নানা টানাপোড়েনের মাঝেও ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি এখন সাংগঠনিক কর্মকান্ডে চাঙ্গা। আওয়ামীলীগের নির্বাচনমুখী সরব কর্মকান্ডে ভোট রাজনীতির মাঠে নেতা কর্মীরা উজ্জীবিত। আর এ সুযোগে এক সময়কার রক্তাক্ত জনপদখ্যাত বৃহত্তর খুলনার চরমপন্থি ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক শেল্টার অন্বেষনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির মাঝেও খুলনাঞ্চলে ঘটছে খুন জখম আর ডাকাতির ঘটনা।
নির্বাচন ঘিরে খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটা উত্তপ্ত। চলছে কর্মসূচী, সভা-সমাবেশ, পরিকল্পনা। এ সুযোগে এক সময়ের অঞ্চল শাসন কর্তা চরমপন্থীরা লাইম লাইটে আসার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। গত সোমবার খুলনা নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মো. হালিম মোল্লা (৪০) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।
গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের জামাতা প্রভাষ কুমারকে তার নিজ বাসায় ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রভাষের ডান দিকের পেটে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন। এ বিষয়ে একাধিক গোয়েন্দা টিম মাঠে কাজ করছে। কি কারণে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে এ বিষয়ে এখনো কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
সম্প্রতি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও হত্যা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি মিরাজুল ইসলাম ওরফে মারুফ হোসেন ওরফে গরু মারুফকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১টি পাইপগান, ১ রাউন্ড গুলি ও ৫৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।
এ ছাড়া গত ২৬ নভেম্বর ভুয়া গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টাকালে চারটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারসহ একটি অত্যাধুনিক ৭ দশমিক ৬৫ পিস্তল, ৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৩টি অত্যাধুনিক পি-শাটারগান, ৭টি ডিবির কটি, ৪টি পুলিশের ভুয়া আইডি, ৩টি পিস্তলের কভার, ৪টি টর্চলাইট, ৪টি বাঁশি, ১ জোড়া হ্যান্ডক্যাপ, ২টি ডিবি পুলিশ লেখা লেমিনেটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে আরো একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাসসহ ডাকাত দলের ৪/৫ সদস্য পালিয়ে যান।
এদিকে, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কেসিসি’র ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজমল আহমেদ তপনের বাড়িতে হামলা করেছে হেলমেট পরা একদল সন্ত্রাসী। সম্প্রতি হেলমেট পরা ৮-১০টি মোটরসাইকেলে করে আসা একদল সন্ত্রাসী এ হামলা চালায়।
যদিও একের পর এক মাষ্টার প্লান ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ব্লপ্রিন্ট অনুযায়ী র্যাব পুলিশ সন্ত্রাসীদের আস্তানা তছনছ করছে তবুও মাঝেমাঝে তারা বিভিন্ন সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে পলাতক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রোধে গডফাদার ও রাজনৈতিক আশ্রয়দাতাদের মসনদ শক্ত হাতে কবর দিতে হবে। অন্যথায় গানিতিক হারে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদ কিছুদিনের জন্য দমন হলেও নির্মুল হবেনা।
এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। আবার সারা বছর ধরে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেনীর টেন্ডারবাজ, দল চালানোর নামে হোয়াইট কালার চাঁদাবাজ কথিত রাজনৈতিক নেতাদের হাতের পুতুল হয়ে মাঠে ময়দানে চষে বেড়াতে ও এলাকায় ফের আধিপত্য বিস্তারের নেশায় তারা এ অঞ্চলে প্রত্যাবর্তন করতে চাইছে। কেউ কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়েও ঘুরছে। আইন-শৃংখলা উন্নয়নে পুলিশ, র্যাব ব্যাপক অভিযান চালালেও খুলনা মহানগরী ও বৃহত্তর খুলনার হত্যা, বোমাবাজীসহ বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামী ও কথিত গডফাদাররা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
ভাড়াটে ও ভাসমান এ সকল আসামীদের অধিকাংশই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্তপথে ভারত পাড়ি দিয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যে নির্বাচনের গন্ধ পেয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছে এমন আভাসও দিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সূত্র জানায়, পলাতক বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্তে¡ও থানা পুলিশ প্রভাবশালী রাজনৈতিক গডফাদারদের ক্ষমতার দাপটে তাদের গ্রেফতার থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। এসব দুর্ধর্ষ সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের খুলনার প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সাথে, তাদের মিছিলে, বাড়িতে, এমনকি তাদের কার্যালয়েও প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেখা যায়। দুর্ধর্ষ সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হঠাৎ হঠাৎ করে মহানগরীতে হাজির হয়ে আইন-শৃংখলার চরম অবনতিসহ হত্যা, বোমাবাজিতে অংশগ্রহণ করে মহানগরবাসীকে জিম্মি করে তুলছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অবশ্য বিভিন্ন বাহিনীর অভিযান শুরু হলেই এরা গা ঢাকা দিয়ে থাকে। তথাপি র্যাব পুলিশের অভিযান বর্তমানে অনেকাংশেই বেড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন