল চলছে। গুরুত্বপূর্ণ সভা সমাবেশস্থলের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আড্ডাস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও পয়েন্টে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চলছে। কোন কোন পয়েন্টে সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কারো আচরণ ও চালচলনে সন্দেহ হলে মুহূর্তেই তার বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তোষজনক উত্তর পেলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এসব সূত্র বলছে, নির্বাচন বানচাল করতে কিছু রাজনৈতিক দল মাঠে নেমে সহিংসতা ও জ্বালাও পোড়াও চালানোর চেষ্টায় রয়েছে। তারা সুযোগ পেলে বড় ধরনের নাশকতা করবে। তারা বলছেন, কিছুদিন আগে পল্টন এলাকায় বড় ধরনের সহিংসতার চেষ্টা হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীদের অনেকে গোপনে দেশে ফিরে আসছে। তারাও বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে নাশকতা সংঘটনের গোপন চুক্তি করছে। এছাড়া বৈধ-অবৈধ অস্ত্রধারীরারাও নির্বাচনে কোন গোষ্ঠী বা দলের হয়ে নানা ধরনের নাশকতার গোপন ছক আঁকছে। তাদের দমন ও প্রতিরোধে নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। মূল সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন মহল্লা ও গলিতে টহল পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। বিভিন্ন সড়কে ৮/১০টি মোটরসাইকেলে করে র্যাবের সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সিএনজি ও প্রাইভেটকার থামিয়ে তথ্য জানাসহ তল্লাশি করা হচ্ছে। পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পল্টনের ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি সতর্ক হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক সদস্যকে বুলেটপ্রুফ পোশাক, হেলমেটসহ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ডিউটিতে যেতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশের উপস্থিতি ও তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাতের বেলায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরজুড়ে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি আগের তুলনায় অনেক জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নাশকতার চেষ্টা চালাতে পারে এমন সন্ত্রাসীদের তালিকা করে তাদের গ্রেফতার ও নজরদারির আওতায় রাখতে গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মূলত নির্বাচনী তফসিলকে ঘিরে যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার আশঙ্কা থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে র্যাবের টহল ও তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। রাস্তায় যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও জনমনে আতঙ্ক প্রতিরোধে র্যাবের সবগুলো ইউনিট ও গোয়েন্দা উইংয়ের সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একইভাবে ঢাকাসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ জেলা-উপজেলা শহরে টহলের পাশাপাশি রাস্তাঘাটে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও খুলনাসহ বিভাগীয় সব জেলা ও মহানগর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশের পর্যাপ্ত পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের অনুষ্ঠিত বিশেষ নিরাপত্তা সভা থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রামে দায়িত্বরত র্যাব পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। নগরীর মতো সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা জোরদারে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ফেনীসহ এসব অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে নাশকতা প্রতিরোধে র্যাব সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। একইভাবে যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে রেলপথ ও নৌপথেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন