একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরে ৫টি আসনে বড় দু’দল বা জোটের প্রায় প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি এগিয়ে। আওয়ামী লীগের দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন একাধিক প্রার্থীর গ্যাঁড়াকলে। এ দু’জন আওয়ামী রাজনীতিতে যেমন বেশ শক্ত অবস্থানে, তেমনি দেশব্যাপীও তারা নানাভাবে আলোচিত।
মনোনয়ন বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থী তালিকায় ৫টি আসনের মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ২ জন করে ৬ জন। বিএনপির পাঁচটিতেই ২-৩ জন করে মোট ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। আবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে হিসেব করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ জনে। তাই চাঁদপুরে ৫টি আসনেই একক প্রার্থীর জন্যে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। দোটানায় থাকা ওইসব প্রার্থীদের ঘুম হারাম। এখন তারা মনোনয়নযুদ্ধে রয়েছেন।
দেশব্যাপী আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং চাঁদপুর-২ আসনে বর্তমানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। ড. খানের শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী হচ্ছেন একই দলের মো. গোলাম হোসেন (এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান)। উভয়কেই দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অপরদিকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম পড়ে গেছেন আইনী মারপ্যাঁচে। বাছাইতে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করলেও দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। ইতোমধ্যে তার মনোনয়নের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। মায়া চৌধুরীর নিজ আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অপর প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. নূরুল আমিন রুহুল গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইর দিন জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেছেন মায়া চৌধুরীর মনোনয়নের বৈধতা প্রসঙ্গে। এর সপক্ষে অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন নানা ব্যাখ্যাসহ অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। তাই মায়া চৌধুরী নির্বাচন করতে যোগ্য কি অযোগ্য সেটি এখন আদালতের রায়ের ওপর নির্ভরশীল।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনেও আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী দু’জন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূইয়া এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান। শামছুল হক ভূইয়া ‘ঋণখেলাপী’ এমন অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সাংবাদিক শফিকুর রহমানকে ২৭ নভেম্বর রাতে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন শামছুল হক ভূঁইয়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করলে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, দলগত প্রার্থী নিয়ে চাঁদপুরে ৫টি আসনেই বিএনপি পড়েছে বেকায়দায়। প্রত্যেক আসনেই দলের মনোনয়ন পাওয়া একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এর বাইরে বিএনপির সাথে নির্বাচনী ভোটভুক্ত দল থেকেও প্রার্থী রয়েছেন ৩টি আসনে ৫ জন। ফরিদগঞ্জ আসনে বিএনপি থেকে ৩ জনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও মূল প্রার্থী হিসেবে এম এ হান্নাকেই সবাই ধরে নিয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপির সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ ২ ডিসেম্বর দলের মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন এবং ঐদিনই জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৌঁছান। কিন্তু ততক্ষণে বাছাইতে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির চিঠি সাথে জমা না দেয়ায়। চাঁদপপুর-৩ আসনে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক যে বিএনপির একক প্রার্থী তা একেবারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এ আসনে বিএনপির সাথে জোটের কারণে নাগরিক ঐক্য থেকে অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারকেও ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চাঁদপুর-১, চাঁদপুর-২ এবং চাঁদপুর-৫ আসনে এখনো বিএনপির প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি নিজেই। এ তিনটি আসনেই বিএনপির একাধিক হেভিওয়েটসহ ৬জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন-চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনম এহছানুল হক মিলন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মজুমদার, চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ড. জালাল উদ্দিন ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম নূরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা, চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে বিএনপির ৩ বারের সাবেক এমপি এম এ মতিন ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক। সবশেষে ৫টি আসনেই বিএনপির মনানয়ন পেয়েও একক প্রার্থী হওয়ার যুদ্ধে আছেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন