দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি আসনে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল এবং আসন্ন সংসদের মহাজোট পরিবারের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় আছে মূল শরিক আওয়ামী লীগ। বরিশাল ও পটুয়াখালীর কয়েকটি আসনে এ সংকটে বিভ্রান্ত মহাজোটের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবার কথা বলছে মহাজোটের মূল শরিক দল। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মহাজোটের হয়েই নির্বাচনে লড়াইয়ে নামার ব্যপারে প্রস্তুত। তবে এতদিন জাতীয় পার্টি কেন প্রধান বিরোধী দল এবং সামনে কেন মহাজোট শরিক এ বিষয়টি স্পষ্ট করছে না দুই শরিকের কোন দলের নেতারাই।
পটুয়াখালী-১ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার এবারো মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু ঐ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়া। ২০০৮-এর নির্বাচনে শহাজাহান মিয়া ঐ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০১৪-এর ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে দলীয় নির্দেশে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আর জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার ঘোষণা দিলেও রুহুল আমীন হাওলাদার পর্দার অন্তরালে আওয়ামী লীগের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে থেকে যান। ফলে ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে এখনো সংসদে বিরোধী দলের এমপি আছেন। এবারো তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী পটুয়াখালী-১ আসনে। তবে ঋণখেলাপীর অভিযোগে এরই মধ্যে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মহাজোট বরিশাল-৬ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও সেখানে রুহুল আমীন হাওলাদারের স্ত্রী রত্না আমীন দলীয় প্রার্থী। ২০০১-এর নির্বাচনে রুহুল আমীন হাওলাদার বরিশাল-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে প্রদত্ত ভোটের ১৫%-এর কম ভোট পেয়ে তৃতীয়স্থান লাভ করেছিলেন। তবে ২০০৮-এর নির্বাচনে তিনি এ আসনে মহাজোটোর প্রার্থী হিসেবে বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোটপ্রার্থী সাবেক এমপি আবুল হোসেন খানকে পরাজিত করে এমপি হন। ২০১৪-এর নির্বাচনে তার স্ত্রী রত্না আমীন এমপি হয়ে এখনো সংসদে আছেন।
এদিকে বরিশাল-২ আসনে বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও পরে তা পরিবর্তন করে সাবেক ছাত্রনেতা শাহে আলমকে দেয়া হয়। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে অভিনেতা মাসুদ পারভেজ মনোনয়ন দাখিল করে মহাজোটের হাই কমান্ডই তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছে বলে এলাকায় ঘোষনা দিয়ে গেছেন। মাসুদ পারভেজ এর আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। এবার তিনি দলের মনোনয়ন নিয়ে মহাজোট প্রার্থী বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
প্রায় একই পরিস্থিতি বরিশাল-৩ আসনেও। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের পৈত্রিক ভূমি বাবুগঞ্জ-মুলাদীর ঐ আসনটি মহাজোট থেকে ছাড় দেয়া হলেও সেখানে জাপার সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অথচ এ আসনে মেননের প্রার্থী বর্তমান এমপি টিপু সুলতান। অপরদিকে তার আপন বোন সেলিমা রহমান ও সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিনও ঐ আসনে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী।
এসব আসন নিয়েই দক্ষিণাঞ্চলে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের তিক্ততা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ক্রমশ বাড়ছে। কেউই কোনোভাবে ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না। এমনকি রুহুল আমীন হাওলাদার অন্য কোন আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় পটুয়াখালী-১ আসনেই অনড় থাকবেন শেষ পর্যন্ত। পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মীই এ আসনটি জোট শরিক কোন দলকে ছাড় দিতে নারাজ। ফলে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে গড়াবে তা বলতে পারছেন না কেউই।
তবে আওয়ামী লীগের আসনগুলোতে মহাজোটের পুরনো শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী দাঁড় করিয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করায় বিব্রত মহাজোটের শরিকদলের নেতৃবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন